প্রবন্ধ রচনা- বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ | Wildlife Conservation Essay Writing

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ | Wildlife Conservation Essay Writing

[প্রবন্ধ সংকেত :: ভূমিকা | বন্যপ্রাণী সংরক্ষন কেন ? | এ যাবৎ কী কী করা হয়েছে | উদ্যোগে সফলতা | উপসংহার]

■ ভূমিকা:- বুদ্ধি বলে মানুষ প্রাণীজগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে। অন্যান্য প্রাণীদের তুলনায় মানুষই সবচেয়ে শক্তিমান। জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে তার অবাধ গতি। নিজেদের জীবনের প্রাথমিক প্রয়োজন ও চাহিদাগুলির সমস্যা সমাধানে সে অনেকাংশেই সফল।

প্রকৃতি ও তার কাছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে হার মানে। কিন্তু অন্যান্য প্রাণীরা সেই তুলনায় অনেকাংশেই দুর্বল। তাদের জীবন প্রকৃতি নির্ভর। মানুষের জীবন ও জীবিকার চাহিদা মেটাতে বহু প্রাণীকেই বিপন্ন হতে হয়। ইতিমধ্যে অনেক প্রজাতির অবলুপ্তি ঘটেছে বা ঘটতে চলেছে। দ্রুত নগরায়নের ফলে বনভূমির পরিসর যত কমছে বন্য প্রাণীরা ততই নিরাশ্রয় হয়ে উঠছে দিনে দিনে।

■ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন:- সমীক্ষায় জানা গেছে ভারতের মধ্যে প্রায় তিন হাজার প্রজাতির প্রাণী ও অসংখ্য রকমের কীটপতঙ্গ আছে। এরা প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। জীব জগতের মধ্যে একটা পারস্পরিক নির্ভরশীলতা আছে। প্রকৃতির এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বন্ধ হলে এই ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। ফলে পরোক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্বাভাবিক পরিবেশ। তাই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতান্তই জরুরি হয়ে পড়েছে। শিকারির লক্ষে পড়ে এবং মানুষের ব্যবসায়িক লালসায় আজকাল অনেক প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। যারা এখনও টিকে আছে তাদের সুরক্ষা ও বংশবৃদ্ধির ব্যবস্থা না করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষ এবং তার সুগঠিত সমাজব্যবস্থা।

■ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের কী কী করা হয়েছে:- বর্তমানে আমাদের দেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আইন প্রণীত হয়েছে, সেই আইনে বিনা কারণে যখন তখন বন্য প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পশুক্লেশ নিবারণী সংস্থাগুলি জনগনের মধ্যে একসঙ্গে সচেতনতা প্রচারে ব্রতী হয়েছে। দেশের নানাস্থানে অভয়ারণ্য ব্যাঘ্রপ্রকল্প, পাখিরালয় ইত্যাদি তৈরি করে সংরক্ষিত এলাকায় প্রকৃতির স্বাভাবিক পরিবেশে জীবজন্তুদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষ করে বিরল প্রজাতির প্রানীদের সুরক্ষার দিকে অধিকতর নজর দেওয়া হচ্ছে।

■ উদ্যোগে সফলতা:- বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা নানা ভাবে উপকৃত হব। প্রকৃতি ও জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষিত হলে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের কাজ সহজতর হবে। এছাড়া ওইসব সংরক্ষিত এলাকাগুলিকে ভ্রমণ কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হবে। স্বাভাবিক পরিবেশে প্রকৃতির কোলে প্রকৃতির সন্তানদের অবাধ বিচরণ দেখে আমাদের অবসর বিনোদন আরও উপভোগ্য হবে।

■ উপসংহার:- আমাদের মনে রাখতে হবে প্রকৃতির যাবতীয় সম্পদ ও সৌন্দর্য উপভোগের একচেটিয়া অধিকারী কেবল মানুষ নয়, ইতর প্রাণীদেরও তাতে অধিকার আছে। শক্তিমদমত্ত হয়ে অপরের বেঁচে থাকার দাবিকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। তাই নিজেদের প্রয়োজন হলেও বন্যপ্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, অবলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। কেবল সরকারি চেষ্টা বা আইনের দ্বারা এই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়, আমাদের সবাইকেই এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। যাতীয় লোভ পরিত্যাগ করে বন্যপ্রাণী হত্যাবন্ধ করতে হবে।