প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশের ভূপ্রকৃতি ও গভিরতা | Topography and Depth of Pacific Ocean Floor

প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশের ভূপ্রকৃতি ও গভিরতা | Topography and Depth of Pacific Ocean Floor

■ পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম মহাসাগর প্রশান্ত মহাসাগরের আয়তন প্রায় ১৬ কোটি ৫৪ লক্ষ বর্গ কিমি এবং গড় গভীরতা প্রায় ৪,২০০ মিটার। এই মহাসাগরের তলদেশের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি হল :

● (১) মহীসোপান (Continental Shelves):- প্রশান্ত মহাসাগরের মোট আয়তনের প্রায় ৫.৭ % স্থান জুড়ে মহীসোপান অঞ্চল অবস্থিত। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বদিকের মহীসোপান অঞ্চলের তুলনায় পশ্চিমদিকের মহীসোপান অঞ্চলের বিস্তৃতি খুবই বেশি। পূর্বদিকে মহীসোপানের গড় বিস্তৃতি প্রায় ৮০ কিমি এবং পশ্চিমদিকে মহীসোপানের বিস্তৃতি প্রায় ১৬০ কিমি থেকে ১,৬০০ কিমি। এই মহাসাগরের পশ্চিমদিকের মহীসোপান অঞ্চল বরাবর জাপান, কিউরাইল, ইন্দোনেশিয়া ও নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি দ্বীপপুঞ্জ গড়ে উঠেছে।

● (২) বেসিন বা অবনমিত অঞ্চল (Basins):- প্রশান্ত মহাসাগরের মোট আয়তনের প্রায় ৯০% স্থান জুড়ে বেসিন বা অবনমিত অঞ্চল বিস্তৃত। এই অবনমিত অঞ্চলের গড় গভীরতা প্রায় ৭,০০০ মিটার। এই মহাসাগরের -প্রধান বেসিনগুলি হল – ফিজি দ্বীপের উত্তর-পশ্চিমাংশে উত্তর ফিজি বেসিন, নিউজিল্যান্ড ও ফিজি দ্বীপের মধ্যবর্তী দক্ষিণ ফিজি বেসিন, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যবর্তী পূর্ব অস্ট্রেলিয়া বেসিন, কুমেরুর উত্তরাংশে প্রশান্ত কুমেরু বেসিন , পেরু বেসিন, চিলি বেসিন, অ্যালিউশিয়ান বেসিন ও ফিলিপিন্স্ বেসিন প্রভৃতি।

● (৩) সমুদ্রখাত (Oceanic Trenches):- প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে সুগভীর ও দীর্ঘায়িত বহু সমুদ্রখাত রয়েছে। প্রধান প্রধান সমুদ্রখাতগুলি হল দ্বীপের পূর্ব দিকে মারিয়ানা খাত গুয়াম (পৃথিবীর গভীরতম সমুদ্রখাত, – এর গভীরতা ১১,০৩৩ মিটার) যার গভীরতম অংশ হল চ্যালেঞ্জার গহবর (Challenger Depth); টোঙ্গা খাত (পৃথিবীর দ্বিতীয় গভীরতম সমুদ্রখাত, এর গভীরতা প্রায় ১০,৮৮২ মিটার)

যার গভীরতম অংশ হল হরাইজন গহবর (Horizon Depth); ফিলিপিন্‌স্ খাত (এর গভীরতম অংশ হল কেপ জনসন গহবর, গভীরতা প্রায় ১০,৫৪০ মিটার); জাপান খাত (এর গভীরতম অংশ হল রামাপো গহ্বর, গভীরতা প্রায় ১০,৩৪০ মিটার); কিউরাইল খাত , এর গভীরতম অংশ হল ভিটিয়াজ গহ্বর, গভীরতা প্রায় ১০,৫৪২ মিটার)। অ্যালিউশিয়ান খাত (এর গভীরতা প্রায় ৭,৮২২ মিটার), পেরু-চিলি খাত (এর গভীরতম অংশ হল বার্থোলোমিউ গহ্বর, গভীরতা প্রায় ৮,০৬৬ মিটার), ক্যালিফোর্নিয়া খাত (এর গভীরতা প্রায় ৭,৭৩০ মিটার), আটাকামা খাত (এর গভীরতা প্রায় ৭,৫৫০ মিটার)।

● (৪) সামুদ্রিক শৈলশিরা ও উচ্চভূমি (Ridges and Rises):- প্রশান্ত মহাসাগরের প্রধান শৈলশিরা ও উচ্চভূমিগুলি হল প্রশান্ত মহাসাগরীয় শৈলশিরা, মারিয়ানা খাতের পূর্বদিকের মার্কাস-নেকার উচ্চভূমি, কিউসু পালাউ শৈলশিরা, হাওয়াই দ্বীপের দক্ষিণে হাওয়াই শৈলশিরা, চিলির পশ্চিমদিকে চিলি শৈলশিরা, পেরুর পশ্চিমদিকে পেরু শৈলশিরা, গ্যালাপাগোস থেকে ইস্টার দ্বীপ পর্যন্ত প্রসারিত পূর্ব প্রশান্ত শৈলশিরা। প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে বেশ কয়েকটি মালভূমি গড়ে উঠেছে। যেমন –

● (১) অ্যালবাট্রাস মালভূমি (Albatrass plateau), এই সামুদ্রিক মালভূমিটি মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিমে অবস্থিত।

● (২) নিউজিল্যান্ড মালভূমি, এই সামুদ্রিক মালভূমিটি নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত।

● (৩) দক্ষিণ-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় মালভূমি, এই মালভূমি চিলির পশ্চিমদিকে অবস্থিত।

● (৪) চ্যুতি অঞ্চল (Faulted Zone):- প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে প্রতিসারী মহাসাগরীয় প্লেট সীমান্তে বা অভিসারী মহাসাগরীয় প্লেট সীমান্ত বরাবর চ্যুতির সৃষ্টি হওয়ায় বেশ কয়েকটি চ্যুতি অঞ্চল লক্ষ করা যায়। যেমন- মেন্ডোসিনো, মোলেকাই, মারকুয়েসাস, মারে, পায়োনিয়ার, ক্ল্যারিয়ন, ক্লিপারটন, সালায় গোমেজ ও গ্যালাপাগোস প্রভৃতি।

● (৫) দ্বীপসমূহ (Islands):- প্রশান্ত মহাসাগরে প্রধানত মহাদেশীয়, আগ্নেয় এবং প্রবাল প্রভৃতি তিন প্রকারের দ্বীপ লক্ষ করা যায়। মহাদেশীয় দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে ব্রিটিশ কলম্বিয়া দ্বীপপুঞ্জ, চিলির দ্বীপপুঞ্জ, অ্যালিউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, জাপান ও ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। আগ্নেয়দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে নিউগিনি, বিসমার্ক, সলোমন, ফিজি (মেলানেশিয়া দ্বীপপুঞ্জ), মারিয়ানা, মার্শাল (মাইক্রোনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জ) হাওয়াই, চ্যাথাম, স্যামোয়া, মারকুয়েসাস, সোসাইটি (পলিনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জ) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। প্রবাল দ্বীপের মধ্যে গ্রেট বেরিয়ার রীফ (পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর), গিলবার্ট, মার্শাল, ক্যারোলিনা প্রভৃতি দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ উল্লেখযোগ্য।

● (৬) প্রান্তদেশীয় সমুদ্র (Marginal Seas):- প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূল ও পূর্ব উপকূল বরাবর প্রান্তদেশীয় সাগর ও উপসাগরগুলি গড়ে উঠেছে। প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমদিকে অবস্থিত সাগরগুলি হল বেরিং সাগর, ওখোটস্ক সাগর, জাপান সাগর, পূর্ব চিন সাগর, দক্ষিণ চিন সাগর প্রভৃতি; পূর্বদিকে অবস্থিত উপসাগরগুলি হল ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগর, পানামা উপসাগর, অস্ট্রেলিয়ার কার্পেন্টারিয়া উপসাগর প্রভৃতি।