গ্রিনহাউস গ্যাসের উৎস ও প্রভাব | Sources and Effects of Greenhouse Gases

গ্রিনহাউস গ্যাসের উৎস ও প্রভাব | Sources and Effects of Greenhouse Gases

উত্তর:- পৃথিবী যেসব জটিল সমস্যায় জর্জরিত সেগুলির মধ্যে গ্রিনহাউস এফেক্ট অন্যতম। সচরাচর উদ্ভিদবিজ্ঞানে ‘গ্রিনহাউস’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। শীতপ্রধান দেশে উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য কাচের ঘর ব্যবহৃত হয়। কাচের ঘরে কাচের ভেতর দিয়ে সূর্যকিরণ প্রবেশ করে এবং তাপ সৃষ্টি করে।

কাচের ঘরের মধ্যে যে পরিমাণ তাপ অবাধে প্রবেশ করে সেই তুলনায় কাচের প্রাচীর ভেদ করে কম পরিমাণ তাপ বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে। এই কারণে শীতপ্রধান অঞ্চলে চারাগাছ বেড়ে ওঠার পক্ষে গ্রিনহাউস গ্যাস সহায়ক হয়।

বর্তমানে পৃথিবী একটি বিশাল গ্রিনহাউসে পরিণত হতে চলেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, কাচের ঘরের মতো পৃথিবীকে বেষ্টন করে রয়েছে বায়ুমণ্ডল। সূর্য থেকে যে পরিমাণ তাপ পৃথিবীতে আসে তার শতকরা ৬৬ ভাগ নানাভাবে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে এবং ৩৪ ভাগ ভূপৃষ্ঠ, বায়ুমণ্ডল ও মেঘপুঞ্জ দ্বারা প্রতিফলিত ও বিচ্ছুরিত হয়ে পুনরায় মহাশূন্যে ফিরে যায়। প্রতিদিন আগত সৌরকিরণ থেকে ভূপৃষ্ঠের তাপগ্রহণ এবং রাতের বেলায় তার সমস্তই মহাশূন্যে বিকিরণের মাধ্যমে পৃথিবীতে উত্তাপের সমতা বজায় থাকে।

কিন্তু বর্তমানে বায়ুমণ্ডলে বেশ কয়েকটি গ্যাস কার্বন ডাইঅক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, মিথেন ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে। বেড়ে যাওয়ায় সৌর বিকিরণ যতটা ফিরে যাচ্ছিল সেই পরিমাণে আর যেতে পারছে না। এর ফলে অবলোহিত শক্তি হিসেবে (Infra red energy) মহাশূন্যে প্রত্যাবর্তনের সময় তাপশক্তি বায়ুমণ্ডলে আবদ্ধ হয় এবং বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি করে। এইভাবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনাকে গ্রিনহাউস প্রভাব (Green House Effect) বলা হয়।

■ গ্রিনহাউস গ্যাসের উৎস:- বায়ুমণ্ডলের প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস ও বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ নিচের সারণীতে দেখানো হল:-

(১) কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) – 49%

(২) মিথেন (CH4) – 18%

(৩) ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (C.F.C 11, C.F.C 12) – 14%

(৪) জলীয় বাষ্প ও অন্যান্য গ্যাস – 13%

(৫) নাইট্রাস অক্সাইড (NO) – 06%

(৬) ওজোন –

■ গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাব:- বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর বুকে তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে যে ধরনের পরিবর্তন দেখা যাবে, সেগুলি হল–

● (১) পর্বতগাত্র ও মেরু অঞ্চলে বরফের গলনঃ একটি সমীক্ষায় লক্ষ করা গেছে যে, পৃথিবীর তাপ গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে যদি ক্রমশ দ্রুতহারে বৃদ্ধি পায় তাহলে মেরু অঞ্চল ও পর্বতগাত্রে বরফ অস্বাভাবিক হারে গলে যেতে থাকবে।

● (২) সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বৃদ্ধি:- পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সমুদ্র উপকূলবর্তী নীচু স্থলভাগ অতি সত্বর জলমগ্ন হবে।

● (৩) আবহমণ্ডলের পরিবর্তন:- পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা ইত্যাদি বেশি পরিমাণে পরিলক্ষিত হবে।

● (8) কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস:- সমুদ্র উপকূলবর্তী নীচু স্থলভাগ জলমগ্ন হলে একদিকে কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস পাবে, অন্যদিকে মাটিতে লবণতার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ফসল উৎপাদন কমে যাবে।

● (৫) জলজ বাস্তুতন্ত্রের বিনাশ:- সমুদ্রজলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বিপর্যস্ত হবে এবং অসংখ্য জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রজাতি চিরতরে বিলুপ্ত হবে।

● (৬) অরণ্য বিনাশ:- পৃথিবীর গড়তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে দাবানল সৃষ্টি হলে ব্যাপক অঞ্চল জুড়ে বনভূমির পরিমাণ হ্রাস পাবে।

● (৭) মহামারির প্রাদুর্ভাব:- পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে একদিকে যেমন পানীয় জল দূষিত হবে, অন্যদিকে তেমনি ম্যালেরিয়া, কলেরা, প্লেগ প্রভৃতি সংক্রামক রোগ মহামারির মতো ছড়াবে।