Socio-renovation movement in Bengal Due to the introduction of India with Western education and culture in the nineteenth century, a huge aloe of India’s social and religious life was raised. As a result, a society in Bengal was seen in a social movement. Those who have made important contributions to this movement. Mention them Rammohun Roy, Ishchandra Vidyasagar, Derozio, Keshab Chandra Sen was People.
বাংলায় সমাজ-সংস্কার আন্দোলন (Socio-renovation movement in Bengal) :
উনিশ শতকে পাশ্চাত্যের শিক্ষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে ভারতবাসীর পরিচয় হওয়ার ফলে ভারতের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে এক বিপুল আলােড়ন উঠেছিল। এর ফলে বাংলায় এক সমাজ – সংস্কারমূলক আন্দোলন দেখা গিয়েছিল। এই আন্দোলনে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও, কেশব চন্দ্র সেন প্রমূখ ব্যক্তিগণ।
সমাজ-সংস্কার আন্দোলনে রাজা রামমােহন রায় (Raja Rammahin Roy in Socio-renovation movement):
বাংলা তথা ভারতের নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত হলেন ভারতপথিক রাজা রামমােহন রায়। তিনি তৎকালীন সমাজের প্রচলিত কুসংস্কারগুলি দূর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। তারই প্রচেষ্টায় ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে বড়ােলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সহায়তায় সতীদাহের মতাে নিষ্ঠুর প্রথার অবলুপ্তি ঘটে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে উদারনৈতিক মনােভাব গড়ে তুলতে তিনি ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ‘ আত্মীয়সভা ও ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাত্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে তিনি হিন্দু সমাজের কুসংস্কারগুলি দূর করে ধর্মকে একটি নবরূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। শিক্ষার প্রসারের জন্যও তিনি প্রভূত চেষ্টা করেছিলেন।
সমাজ-সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (Ishwar Chandra Vidyasagar in the Socio-renovation movement) :
বিদ্যাসাগর ছিলেন উনিশ শতকের সমাজ-সংস্কার আন্দোলনের এক উল্লেখযােগ্য ব্যক্তিত্ব। তিনি এই সংস্কার আন্দোলনকে আরও সুসংহত ও শক্তিশালী করেছিলেন।তিনি সমাজের প্রচলিত কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম করেছিলেন। বিধবাবিবাহকে আইনসিদ্ধ করেন (অবশ্য লর্ড ডালহৌসি এই আইন প্রণয়ন করেছিলেন)। এছাড়া তিনি বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেছিলেন। শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি অনেকগুলি পুস্তক রচনা করেছিলেন। নারী শিক্ষার বিস্তারে তিনি ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। তার উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে ‘বােধাদয় ’, কথামালা’ ও বর্ণপরিচয়’- প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ’ যা আজও শিশুশিক্ষার ক্ষেত্রে অপরিহার্য।
সমাজ – সংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের অবদান (Brahmo Samaj contributions to Socio-renovation movement) :
রাজা রামমােহন রায় প্রতিষ্ঠিত ব্রাম্মসমাজের ( ব্রাত্মসভা পরে ব্রাম্মসমাজ নামে পরিচিত হয় ) নেতৃত্ব প্রথমে গ্রহণ করেছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ব্রাহ্বসমাজের মত ও সমাজ সংস্কারের ভাবধারা প্রচারের উদ্দেশ্যে তত্ত্ববােধিনী সভার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তত্ত্ববােধিনী পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে ব্রাম্মসমাজের আদর্শ প্রচার করার কাজে আত্মনিয়ােগ করেন। ক্রমে দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে ব্রাত্যসমাজের নবীন সদস্যদের বিরােধ বাধে। নবীন সদস্যরা আধ্যাত্মিক ধর্মসাধনার পরিবর্তে জাতিভেদ, নারীশিক্ষা, বিধবাবিবাহ প্রভৃতি সমাজ – সংস্কারমূলক কাজকর্মের পক্ষপাতী ছিলেন। এদের নেতৃত্বে ছিলেন কেশবচন্দ্র সেন।
অবশেষে কেশবচন্দ্র ব্রাম্মসমাজ ত্যাগ করে ১৮৬৫ (মতান্তরে ১৮৬৬ ) খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় ‘ব্রাম্মসমাজ’ গঠন করেন। তাদের প্রচেষ্টায় ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সরকার তিন আইন পাশ করে। এই আইন অনুসারে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করা হয় এবং অসবর্ণ বিবাহকে আইনসিদ্ধ। করা হয় তাদের উদ্যোগে সিটি স্কুল, ব্রায় বালিকা বিদ্যালয় প্রভৃতি স্থাপিত হয়। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্রের সঙ্গে বিরােধে অপেক্ষাকৃত নবীন সদস্যরা সাধারণ ব্রাম্মসমাজ গঠন করেন। এতত্সত্ত্বেও উদার ধর্মীয় আদর্শ ও জাতীয়তাবাদের আদর্শ প্রচার করে ব্রাহ্মসমাজ সামাজিক ও জাতীয় সংহতির ভিত্তি স্থাপন করেছিল। নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ব্রাহ্বসমাজের আন্দোলনের অবদান অনস্বীকার্য।
সমাজ – সংস্কার আন্দোলনে ইয়ংবেঙ্গল ও ডিরােজিও (Young Bengal and Derozio in the Socio-renovation movement):
রামমােহনের সমসাময়িক ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতের এক তরুণ গােষ্ঠী সমাজের প্রচলিত কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করেছিলেন সেটিই ইয়ংবেঙ্গল বা নব্যবঙ্গ আন্দোলন নামে পরিচিত। এই আন্দোলনের প্রেরণাদাতা ছিলেন হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরােজিও। তিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে হিন্দু কলেজে অধ্যাপনায় যােগ দেন। তিনি তাঁর দেশপ্রেম , যুক্তিবাদী মনােভাব, সত্যের প্রতি নিষ্ঠা প্রভৃতির মাধ্যমে তার ছাত্রদের মধ্যে যুক্তিবাদের আলাে প্রজ্জ্বলিত করেন। তার চিন্তাধারা ও ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে হিন্দু কলেজের বহু ছাত্র তার একান্ত অনুগামী হয়ে উঠেছিল।
১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি অ্যাকাডেমিক অ্যাসােসিয়েশন ’ নামে একটি সমিতি গঠন করে হিন্দু সমাজের কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে আন্দোলনে ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করেন। কিন্তু ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তার অকালমৃত্যু ঘটে। তবে তাঁর ছাত্ররা তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সমাজ – সংস্কারে ব্রতী ছিলেন। ইয়ংবেঙ্গাল গােষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন রাধানাথ শিকদার, রামতনু লাহিড়ী, রসিকৃয় মল্লিক,প্যারিচাঁদ মিত্র, কৃয়মােহন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে নব্যবঙ্গ দল জ্ঞানার্জনী সমিতি প্রতিষ্ঠা করে। অনেক ঐতিহাসিক তাদের সমালােচনা করলেও তাদের দেশাত্মবােধ ও সংস্কার চেতনা বাংলার নবজাগরণকে সমৃদ্ধ করেছিল। ঐতিহাসিক তারাচাদের মতে, এর ফলে চিন্তাজগতে বিপ্লব আসে’।
সমাজ – সংস্কার আন্দোলনে রামকৃয় মিশন (Ramakrishna Mission in Socio-renovation Movement) :
ব্রাত্যসমাজের আন্দোলনের গতি যখন থেমে আসছিল তখন হিন্দুধর্মে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন শ্রীরামকৃয়। তিনি বলতেন ‘যত মত তত পথ’। তার সর্বধর্ম সমন্বয়বাদী আদর্শ। ভারতের জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। তার শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃয়ের চিন্তাধারাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে গড়ে তুললেন রামকৃয় মিশন যা আজও সমাজসেবা ও জাতীয় চেতনা উন্মেষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আর্ত মানবজাতির সেবাই মিশনের প্রধান লক্ষ্য।
সমাজসংস্কার আন্দোলনের ফলাফল (The result of the Socio-renovation movement) :
উনিশ শতকের বাংলার সমাজসংস্কার আন্দোলনের ফলে
(১) বাংলার সমাজজীবনে গতিশীলতা আসে।
(2) নারীদের স্বাধীনতা, মর্যাদা প্রভৃতি বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রশস্ত হয়।
(৩) বাংলায় জাতীয়তাবাদী মনােভাবের সূচনা ঘটে।
মূল্যায়নঃ
উনিশ শতকের বাংলার এই সমাজ-সংস্কার আন্দোলন মূলত হিন্দু সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এছাড়া গ্রাম্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যে এই আন্দোলন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তাসত্ত্বেও এই আন্দোলন ছিল ভারতের জাতীয়তাবাদ বােধের বিকাশে এক উল্লেখযােগ্য পদক্ষেপ (The Bengal Renaissance was the child of eighteenth century cosmopolitanism and pragmatic British policy built round the need for an accultarated civil service class.)
আরও পড়ুনঃ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন