ভারত একটি “সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র” | India is a Sovereign Socialist Secular Democratic Republic

■ প্রশ্ন:- ভারত একটি “সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র” উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। (India is a Sovereign Socialist Secular Democratic Republic).

উত্তর:- সংবিধান হল দেশের সর্বোচ্চ আইন; একটি ঐতিহাসিক দলিল। প্রস্তাবনা হল এই সংবিধানের ভূমিকা বা মুখবন্ধস্বরূপ। প্রস্তাবনা সংবিধানের অন্তরাত্মা; সংবিধানের কার্যকরী অংশে প্রবেশের চাবিকাঠি। প্রস্তাবনা হল সংবিধানের নির্যাস স্বরূপ। প্রস্তাবনা কিন্তু সংবিধানের কার্যকরী অংশের অন্তর্ভুক্ত নয়। সংবিধানের কোন মূল অংশের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিলে প্রস্তাবনার সাহায্য গ্রহণ করা হয়। সংবিধানের প্রস্তাবনা ও কার্যকরী অংশের মধ্যে বিরোধ বাধলে কার্যকরী অংশই বলবৎ হয়। প্রস্তাবনায় ভারতকে সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।

ভারত একটি “সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র” | India is a Sovereign Socialist Secular Democratic Republic

■ সার্বভৌম:- সার্বভৌম কথাটির অর্থ হল ভারত আভ্যন্তরীণ এবং বহির্ব্যাপারে সকল রকম বৈদেশিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত। অধ্যাপক জোহারীর মতানুসারে ভারত যে প্রকৃতই সার্বভৌম তার প্রমাণ হল ভারতের সংবিধান ভারতীয়দের দ্বারা রচিত হয়েছে।

● কমনওয়েলথের সদস্যপদ সার্বভৌমিকতার বিরোধী নয়: এই সদস্যপদ ভারতের স্বেচ্ছাকৃত সিদ্ধান্ত। সংবিধানে এর কোন উল্লেখ নেই। ভারত যে কোন সময় এই সদস্যপদ ত্যাগ করতে পারে।

■ সমাজতান্ত্রিক:- ১৯৭৬ সালের ৪২ -তম সংশোধন অনুসারে ভারতকে ‘সমাজতান্ত্রিক’ রাষ্ট্র হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। এখানে সমাজতন্ত্র শব্দটি গণতান্ত্রিক সমাজবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা দরকার। দারিদ্র্যমোচন ও জনকল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে গৃহীত কার্যক্রমের মধ্যেই ভারতীয় সমাজতন্ত্রের মূল নিহিত আছে।

● সমালোচনা:- বিচারপতি পি.বি মুখার্জী প্রস্তাবনায় সমাজতন্ত্র কথাটির অন্তর্ভুক্তির সমালোচনা করেছেন।

(১) ‘সমাজতন্ত্র’ মূলতঃ একটি রাজনৈতিক আদর্শ। ভারতের মত উদারনৈতিক দেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় এর অন্তর্ভুক্তি অনুচিত।

(২) ভারতের সংবিধানে সমাজতান্ত্রিক সমাজে স্বীকৃত সামাজিক-অর্থনৈতিক আদর্শ সংযুক্ত হয়নি।

(৩) বাস্তবে যে আদর্শকে যথাযথভাবে কার্যকরী করা একরকম অসম্ভব তাকে প্রস্তাবনায় মূলনীতির অন্তর্ভুক্তি করলে সত্যের অপলাপ করা হয়।

■ ধর্মনিরপেক্ষ:- ৪২ -তম সংশোধনের মাধ্যমে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটিও প্রস্তাবনায় সংযুক্ত হয়েছে। এর অর্থ হল রাষ্ট্র কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবে না। ধর্মের ব্যাপারে রাষ্ট্র হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। সংবিধানের ২৫ থেকে ২৮ ধারায় ধর্মীয় স্বাধীনতার মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ প্রকাশিত হয়েছে।

■ গণতান্ত্রিক:- প্রস্তাবনায় ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। সংবিধানে সংকীর্ণ এবং ব্যাপক উভয় অর্থেই গণতন্ত্রকে প্রয়োগ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংকীর্ণ অর্থে রাষ্ট্রনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা সংবিধানের ৩২৬ ধারায় গৃহীত হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি, আইনের অনুশাসন এবং স্বাধীন বিচার-বিভাগের মাধ্যমে ভারতে রাষ্ট্রনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ব্যাপক অর্থে রাষ্ট্রনৈতিক গণতন্ত্র ছাড়াও সামাজিক ও অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

■ সাধারণতন্ত্র:- প্রস্তাবনায় গণতন্ত্রের সঙ্গে ‘সাধারণতন্ত্র’ শব্দটিও ব্যবহৃত হয়েছে। এই ব্যবস্থায় জনগণ পরিচালিত সরকার ছাড়াও রাষ্ট্রপ্রধান নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হন এবং বংশগত বা অন্য কোন সূত্রে কোন রাজপদ থাকে না। এখানে সকল রকম শ্রেণীগত সুযোগ-সুবিধা ও বৈষম্যকে বিলুপ্ত করা হয়েছে।