কোনো জায়গায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা | Travel Experience of any Place Essay Writing in Bengali
[প্রবন্ধ-সংকেত:: ভূমিকা | ভ্রমণ কী উদ্দেশ্যে | যাত্রাপথের বর্ণনা | জায়গাটির বর্ণনা | ঘুরে এসে জায়গাটি সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা | উপসংহার]
■ ভূমিকা:- মানুষ সুদূরের পিয়াসী। দুর্গম তুষারগিরি, দক্ষিণমেরুর ঊর্ধ্বে অজ্ঞাত তারা, মহাল্লাবী প্রচণ্ড নির্ঝর তার সুদূর পিয়াসী মনকে যুগ যুগ ধরে করেছে আকর্ষণ। তার অতন্দ্র রাত্রির অনিমেষ চোখে বুলিয়ে দিয়েছে আনন্দের স্পর্শ। তাই গৃহবিবাগী ঘরের নিশ্চিত সুখ শান্তি আরামের মায়া-বন্ধন উপেক্ষা করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বহির্বিশ্বের বাধা-বিপত্তি ভার দ্বন্দ্ব সংঘাতময় কঠোর জীবনে। ঘর ছেড়ে সে পথকে করেছে ঘর। তার বিশ্ব বিজয়ী মনের কৌতূহল স্পৃহা তাকে ভ্রমণে করেছে উদ্বুদ্ধ।
■ ভ্রমণ কী উদ্দেশ্যে:- ভ্রমণ মানে কেবল যেখানে যাচ্ছি তার পথ ঘাট, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র, নগর-নগরী, মন্দির-মসজিদ দেখা নয়, ঐ অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবনযাত্রা, সভ্যতা সংস্কৃতি প্রভৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া। ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে পরস্পরের মধ্যে ভাবের বিনিময় হয়। কূপমণ্ডকতা দূর হয়ে গড়ে ওঠে স্বচ্ছ সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গি। এ একঘেয়েমি জীবনে আসে বৈচিত্র্যের আস্বাদন।
■ যাত্রাপথের বর্ণনা:- পুরী সম্বন্ধে অনেক পড়েছি। আজ বইয়ে পড়া কাহিনী নয় অন্যের মুখে শোনা বর্ণনা নয়, নিজের চোখেই পুণ্যশ্লোক বহু মহাপুরুষের স্মৃতি বিজাড়িত পুরী তীর্থ দেখব ভেবেই যাবার পথে চোখে ঘুম নেই। ট্রেনে করে প্রথমে পুরী স্টেশন পৌঁছলাম। তারপর সাইকেল রিক্সা করে গিয়ে হোটেলে আশ্রয় নিলাম। সাইকেল রিক্সায় করে যেতে যেতে আমার আনন্দের অন্ত নেই।
পরিষ্কার ঝকঝকে পিচের রাস্তা ধরে দুইপাশে ঝাউগাছের সারির মধ্য দিয়ে গাড়ি ছুটে চলছে, সামনে পথ বেঁকে গেছে। কিন্তু যতদুর চোখ চলে চেয়ে দেখি নীল আকাশ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। বিশাল নীল আকাশ যেন বালির উপর এসে হঠাৎ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। সমুদ্র কোথায় খুঁজে পেলাম না। রিক্শা চালককে জিজ্ঞাসা করতে দেখিয়ে দিল সম্মুখের আকাশের দিকে আঙুল দিয়ে ‘’ঐ তো”। কাছে এসে দেখতে পেলাম উত্তাল তরঙ্গমালা।
■ জায়গাটির বর্ণনা:- সমুদ্র তীরে এসে অনন্তকালের মধ্যে হারিয়ে গেলাম। অনন্ত নীল জলরাশির অন্তহীন ফেনিল কলরোলে আমার সমস্ত চেতনা যেন কেমন আবিষ্ট হয়ে গেল। পরদিন সকালে সূর্যোদয় দেখে মনে হল অপূর্ব অনির্বচনীয় দৃশ্য। পুরীর সমুদ্রোপকূলে সূর্যোদয়ের দৃশ্য সত্যিই নয়নাভিরাম।
সমুদ্রতীরে ঘুরতে ঘুরতে কুড়ালাম ঝিনুক। কোন অদৃশ্য শিল্পী যেন সমুদ্র গর্ভের নির্জনে আপন চিত্রশালায় বসে এদের গায়ে নকশা করেছে। বিকালে দেখলাম বহু ইতিহাস, জনশ্রুতি, কিংবদন্তী এবং অজস্র মন্দিরে ছড়াছড়ি। বহু বিখ্যাত মঠ, মন্দির রয়েছে পুরীতে। পুরীধামের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় জগন্নাথদেবের মন্দির, গম্ভীরা ও গুন্ডিচা মন্দির।
■ ঘুরে এসে জায়গাটির সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা:- বাড়ি ফিরেও পুরীর সেই মন্দিরগুলো আমার চোখের সম্মুখে ভাসছে। মন্দিরগুলোর স্থাপত্য রীতি ও বিশালত্ব আমার বিস্ময়কে শতগুণে বাড়িয়ে দিল। দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে এ ভাবনা আমার আসেনি। আজ এতদিন পরেও ভুলতে পারলাম না মন্দির গাত্রের ধর্মবিদ্বেষী কালাপাহাড়ের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ। আজও ব্যথিত হই।
গম্ভীরার স্মৃতি বিজাড়িত শ্রীচৈতন্যের স্মৃতি, আমারও স্মৃতিপটে। সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য স্মৃতির কোণে স্থান নিয়েছে। ভ্রমণকারীদের অধিকাংশই বাঙালী। পুরী বাঙালীর কাছে পরম তীর্থস্থান। মনে পড়ল এক কিংবদন্তীর কথা এতে বলা হয় শ্রীচৈতন্য পুরীতে নীলাভ সমুদ্র তরঙ্গকে নীলকান্ত শ্রীকৃষ্ণ কল্পনা করে ভাব বিহ্বলচিত্তে তাকে আলিঙ্গন করতে গিয়ে দেহত্যাগ করেন। তাই পুরী বাঙালীর কাছে পরম পবিত্র ক্ষেত্র, বেদনার অশ্রুতীর্থ।