ধর্মমঙ্গল কাব্যের কাহিনী | Story of Dharmamangal Kavya
■ ভূমিকা:- ধর্মমঙ্গলের উদ্দেশ্য ধর্মঠাকুরের পুজো প্রচার। চণ্ডী এবং মনসা স্ত্রী-দেবতা। তাঁদের কাহিনী সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু পুরুষদেবতা ধর্মঠাকুরের কাহিনী এবং পুজো পশ্চিমবঙ্গের রাঢ়ভূমিতেই সীমাবদ্ধ। ধর্মঠাকুরের কোনো মূর্তি নেই, নানা আকারের শিলাকে ধর্মঠাকুর বলে পুজো করা হয়। সমাজের নিচু তলার মানুষরাই ধর্মঠাকুরের পুজোর অধিকারী। কুষ্ঠরোগ থেকে নিরাময় এবং সন্তানলাভের জন্য ধর্মঠাকুরের মানত করা হয়। চৈত্রসংক্রান্তি থেকে শ্রাবণী পূর্ণিমার মধ্যে যে কোনো বারোদিন ঘটা করে ধর্মঠাকুরের বার্ষিক পুজো হয়।
■ কাহিনী:-
ধর্মমঙ্গলের দুটি কাহিনী। এক, রাজা হরিশচন্দ্রের গল্প; দুই, লাউসেনের আখ্যান। নিজের ছেলেকে বলি দিয়ে হরিশচন্দ্র ধর্মঠাকুরের কাছে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন, ধর্মঠাকুর খুশি হয়ে রাজাকে সন্তান ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় কাহিনীটি লাউসেনের। লাউসেনের কাহিনী ধর্মমঙ্গলে প্রাধান্য লাভ করেছে। লাউসেন ধর্মঠাকুরের সেবক। গল্পটি গড়ে উঠেছে গৌড়ের রাজা, তাঁর শ্যালক মন্ত্রী মহামদ, মহামদের ছোট বোন রঞ্জাবতী এবং সামন্ত কর্ণসেনকে কেন্দ্র করে।
ঢেকুরগড়ের সামন্ত ইছাই ঘোষ পার্বতীর বরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাঁর আক্রমণে কর্ণসেনের ছয় ছেলে প্রাণ হারায়। স্ত্রীও পুত্রদের শোকে মারা যায়। গৌড়েশ্বর তাঁর প্রিয় সামন্ত বৃদ্ধ কর্ণসেনের সঙ্গে নিজের শ্যালিকা রঞ্জাবতীর বিয়ে দিলেন। মহামদ এই সংবাদ পেয়ে ক্রুদ্ধ হলেন। একদিন মহামদ রঞ্জাবতীকে বন্ধ্যা বলে বিদ্রুপ করলেন।
তখন রঞ্জাবতী পুত্রলাভের জন্য ধর্মঠাকুরের কঠিন পুজোয় ব্রতী হলেন। শেষ পর্যন্ত ধর্মের বরে পুত্রলাভ করলেন। এই পুত্র লাউসেন। মহামদ লাউসেনকে হত্যা করার জন্য নানা চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু ধর্মের কৃপায় লাউসেন প্রতিবার রক্ষা পেল। অবশেষে যুবক লাউসেন বীরত্বের খ্যাতি অর্জন করে গৌড়েশ্বরের সভায় উপস্থিত হলেন। মহামদের কুপরামর্শে গৌড়েশ্বর তাঁকে নানারকম দুঃসাধ্য কাজে পাঠালেন। কামরূপরাজ্য ছিল দৈবীশক্তিতে বলবান। লাউসেন ধর্মঠাকুরের কৃপায় কামরূপ রাজ্য জয় করলেন এবং রাজকুমারী কলিঙ্গাকে পত্নীরূপে লাভ করলেন। এক কোপে লোহার গণ্ডার কেটে লাফসেন সিমুলার রাজকন্যা কানড়াকে জয় করলেন।
অবশেষে ইছাই ঘোষের সঙ্গে লাউসেনের যুদ্ধ হয়। ইছাইর পক্ষে পার্বতী আর লাউসেনের পক্ষে ধর্মঠাকুর লড়াই করেন। শেষে লাউসেনের জয় হয়। অনুচর কালু ডোম এই যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের পরিচয় দেয়। এরপর লাউসেনকে চরম পরীক্ষা দিতে হল। মহাদেশের কুপরামর্শে গৌড়েশ্বর তাঁকে আদেশ দিলেন পশ্চিমে সুর্যোদয় দেখাবার জন্য। ধর্মের দয়ায় সেই অদ্ভুত ব্যাপারও সম্ভব হল। চারদিকে লাউসেনকে নিয়ে ধন্য ধন্য পড়ে গেল। মহামদ তাঁর অপরাধের জন্য কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হলেন, কিন্তু লাউসেনের অনুরোধে ধর্ম তাঁকে রোগমুক্ত করলেন। লাউসেন মর্তে ধর্মপুজো প্রবর্তন করে সশীরের স্বর্গে গেলেন।