মোগল সাম্রাজ্যের প্রসারে শেরশাহের ভূমিকা | Shershah’s Role in Expansion of Mughal Empire




Hello Students,


Wellcome to edu.bengaliportal.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা,  edu.bengaliportal.com আজ আমরা নিয়ে এসেছি Shershah’s Role in Expansion of Mughal empire. প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষার যেমন  CTET | WBTET | WBCS । MPTET | ATET| UPTET | Rajasthan PTET | TNTET | Karnataka TET | RTET | HTET| PSTET। BANK EXAM। ইত্যাদি পরীক্ষার বিভিন্ন প্রস্তুতি পত্র আপনাদের বিনামূল্যে দিয়ে এসেছি। তাই Ajjkal.com আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে মোগল সাম্রাজ্যের প্রসারে শেরশাহের ভূমিকা | Shershah’s Role in Expansion of Mughal Empire

Ajjkal



মোগল সাম্রাজ্যের প্রসারে শেরশাহের ভূমিকা | Shershah’s Role in Expansion of Mughal Empire

শেরশাহ (১৫৪০-১৫৪৫ খ্রিঃ) : দিল্লির সিংহাসন দখল করে শের খাঁ ‘শেরশাহ’ অভিধা গ্রহণ করে শূর বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। সিংহাসন লাভের পর অল্প সময়ের মধ্যে তিনি পাঞ্জাব, সিন্ধু, সুলতান, মালব, গোয়ালিয়র, বিহার ও বাংলার ওপর নিজের আধিপত্য স্থাপন করেন। বুন্দেলখণ্ডের কালিঞ্জর দুর্গ আক্রমণ কালে এক বিস্ফোরণে তাঁর মৃত্যু হয় (১৫৪৫ খ্রিঃ)।



শাসক হিসেবে শেরশাহের কৃতিত্ব : ভারতবর্ষের ইতিহাসে যে-সমস্ত শাসক নানা দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলেন শেরশাহ। শেরশাহ মাত্র পাঁচ বছর (১৫৪০-৪৫ খ্রিঃ) রাজত্বকালে যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি যে শাসন কর্তৃত্ব, সাংগঠনিক প্রতিভা ও শাসকোচিত অন্তর্দৃষ্টির পরিচয় দেন তা পরবর্তীকালে শাসকদের অনুসরণযোগ্য হয়ে উঠেছে। তাঁর শাসনব্যবস্থার বিভিন্ন দিক লক্ষ করেই ঐতিহাসিক ডঃ কালিকারঞ্জন কানুনগো তাঁকে ‘আকবরের চেয়েও মৌলিক প্রতিভাসম্পন্ন শাসক ও সংগঠক’ বলে অভিহিত করেছেন।




■ শাসনব্যবস্থা : শেরশাহের শাসনব্যবস্থা দুটি প্রশাসনিক স্তরে বিভক্ত ছিল, যেমন : (১) কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা এবং (২) প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা।

(১) কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা : শেরশাহের শাসনপদ্ধতির উৎস ছিল তুর্কি সুলতানদের আমলে প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থা ও পারসিক শাসনপদ্ধতি। কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থায় সর্ব্বোচ্চ ছিলেন সুলতান স্বয়ং। কেন্দ্রীয় শাসন পরিচালনার জন্য তিনি চারজন মন্ত্রী নিয়োগ করেন, এরা হলেন : ‘দেওয়ান-ই-উজিরাৎ’ (রাজস্ব বা অর্থমন্ত্রী), ‘দেওয়ান-ই-আর্জ’ (প্রতিরক্ষা মন্ত্রী), ‘দেওয়ান-ই-রিয়াসৎ’ (পররাষ্ট্র মন্ত্রী), এবং ‘দেওয়ান-ই-ইনসা’ (রাজকীয় ইস্তাহার তৈরি ও প্রেরণের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী)। এছাড়া বিচার ও গুপ্তচর বিভাগের প্রধান ছিলেন যথাক্রমে ‘দেওয়ান-ই-কাজি’ ও ‘দেওয়ান-ই-বারিদ’ (শিকদারে- শিকদারান)।

(২) প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা : শাসনকার্যের সুবিধার জন্য শেরশাহ সাম্রাজ্যকে ৪৭ টি সরকারে ও প্রতিটি সরকারকে কয়েকটি পরগণায় বিভক্ত করেন। সেই অর্থে, পরগণাই ছিল প্রশাসনিক ব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তর। প্রত্যেকটি সরকার শিকাদর, প্রধান মুনসেফ (মুনসিফে মুনসিফান) ও একজন প্রধান কাজির দ্বারা পরিচালিত হত। পরগণার শাসনকার্য পরিচালনার জন্য তিনি ‘পাটোয়ারী’, ‘চৌধুরী’, ‘মুকাদ্দম’ নামে কয়েকজন কর্মচারী নিয়োগ করেন। গ্রামের শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে শেরশাহ দেশের প্রচলিত শাসনব্যবস্থাকেই অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন। অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য শেরশাহ দেশের পুলিশ প্রশাসনকে শক্তিশালী করে তোলেন।

(৩) রাজস্বব্যবস্থা : রাজস্বক্ষেত্রে শেরশাহ আমূল পরিবর্তন করেন। কৃষি ও ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার উন্নতির জন্য শেরশাহ কয়েকটি ব্যবস্থা অবলম্বন করেন, এদের মধ্যে উল্লেখ্য ছিল : (ক) জমির পরিমাণ যথাযথ মাপজোকের ভিত্তিতে নির্ধারণ, (খ) রাষ্ট্রের প্রাপ্য ফসলের পরিমাণ নির্দিষ্ট করা, (গ) ভূমিরাজস্ব যথাসম্ভব নগদ অর্থে আদায় করা, (ঘ) মধ্যস্বত্বভোগীদের অধিকার বিলুপ্ত করা এবং (ঙ) কৃষকদের জমির পরিমাণ ও স্বত্ত্ব নির্দিষ্ট করা। শেরশাহ সর্বপ্রথমে জমি জরিপের ব্যবস্থা করেন। তাঁর আমলে উৎপাদন শক্তি অনুসারে জমিগুলিকে ভালো, মাঝারি ও নিকৃষ্ট এই তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। জমির উৎপন্ন ফসলের ১/৩ বা ১/৪ অংশ রাজস্ব দিতে হত। তিনি জমির উপর প্রজার স্বত্ব সরকারিভাবে স্বীকার করে ‘কবুলিয়ত’ ও ‘পাট্টা’র প্রচলন করেন। এই ব্যবস্থার ফলে সরকার ও কৃষক উভয়ের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়েছিল। বাণিজ্যিক লেনদেন ও মুদ্রাব্যবস্থার দুর্নীতি দূর করার জন্য শেরশাহ সোনা, রূপা ও তামার আলাদা আলাদা মুদ্রা চালু করেন। তিনি ‘দাম’ নামে এক নতুন মুদ্রার প্রবর্তন করেন।




(৪) বিচারব্যবস্থা : দেশের অভ্যন্তরে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখবার জন্য শেরশাহ সুশৃঙ্খল বিচারব্যবস্থার প্রণয়ন করেন। ফৌজদারী ব্যবস্থার বিচারককে সিকদার বলা হত এবং দেওয়ানি মামলার ভার ছিল কাজি ও মীর আদলের। সম্রাট ছিলেন সাম্রাজ্যের সর্ব্বোচ্চ বিচারক। বিচারের ক্ষেত্রে জাতি ধর্ম বা ব্যক্তির মধ্যে কোনো রকম বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করা হত না।

(৫) সামরিক সংস্কার : আলাউদ্দিন খলজির অনুকরণে শেরশাহ তাঁর সামরিক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। সেনাবাহিনীতে আফগান ও পাঠানদের আধিপত্য থাকলেও তাতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি সেনাবাহিনীর মধ্যে কঠোর শৃঙ্খলা ও দক্ষতা বজায় রাখেন । তিনি সেনাবাহিনীতে দাগ, হুলিয়া এবং ‘ঘোড়ার গায়ে ছাপ প্রথা’ চালু করেন। ব্রাজিত গৌড় নামে জনৈক হিন্দুকে তিনি প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করেন। ঐতিহাসিক আব্বাস সারওয়ানি তাঁর এই সামরিক ব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

(৬) ধর্মব্যবস্থা : ধর্মীয় উদারতা ছিল শেরশাহের শাসনব্যবস্থার অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক। তিনি হিন্দুদের সঙ্গেও যথাসম্ভব উদার ব্যবহার করেন। রাষ্ট্রনীতি থেকে ধর্মকে বিছিন্ন রাখার ব্যাপারে শেরশাহ খুবই সচেতন ছিলেন।

(৭) জনকল্যাণমূলক সংস্কার : সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংযোগস্থাপনের জন্য শেরশাহ গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড, আগ্রা থেকে বারহানপুর, লাহোর থেকে সুলতান প্রভৃতি রাজপথ, নির্মাণ করেন। এছাড়া, সংবাদ আদানপ্রদানের জন্য তিনি ডাক-বিভাগের প্রতিষ্ঠাও করেন। রাস্তার ধারে বৃক্ষরোপণ এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে সরাইখানা প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হয়।

মূল্যায়ন : শেরশাহ ছিলেন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রজাহিতৈষী শাসক। ঐতিহাসিক আসকিন, ভিনসেন্ট স্মিথ, ডঃ কালিকারঞ্জন কানুনগো এবং কালীকিংকর দত্তের মতে, ‘শেরশাহের শাসনব্যবস্থা ছিল তাঁর সৃষ্টিধর্মী প্রতিভার সাক্ষর’। ঐতিহাসিক কিনির মতে, প্রশাসক হিসাবে শেরশাহ ছিলেন ইংরেজদের থেকেও দক্ষ। ব্যক্তিগত জীবনে নিষ্ঠাবান মুসলিম হলেও রাষ্ট্রীয় বিষয়ে তিনি ছিলেন প্রজাহিতৈষী স্বৈরাচারী শাসক ও আকবরের মতো মহান সম্রাট। অন্যদিকে, ডঃ আর.সি.ত্রিপাঠী ও ডঃ পি সরনের মতে, শেরশাহের শাসনব্যবস্থা ছিল তাঁর পূর্ববর্তী শাসকদের অনুকরণ মাত্র। তাঁদের বিচারে, “Sher Shah was a reformar, not an innovetor”,

পরিশেষে বলা যায় যে, পরিস্থিতির প্রয়োজনে পূর্ববর্তীদের প্রবর্তিত ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করে শেরশাহ তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও প্রজানুরাগেরই পরিচয় দেন। তাঁর শাসনব্যবস্থায় যে শাসকোচিত অন্তর্দৃষ্টি ও সাংগঠনিক প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়, তা আকবরসহ পরবর্তী মাগল সম্রাটদের প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে।

মোগল সাম্রাজ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা : শেরশাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ইসলাম শাহ সিংহাসনে বসেন। ইসলাম শাহের মৃত্যুর পর দিল্লির শূর বংশের দুর্বলতার সুযোগে হুমায়ুন পারস্য থেকে ভারতে ফিরে এসে লাহোর, দিল্লি ও আগ্রা জয় করেন। এইভাবে তিনি মোগল সাম্রাজ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।







Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন।