প্রবন্ধ রচনা- বিশ্বকাপ ফুটবল | World Cup Football Essay Writing

প্রবন্ধ রচনা- বিশ্বকাপ ফুটবল | World Cup Football Essay Writing

[প্রবন্ধ-সংকেত:: ভূমিকা | উদ্বোধন | বিশ্বকাপের ইতিহাস | অংশ গ্রহণকারী দেশ | কোন্ কোন্ খেলোয়াড় বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেয় | ফাইনাল খেলার বিবরণ | সেরা খেলোয়াড় | এই প্রতিযোগিতা ও ভারত | উপসংহার।]

■ ভূমিকা:- “রাজার খেলা পোলো আর খেলার রাজা ক্রিকেট” হলেও ফুটবল খেলা যে খেলার জগতের মন্ত্রী বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা প্রদর্শনী এবং সারা বিশ্ববাসীর এই খেলার প্রতি অনুরাগ ও উন্মাদনার প্রতি লক্ষ্য রেখে নিঃসন্দেহে বলা যায়। ২০০৬ সালে ইউরোপ ভূখণ্ডের জার্মানে অনুষ্ঠিত অষ্টাদশ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা ৯ ই জুন। মিউনিখে বর্ণাঢ্য উদ্বোধী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একমাস ব্যাপী গৌরবময় ফুটবল ঐতিহ্যের ধারাকে অব্যাহত রাখে।

■ উদ্বোধন:- অষ্টাদশ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা জার্মানের মিউনিখ স্টেডিয়ামে সংক্ষিপ্ত বর্ণালী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, জার্মানের প্রেসিডেন্ট ক্লস্ট কোলারের উদ্বোধনীর মাধ্যমে সূচিত হয়েছিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ছিল এই রকম — দুটি শিশুর আহ্বানে উৎসব প্রাঙ্গণে প্রাক্তন বিশ্বকাপ অর্জনকারীদের শোভাযাত্রা সহকারে প্রবেশের মাধ্যমে প্রবীণ ও নবীনদের মধ্যে মিলন সেতু গড়ে তুলে প্রাক্তনদের প্রতি যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

■ বিশ্বকাপের ইতিহাস:- বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার ইতিহাসের ধারা অনুসরণ করে দেখা যায় যে, ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার কিছু সংখ্যক ফুটবল প্রেমী ও উৎসাহী মানুষদের উদ্যোগে ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে সর্বপ্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার সূচনা হয়েছিল অবৈতনিক সভাপতির নামানুসারে “জুলে রিমে কাপ” নাম দিয়ে এবং তখন বিশ্বকাপ ট্রফির নাম ছিল ফিফার। তারপর পর পর দুটি বিশ্বকাপ খেলা অনুষ্ঠিত হলেও মহাযুদ্ধের কারণে ৪ র্থ ও ৫ ম বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত না হওয়ার জন্য ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল ১৮ তম বিশ্বকাপ ফুটবল।

তৎকালীন সময়ে প্রায় ৮,০০০ পাউন্ড ব্যয়ে ১০ পাউন্ড ওজনের বিশ্বকাপ ফুটবল ট্রফিটি ব্রাজিল পর পর তিনবার বিজয়ী হয়ে চিরদিনের মত নিজের ঘরে ‘জুলে রিমে’ কাপটি তুলে নেয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপ ফুটবলে বিজয়ীর তালিকায়— ব্রাজিল ৫ বার, ইটালি ৪ বার, জার্মানি ৩ বার, আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে ২ বার, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড ১ বার করে গৌরব অর্জন করেছে।

■ অংশগ্রহণকারী দেশ:- ২০০৬ এর বিশ্বকাপ ফুটবলে যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্যায়ে বা Qualifying Round -এ অংশগ্রহণকারী ১৯৭ টি দেশের মধ্যে মাত্র ৩২ টি দেশের ৭৩২ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করে। প্রতিযোগী দলগুলিতে A, B, C করে মোট ৮ টি দলে বিভক্ত করা হয় এবং প্রত্যেক গ্রুপে ৪ টি করে দল থাকে। মূল পর্বে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের ছ’টি দেশ— ইউক্রেন, আঙ্গোলা, আইভোরী কোষ্ট, ত্রিনিদাদ – টোবাগো, টোগো ও ঘানা খেলার যোগ্যতা লাভ করে।

■ কোন কোন খেলোয়াড় বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেয়:- ২০০৬ -এর বিশ্বকাপ ফুটবল খেলায় যে সব খেলোয়াড়রা বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— পর্তুগালের রোনাল্ডো, ডিকো ও বুফন, ব্রাজিলের কাকা ও রোনাল্ড দিনহো, আর্জেন্টিনার মেসি এবং জার্মানের বালাক।

■ ফাইনাল খেলার বিবরণ:- উদ্বোধনের ঠিক একমাস পরে অর্থাৎ ৯ ই জুলাই জার্মানীর রাজধানী বার্লিন স্টেডিয়ামে চূড়ান্ত সংগ্রামের মুখে অবতীর্ণ হয়— ফ্রান্স ও ইটালি। খেলার শুরু হবার সাত মিনিটের মাথায় ফ্রান্স পেনাল্টির কারণে এক গোলে এগিয়ে গেলেও ১৯ মিনিটের মাথায় গোল পরিশোধ করে দেয়। কিন্তু এরপর কোন পক্ষই কোন গোল না করতে পারার জন্য রীতি অনুসারে প্রথম অতিরিক্ত সময়ের খেলাতেও দুই দল একই স্থানে অবস্থান করার পর ট্রাইব্রেকারে ফ্রান্স পরাজিত হয় এবং ইটালি বিশ্বজয়ের মুকুট লাভ করে।

■ সেরা খেলোয়াড়:- অষ্টাদশ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলায় সেরা খেলোয়াড় হিসাবে নির্বাচিত হন- ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান।

■ উপসংহার:- ঊনবিংশতিতম বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আসর বসাবে। স্থান, কাল, বর্ণ, ধর্মের বৈষম্য ও ভেদাভেদ তুচ্ছ করে বিশ্বের এই মহোত্তম খেলায় সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রেখে খেড়োয়াড়গণ তাদের কৃত্বিত্ব প্রদর্শনে যে ভুমিকা গ্রহণ করবে, তাতে যেন ২০০৬ সালের মতো জিনেদিন জিদান যেমন ইটালির ডিফেণ্ডার মার্কো মোতারজিকে মাথায় গুঁতো মেরে ফেলে দিয়ে মাঠ থেকে লাল কার্ড দেখে বিদায় নিয়েছিলেন, তেমন ঘটনা যেন আর যদি না ঘটে তাহলেই বিশ্বকাপ খেলার সার্থকতা বজায় থাকবে।