বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা | World Trade Organisation | WTO : GATT প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর 1947 থেকে 1994 সাল পর্যন্ত ৪ বার এর আলােচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অষ্টমবারের আলােচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় উরুগুয়ের পুন্টাভেল এস্তে শহরে। এই আলােচনা উরুগুয়ে রাউন্ড নামে পরিচিত। এই আলােচনা সভায় গৃহীত ডাঙ্কল খসড়ার ভিত্তিতে 1994 সালে গঠিত হয় Multilateral Trade Organisation যা পরবর্তীকালে World Trade Organisation নামে পরিচিত হয়। 1995 সালের 1st January থেকে WTO কার্যকরী হয়। ভারত এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উদ্দেশ্য –
1.সদস্য দেশগুলােতে পূর্ণ নিয়ােগ অবস্থা সৃষ্টি করে, উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং দ্রব্য ও সেবাকার্যের বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে দেশগুলাের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
2.একটি সুসংবদ্ধ, বাস্তবসম্মত এবং দীর্ঘস্থায়ী বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তােলা।
3.সম্পদের কাম্য ব্যবহার ঘটিয়ে সদস্য দেশগুলােতে স্থিতিশীল উন্নয়ন বজায় রাখা।
4.আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বৃদ্ধির একটা অংশ যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলাে পায় তা সুনিশ্চিত করা।
5. সদস্য দেশগুলাের মধ্যে আমদানি শুল্ক এবং বাণিজ্যের অন্যান্য বিধিনিষেধ হ্রাস করা এবং বিভেদমূলক আচরণ দূর করা।
6.বাণিজ্যনীতি,পরিবেশনীতিএবং স্থিতিশীল উন্নয়নের মধ্যে সংযােগ স্থাপন করা।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও ভারত :
অনুকূল প্রভাব -1. উন্নত দেশগুলােতে কৃষিজাত দ্রব্যের আমদানির উপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল হলে এবং অভ্যন্তরীণ ভর্তুকি হ্রাস পেলে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের কৃষিজাত দ্রব্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাবে।
2. কৃষিভিত্তিক শিল্পজাত দ্রব্যের রপ্তানিও বৃদ্ধি পাবে কারণ এই সকল দ্রব্য উৎপাদন করার জন্য আমদানি করা কাঁচামালের প্রয়ােজন হয় না।
3.উন্নত দেশগুলােতে বস্ত্র ও তন্তুজাত দ্রব্যের উপর পরিমাণগত নিয়ন্ত্রণ বাতিল হলে ভারতের বস্ত্র ও তন্তুজাত দ্রব্য লাভবান হবে।
4. আমদানি – রপ্তানির বাধানিষেধ শিথিল করার ফলে ভারত বিদেশে ব্যাঙ্কিং, বিমা প্রভৃতি পরিষেবাও রপ্তানি করতে পারবে।
5. WTO এর নীতি অনুযায়ী মােট কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপাদন মূল্যের 10 % এর বেশি ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। কিন্তু ভর্তুকির এই সীমা ভারতেদেওয়া ভর্তুকি অপেক্ষা বেশি। ফলে ভারত লাভবান হবে।
6. ভারতের সামগ্রিক রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।
প্রতিকূল প্রভাব –
1.TRIPS সংক্রান্ত ধারাগুলাে কঠোরতর ব্রার ফলে নতুন ব্যবস্থায় ভারতের পেটেন্ট আইনের পরিবর্তন হবে যা ভারতের স্বার্থবিরােধী হবে।
2TRIMS চুক্তিতে স্বদেশি বিনিয়ােগ ও বিদেশি বিনিয়ােগের মধ্যে কোনাে বৈষম্য সৃষ্টি নিষেধ করা হয়েছে। এর ফলে ভারতের মতাে। উন্নয়নশীল দেশগুলােয় বিদেশি বিনিয়ােগকারীদের কার্যকলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।
3. GATT চুক্তির ফলে সেবাক্ষেত্রে উদারিকরণ ঘটবে। বিভিন পরিষেবা যথা — ব্যাঙ্কিং, বিমা, টেলি যােগাযােগ ইত্যাদি সে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অবাধ অনুপ্রবেশ ঘটবে।
4.বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলােকে ভারতে অবাধে কাজ করতে দিলে, ছােট ছােট ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলাে বন্ধ হলে বেকার সমস্যার সষ্টি হবে এবং সর্বোপরি ভারতের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন হবে।
The General Agreement on Tariffs and Trade ( GATT ) : 1947 সালে জেনেভায় বিশ্বের ২৩টি দেশ বহুপাক্ষিক বাণিজ্য। নিয়ে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এই চুক্তি GATT নামে পরিচিত, যা কার্যকর হয় 1948 সালের 1st January . ভারত GATT এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
উদ্দেশ্য –
1.এর মূল উদ্দেশ্য ছিল নিয়ন্ত্রণহীন বহুপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্যের প্রসার ঘটানাে।
2. সদস্য দেশগুলাের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটানাে।
3. কার্যকরী চাহিদা ও প্রকৃত আয়ের স্থায়ী বৃদ্ধি ঘটিয়ে পূর্ণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
4. বিশ্বের সম্পদের উন্নতি ঘটানাে ও তার কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করা।
5.সদস্য দেশগুলাের মধ্যে Most Favoured Nation নীতি অনুসরণ করা।
6.পক্ষপাতহীনভাবে বৈদেশিক বাণিজ্য চালনা করা।
7.কেবল আমদানি শুল্কের মাধ্যমেদেশীয় শিল্পকে সংরক্ষণ করা।
8. আমদানির ওপর পরিমাণগত নিয়ন্ত্রণ বা কোটা ব্যবস্থা পরিহার করা।
9. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য যে শুল্ক বা শুল্কবিহীন ব্যবস্থা। রয়েছে তার উদারীকরণ *United Nations Conference on Trade and Development ( UNCTAD )-
WTO এর কর্মপদ্ধতি নিয়ে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলাের মধ্যে অসন্তোষ জমা হচ্ছিল। কারণ এটি উন্নত দেশগুলাের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ দেখাচ্ছিল। এই অসন্তোষ থেকেই 1964 সালে UNCTAD স্থাপিত হয়।
উদ্দেশ্য — বিভিন্ন আর্থ – সামাজিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দেশগুলাের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটানাে ও স্বল্পোন্নত দেশগুলাের উন্নয়নের হার ত্বরান্বিত করা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্যাবলি সম্পর্কে নীতি প্রণয়ন করা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমস্যা নিয়ে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অন্তর্গত যে সকল প্রতিষ্ঠান জড়িত তাদের কাজকর্মেরমধ্যে সমন্বয় সাধন করা।