Second World War: 1918, the statesmen gathered at the Paris Peace Conference in 1919 began to differ on various issues, such as: The desire to maintain the balance of power in Europe. According to the decision taken at the Paris Peace Conference, Europe was reorganized by writing a number of treaties, one of which was the Treaty of Versailles with Germany.Second World war According to the treaty, the size of Germany in Europe was reduced as much as possible, and the map of Europe was redrawn after further restructuring. But after the end of the First World War, the collective security system that was introduced to ensure peace and security in the world became shaky within the next 10 years. And after the German dictator Hitler’s invasion of Poland on September 1, 1939, Second World War officially marked the end of two decades of peace in the world.
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি ও বিস্তার (The background and spread of Second World War):
১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ ই নভেম্বর তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটলে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের শান্তিসম্মেলনে সমবেত রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে নানান বিষয়ে মতান্তর শুরু হয় , যেমন : একদিকে নানান আদর্শবাদী নীতির ভিত্তিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরােপের পুনর্গঠনের ইচ্ছা , অন্যদিকে জার্মানিকে সব দিক থেকে দুর্বল করে রেখে ইউরােপের শক্তিসাম্য বজায় রাখার আকাঙক্ষা ।
প্যারিস শান্তিসম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে কয়েকটি সন্ধিপত্র রচনা করে ইউরােপের পুনর্গঠন করা হয় , এদের মধ্যে অন্যতম ছিল জার্মানির সঙ্গে ভার্সাইয়ের সন্ধি । এই সন্ধি অনুসারে ইউরােপে জার্মানির আয়তন যতদূর সম্ভব ছােটো করে দেওয়া হয় এবং আরও নানান পুনর্গঠনের পর ইউরােপের মানচিত্র নতুন করে আঁকা হয় । কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর পৃথিবীর শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য যে যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয় তা পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যেই নড়বড়ে হয়ে যায় । এবং ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের পয়লা সেপ্টেম্বরে জার্মান একনায়ক হিটলারের পােল্যান্ড আক্রমণের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীতে দু’দশকব্যাপী শান্তিপর্বের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটে ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি তথা উৎস সম্পর্কে দুটি মূল বিষয় জানা প্রয়ােজন । ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলির আগ্রাসনের প্রচেষ্টা ও তার প্রতিরােধে বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির ব্যর্থতা , এই দুইয়ের মাধ্যমে ইউরােপ তথা বিশ্বের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সূত্রপাতের প্রধানতম কারণ । প্রথমত , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুতের মূলে ছিল ফ্যাসিবাদী জার্মানির বিস্তারধর্মী তৎপরতা , যার ফলে তৎকালীন ইউরােপীয় রাজনীতির স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল । দ্বিতীয়ত , ফ্যাসিবাদী জার্মান সম্প্রসারণবাদের পরিপ্রেক্ষিতে পাশ্চাত্যের গণতান্ত্রিক দেশগুলাের নেওয়া আপােষমূলক নীতি , যার ফলে হিটলারের আগ্রাসী মনােভাব আরও পরিপুষ্ট হয়ে উঠেছিল । এইজন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অপ্রয়ােজনীয় যুদ্ধ’বলে চিহ্নিত করেছেন । তাঁর মতে , প্রথম থেকেই অপর পক্ষ সক্রিয় প্রতিরােধমূলক নীতি অনুসরণ করলে হিটলার যুদ্ধের ঝুঁকি নিতেন না ।
ইতালি ও জার্মানিতে ফ্যাসিবাদের উত্থান রাষ্ট্রই সব শক্তির উৎস , রাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে ব্যক্তির আলাদা কোনাে অস্তিত্ব নেই ‘ — এই কথাই হল ফ্যাসিবাদের মূল বক্তব্য।ফ্যাসিবাদীব্যবস্থায় রাষ্ট্র , সমাজ , দল , সমস্ত একে অপরের পরিপূরক ।
ফ্যাসিবাদ শুধুমাত্র গণতন্ত্রের বিরােধী নয় , সমাজতন্ত্রের সঙ্গেই এর অহি – নকুল সম্পর্ক । এছাড়া যুদ্ধে ও সংঘর্ষের নীতিতে বিশ্বাসী ফ্যাসিবাদ বিশ্বশান্তির পক্ষেও চরম বিপজ্জনক ছিল ।
[ ১ ] ইতালিতে ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্রের উত্থান : ইতালিতেই প্রথমে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির আবির্ভাব হয় । বিশ্বযুদ্ধে ইতালি মিত্রপক্ষেই ছিল । কিন্তু প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে ইতালি আশানুরূপ পুরস্কার না পাওয়ায় ইতালিতে এক গভীর নৈরাশ্য ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয় । অন্য দিকে বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালিতে এক দারুণ অর্থনৈতিক সংকটের উদ্ভব হয় । দেশের সব জায়গায় ধর্মঘট ও অরাজকতা ভীষণভাবে দেখা দেয় এবং ব্যাবসাবাণিজ্যের ধ্বংসের ফলে বেকার সমস্যারও উদ্ভব হয় । এই সময় রাষ্ট্রের ক্ষমতালাভের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলাের মধ্যে বিবাদ বিসম্বাদ ও প্রশাসনে দুনীতি দেশময় অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে ।
দেশের এই অশান্ত পরিস্থিতির সুযােগ নিয়ে বেনিটো মুসােলিনি নামে এক নেতা যুদ্ধফেরত সৈনিকদের নিয়ে এক শক্তিশালী দল গঠন করেন । এদের বলা হত ‘ ফ্যাসিস্ট । দেশের সব সমস্যার সমাধান হবে — এই ভেবে দলে দলে মানুষ । মুসােলিনির দলে যােগ দেয় । ফ্যাসিবাদীরা ছিল স্বাধীনতা , গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের ঘাের বিরােধী ও ইতালির জাতীয়তাবাদের উগ্র সমর্থক । তাদের পররাষ্ট্র নীতির মূলে ছিল জঙ্গিবাদ । ইতালির রাজা তৃতীয় ইমানুয়েল ভয় পেয়ে মুসােলিনিকে প্রধানমন্ত্রীর পদে নিযুক্ত করেন । মুসােলিনি ইতালির সব বিরুদ্ধ দলগুলােকে ধ্বংস করে ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন । এইভাবে মুসােলিনি ইতালির সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন । দেশে নানান জনকল্যাণকর কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে ইতালিতে সব রকমের আন্দোলন নিষিদ্ধ করা হয় ; ফ্যাসিবাদী সংবাদপত্র ছাড়া আর সব সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করা হয় এবং স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলােকে ফ্যাসিবাদীদের নিয়ন্ত্রণে আনা হয় । কিন্তু মুসােলিনি ও ফ্যাসিবাদী সরকারের সাম্রাজ্যবিস্তারের আকাঙক্ষা খুব বেশি ছিল । এই উদ্দেশ্যে একের পর এক দেশ জয় করে মুসােলিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পক্ষে যােগ দেন ।
[ 2 ] জার্মানিতে নাৎসীবাদী একনায়কতন্ত্রের উত্থান : প্রায় একই কারণে ইতালির ফ্যাসিবাদী দলের মতাে জার্মানিতেও প্রতিক্রিয়াশীল নাৎসীদলের উদ্ভব হয় । ইতালির মতাে যুদ্ধবিধ্বস্ত জার্মানিতেও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা , অর্থনৈতিক সংকট ও বেকার সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছিল । এ ছাড়া ভাসাই সন্ধির অপমানজনক শর্তগুলাে জার্মানদের মধ্যে গভীর উত্তেজনা ও তিশােধের স্পৃহা জাগিয়ে তােলে । জার্মানির সামনে যখন অসংখ্য সমস্যা , জনসাধারণের দুর্দশা যখন চরমে , সেই সময় দেশের দুঃখদুর্দশার অবসানের পরিকল্পনার কথা ঘােষণা করে অ্যাডাল হিটলার ও তাঁর জাতীয়তাবাদী সমাজতন্ত্রী দল ( National Socialist party ) জার্মানির রাজনীতির মঞ্চে আবির্ভূত হন । অ্যাডাল্ফ হিটলার সাধারণ সৈনিক হিসাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যােগ দিয়েছিলেন । যুদ্ধের পর তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ।
মেইনক্যাম্ফ ‘ ( ‘ আমার সংগ্রাম ‘ ) নামে তাঁর রচিত আত্মজীবনীতে রাজনৈতিক আদর্শের ও নাৎসীদলের কর্মসূচির ব্যাখ্যা পাওয়া যায় । নাৎসীদলের মূল নীতি ছিল উগ্র জাতীয়তাবাদ , জার্মানি থেকে ইহুদীদের বিতাড়ন এবংগণতন্ত্রের ধ্বংসসাধন । নাৎসীদলের প্রধান কর্মসূচি ছিল সমস্ত জার্মান ভাষাভাষী জনগণকে নিয়ে এক শক্তিশালী জার্মান রাষ্ট্র গঠন করা ও জাতীয় সমাজতন্ত্রবাদ স্থাপন করা । হিটলারের নাৎসীবাদে আকৃষ্ট হয়ে যুবক শ্রেণি , কৃষক শ্রেণি ও জার্মান ব্যবসায়ীরা তার দলে যােগ দেয় । ধীরে ধীরে সমাজতন্ত্রী ও কমিউনিস্টদের দমন করে হিটলার তাঁর নাৎসীদলের সাহায্যে রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা দখল করেন । হিটলার ‘ ফুয়েরার ’ ( নেতা ) নামে পরিচিত হন । এইভাবে জার্মানিতে হিটলার ও নাৎসীদলের একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয় ।
ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন ইতালির ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন + দক্ষিণ – পূর্ব ইউরােপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ছিল ইতালির ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন নীতির প্রধান লক্ষ্য । বিশের দশকে ইতালি আড্রিয়াটিক সাগর এলাকায় প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা করে এবং যুগােশ্লাভিয়ার কাছে ডালমেসিয়া অঞ্চলের উপর দাবি জানায় , কিন্তু ইউরােপীয় দেশগুলির বিরােধিতায় বেশি দূর এগােতে পারে নি । এরপর তিরিশের দশকে ইতালি আফ্রিকা মহাদেশের আবিসিনিয়াকে সম্প্রসারণের এলাকা হিসেবে বেছে নিলে ফ্রান্স তাকে আবিসিনিয়া আক্রমণের জন্য গােপনে মদত দেয় । ওয়ার ওয়াল নামক এক স্থানে ইতালির সৈন্যদের সঙ্গে আবিসিনিয়ার সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ বাধে । জাতিসংঘ ইতালিকে দোষী সাব্যস্ত করে , কিন্তু ইতালি জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্তকে গ্রাহ্য না করে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে আবিসিনিয়াকে তার সাম্রাজ্যভুক্ত করে নেয় ।
জার্মানির ফ্যাসিবাদী নাৎসী আগ্রাসন
[ ১ ] হিটলারের আমলে জার্মানির ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন নীতির চরিত্র : হিটলারের ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন নীতির চরিত্র ছিল একাধারে সংশােধনবাদী ও বিস্তারধর্মী । জার্মানির বিস্তারধর্মী পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে হিটলারের উত্থাপিত জাতিতত্ত্বের প্রতিফলন দেখা যায় । একদিকে তিনি যেমন সমস্ত জার্মান ভাষাভাষী অঞ্চলগুলিকে গ্রাস করে ঐক্যবদ্ধ জার্মান রাষ্ট্র গঠন করতে চাইলেন , অন্যদিকে জার্মানজাতির শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার জন্য অ – জার্মান অঞ্চলগুলিকেও গ্রাস করে জার্মানজাতির বিকাশের জন্য প্রয়ােজনীয় ভূখণ্ড অর্জন করতে চাইলেন । তাই জাতিতত্ত্ব ’ ( race ) ও ভূখণ্ড ’ ( space ) ছিল হিটলারের নাৎসী ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন নীতির প্রধান উপকরণ।
[২ ] হিটলারের ফ্যাসিবাদী আগ্রসন নীতির প্রথম পর্যায় : ‘ বিস্তার নীতি’রূপায়নের আগে হিটলার প্রথমে জার্মানির নিজের ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত করার দিকে তৎপর হলেন । ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তিনি ভার্সাই চুক্তির তথাকথিত অপমানজনক শর্তগুলি লঙ্ঘন এবং ইউরােপে জার্মানির কূটনৈতিক অবস্থানের সুদৃঢ়করণ করার জন্য কয়েকটি কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেন , যেমন :
( ১ ) পােল্যান্ডের সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি : পূর্ব সীমান্তে আপাতত শান্তি বজায় রাখবার উদ্দেশ্যে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে হিটলার পােল্যান্ডের সঙ্গে ১০ বছরের জন্য এক অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করলেন।
( ২ ) নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন ও জাতিসংঘ ত্যাগ : ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে ( Disarmament Conference ) জার্মানি ফ্রান্সের সমপরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করার দাবি করল। কিন্তু এই দাবি স্বীকৃত না হলে হিটলার এই কনফারেন্স ত্যাগ করে আসার নির্দেশ দেন এবং সেই সঙ্গে জার্মানি জাতিসংঘ ত্যাগ করারও নােটিশ দেয়।
( ৩ ) সামরিক শক্তিবৃদ্ধি ও ব্রিটেনের সঙ্গে চুক্তি : অতঃপর জার্মানি ভার্সাই – সন্ধির শর্তাদি উপেক্ষা করে সামরিক শক্তি অত্যন্ত দ্রুত গড়ে তুলতে প্রয়াসী হল । গ্রেটব্রিটেন তার এই কাজে বাধা দেওয়ার পরিবর্তে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে জার্মানির সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে । এই চুক্তি অনুসারে হিটলার ডুবােজাহাজসহ ইংল্যান্ডের নৌ – শক্তির এক – তৃতীয়াংশ পর্যন্ত জার্মানির নৌশক্তি গড়ে তুলবার সুযােগ লাভ করলেন।
( ৪ ) ইতালির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক : ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ইটালি যখন ইথিওপিয়া আক্রমণ করে , হিটলার তখন ইতালিকে সমর্থন করেন । এইভাবে তিনি ইটালির সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে তুললেন।
( ৫ ) রাইন অঞ্চলে জার্মান সৈন্য প্রেরণ : ১৯৩৫ সালের পর থেকে জার্মানি ও ইতালির মধ্যে ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক থাকায় ইতালি ইথিওপিয়া আক্রমণ করলে জাতিসংঘ তা প্রতিরােধ করার মতাে কার্যকর কিছুই করতে পারল না । কিন্তু এই ঘটনার পর মিত্রপক্ষের দুর্বলতা ও বিভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠলে তার সুযােগে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ৭ ই মার্চ ভার্সাই সন্ধির শর্ত এবং লােকার্নো চুক্তির প্রতিজ্ঞা , উপেক্ষা করে হিটলার রাইন অঞ্চলে সৈন্যবাহিনী পাঠালেন । অধ্যাপক এ . জে . পি . টেলর ৭ ই মার্চকে যুদ্ধোত্তর ইতিহাসের “ দিক পরিবর্তনকারী ঘটনা ” ( turning point ) বলেছেন । কারণ , এর মাধ্যমে যৌথ নিরাপত্তার বিধিব্যবস্থা কার্যত বিফল হয়ে গেল।
[ ৩ ]হিটলারের ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন নীতির দ্বিতীয় পর্যায় ( দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে পৃথিবী ) : ভার্সাই সন্ধি উপেক্ষা করে জার্মানি রাইন অঞ্চলে সেনাবাহিনী পাঠালে মিত্ররাষ্ট্রবর্গ কোনও বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি । তাদের এই ব্যর্থতা হিটলারকে আরও সক্রিয় বৈদেশিক নীতি অনুসরণে উৎসাহিত করল , যেমন :
( ১ ) স্পেনের গৃহযুদ্ধে অংশগ্রহণ : স্পেনের গণতন্ত্রী সরকারের বিরুদ্ধে ফ্যাসিষ্টপন্থী জেনারেল ফ্রাঙ্কো বিদ্রোহ করলে জার্মানি প্রকাশ্যে বিদ্রোহীদের সমর্থন করতে থাকলেও মিত্রপক্ষীয়দের মধ্যে ঐক্য না থাকায় তারা নিরপেক্ষতা নীতি অবলম্বন করে বসে রইলেন । স্পেনে জেনারেল ফ্রাঙ্কো জয়যুক্ত হলে হিটলার তাঁর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেন।
( ২ ) অস্ট্রিয়ার সঙ্গে বােঝাপড়া : হিটলার অস্ট্রিয়ার অভ্যন্তরে তাঁর নাৎসীদলের কার্যকলাপে উৎসাহ দান করলে এক দারুণ সংকটের সৃষ্টি হল । ইতালি তখন ইথিওপিয়ার যুদ্ধে ব্যস্ত । সেই সুযােগে হিটলার অস্ট্রিয়া সরকারের সঙ্গে একটি সাময়িক বােঝাপড়া করলেন । যার ফলে অস্ট্রিয়া নিজেকে একটি জার্মান রাজ্য ( German State ) বলে ঘােষণা করল এবং হিটলারও তার সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিলেন । এই স্বীকৃতির পর হিটলার ইতালির সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত করতে সক্ষম হলেন ।
( ৩ ) জাপানের সঙ্গে কমিন্টার্ন বিরােধী চুক্তি : ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে হিটলার জাপানের সঙ্গে কমিন্টার্ন – বিরােধী চুক্তি ( Anti – Comintern Pact ) স্বাক্ষর করলেন । একবছর বাদে ইতালিও জার্মানির সঙ্গে একই চুক্তি স্বাক্ষর করতে সম্মত হল । এইভাবে হিটলার জার্মানি , জাপান ও ইতালির মধ্যে একটি কুটনৈতিক জোট সৃষ্টি করলেন ,এই কূটনৈতিক জোট রােম – বার্লিন – টোকিও অক্ষ ( Rome – Berlin – Tokyo – Avis ) নামে পরিচিত হল ।
( ৪ ) অস্ট্রিয়া দখল : জাপানের সঙ্গে চুক্তির পর হিটলার তার রাজ্য – গ্রাস নীতিকে অত্যন্ত দ্রুত কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিলেন । এবার তিনি অস্ট্রিয়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন । তাঁর ইঙ্গিতে অস্ট্রিয়ার অভ্যন্তরে নাৎসী দল আবার আন্দোলন সৃষ্টি করলাে । অস্টিয়ার চ্যান্সেলার সুসনিগের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের সুযােগে হিটলার অস্ট্রিয়া দখল করে জার্মানির অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন । অস্ট্রিয়া দখলের পর পরিকল্পনা অনুসারে চেকোশ্লোভাকিয়ার সুদেতান অঞ্চলের ( Sudeten ) জার্মানরাও একই আন্দোলন শুরু করলে হিটলার চেকোশ্লোভাকিয়া সীমান্তে সেনা সমাবেশ করলেন । চেকোশ্লোভাকিয়া সাহায্যের জন্য আবেদন জানালে রাশিয়া অন্যান্য রাষ্ট্র সাহায্য করলে সেও সাহায্য করবে ‘ — এই নীতি ঘােষণা করল । কিন্তু ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেন তােষণনীতি অবলম্বন করে বারবার হিটলারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বােঝাপড়ার চেষ্টা করতে লাগলেন ।
অবশেষে মিউনিক নামক স্থানে জার্মানির পক্ষে হিটলার , ব্রিটেনের পক্ষে চেম্বারলেন , ফ্রান্সের পক্ষে দালাদিয়ার ( Daladier ) ও ইতালির পক্ষে মুসসালিনির মধ্যে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে মিউনিক চুক্তি ( Munich Pact ) স্বাক্ষরিত হ’ল । এই চুক্তিতে চেকোশ্লোভাকিয়ার মতামতের অপেক্ষা না রেখে সুদেতান অঞল জার্মানিকে দেওয়ার কথা বলা হল । মিউনিক চুক্তির সময় হিটলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে , চেকোশ্লাভাকিয়ার মধ্যে শুধুমাত্র সদেতান অঞল পেয়েই তিনি সন্তুষ্ট থাকবেন । কিন্তু শেষ পর্যন্ত চেকোশ্লোভাকিয়ার অস্তিত্ব রক্ষা পেল না । কিছুদিনের মধ্যেই অন্য এক অজুহাতে হিটলার সমগ্ৰ চেকোস্লোভাকিয়া দখল করে নিলেন ।
( ৬ ) মেমেল দখল ও পােল্যান্ডের কাছে দাবি : চেকোশ্লাভাকিয়া দখলের পর ভীতি প্রদর্শন করে হিটলার লিথুয়ানিয়ার কাছ থেকে মেমেল দখল করে নিলেন । অতঃপর হিটলার পােল্যান্ডের কাছ থেকে ডানজিগ ( Dancing ) দাবি করলেন এবং এর সঙ্গে পােল্যান্ডের মধ্যে দিয়ে জার্মানির দুই অংশের মধ্যে যােগাযােগ স্থাপনের জন্য সংযােগ – ভূমিও ( Corrialor ) দাবি করে বসলেন ।
( ৭ ) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের যুদ্ধের হুমকি : ব্রিটেন ও ফ্রান্সের রাজনীতিবিদ্ৰা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছিলেন যে , তােষণনীতি দিয়ে তাঁরা হিটলারকে তাদের আকাক্ষা মতাে পরিচালিত করতে পারবেন না ; সুতরাং তাঁরা ঘােষণা করলেন যে , পােল্যান্ড আক্রান্ত হলে তাঁরা পােল্যান্ডের পক্ষে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন ।
( ৮ ) রাশিয়ার সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি : ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দেওয়া যুদ্ধের হুমকির পর একটি সংকটজনক আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির উদ্ভব হ’ল । হিটলার বুঝলেন , রাশিয়ার সঙ্গে একটি বােঝাপড়া না করে আর অগ্রসর হওয়া যুক্তিযুক্ত হবে না । সােভিয়েট রাশিয়াও হিটলারের বিরুদ্ধে মিত্রপক্ষীয় ঐক্য গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়ে যুদ্ধ থেকে সরে থাকবার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল । সুতরাং হিটলার ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার সঙ্গে অনাক্রমণ – চুক্তি স্বাক্ষর করতে সক্ষম হলেন ।
( ৯ ) জার্মানির পােল্যান্ড আক্রমণ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা : ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ লা সেপ্টেম্বর হিটলার পােল্যান্ড আক্রমণ করলেন । তিনি ভেবেছিলেন হয়তাে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ভয় পেয়ে তাঁর সঙ্গে বােঝাপড়ায় আসতে বাধ্য হবে , কিন্তু তা হল না । প্রতিশ্রুতি । অনুযায়ী ২ রা সেপ্টেম্বর ব্রিটেন ও ফ্রান্স পােল্যান্ডের পক্ষ অবলম্বন করলে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হল ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক কালে ফ্যাসিবাদের প্রতি ব্রিটেন ও ফ্রান্সের তােষণনীতি এবং গণতন্ত্রের বিপর্যয়(Britain and France’s Tactical Policy to Fascism in the Pre-Second World War and the Crash of Democracy)
১৯৩০ – এর দশকে ব্রিটেন ও ফ্রান্স এক নমনীয় আপসমুখী নীতি গ্রহণ করায় জাতিসংঘ যৌথ নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রতিপালনে ব্যর্থতা দেখাতে থাকে । ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে জাপান মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করলে জাতিসংঘ কোনাে সক্রিয় ব্যবস্থা নিতে পারে নি , এমনকি জাপানকে আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত পর্যন্ত করতে সাহস পায় নি । এইভাবে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ইতালি ইথিওপিয়ায় সামরিক অভিযান শুরু করলে জাতিসংঘের দুর্বলতা ও অসহায় অবস্থা আবার প্রমাণিত হল । এই সময়ে জাতিসংঘ ইতালিকে আক্রমনকারী হিসেবে চিহ্নিত করলেও ইতালিকে সন্তুষ্ট করার জন্য ব্রিটেন ও ফ্রান্স গােপনে ইথিওপিয়া বিভাজনের অশালীন পরিকল্পনা গ্রহণ করে ।
এর ফলে শুধু যে জাতিসংঘের যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থাই বিপর্যস্ত হল তাই নয় , ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছিল তাও কার্যত ভেঙে পড়ল । দ্বিতীয়ত , একদিকে যখন যৌথ নিরাপত্তাব্যবস্থা কার্যত অচল , জার্মানি ও ইতালি তখন পারস্পরিক বিদ্বেষভাব পরিত্যাগ করে একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হল এবং নিজেদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করলাে । এইভাবেই ইউরােপে রােম – বার্লিন ফ্যাসিবাদী জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে । ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় থেকে ঈচ্চা – ফরাসি তােষণনীতি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় । এতদিন পর্যন্ত ফ্রান্স ছিল জার্মান – বিরােধী প্রতিরােধ নীতির প্রধান উদ্যোক্তা । কিন্তু অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক পরিস্থিতিতে বেসামাল হয়ে ফ্রান্স ব্রিটেনের আজ্ঞাবহ হয়ে ওঠে এবং ব্রিটেনের তােষণমূলক কর্মপন্থায় সম্মতি জানায় ।
ডেভিড থমসনের মতে ‘ ভান্তনীতির ভিত্তির ওপর তােষণনীতি প্রতিষ্ঠিত ছিল । অপরপক্ষে বলা হয় , “ চেম্বারলেন যুদ্ধ যতদিন ঠেকিয়ে রাখা যায় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থেকে শান্তি ও সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন । তােষণনীতির প্রবাহে তিনটি সুস্পষ্ট কালপর্ব লক্ষ করা যায় । ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের মার্চ থেকে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের মার্চ পর্যন্ত সময়ে প্রত্যক্ষ তােষণনীতির মাধ্যমে জার্মান সম্প্রসারণবাদকে সমর্থন করা হয়েছিল । অবশ্য ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের পর তােষণনীতির চরিত্রগত পরিবর্তন হয় এবং ব্রিটেন ও ফ্রান্স দৃঢ় এবং অনমনীয় মনােভাব গ্রহণ করতে বাধ্য হয় ।
প্রথম পর্ব প্রচ্ছন্ন তােষণনীতি : অধ্যাপক এ . জে . পি . টেলর ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ৭ ই মার্চ তারিখটিকে ‘ যুদ্ধ পরবর্তী যুগের দিকচিহ্ন হিসেবে বর্ণনা করেছেন । ভার্সাই চুক্তির শর্ত ও লােকার্নো চুক্তির অঙ্গীকার লঙ্ঘন করে হিটলার রাইন অঞ্চলে সেনা সমাবেশ করেন । যদিও ব্রিটেন ও ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে এই গহিত আচরণের বিরুদ্ধে মৃদু প্রতিবাদ জানিয়েছিল , কিন্তু জার্মানি এতে কর্ণপাত করে নি । ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে স্পেনে ক্ষমতাসীন প্রজাতান্ত্রিক সরকারকে উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীর একটি গােষ্ঠী জেনারেল ফ্রাঙ্কোর নেতৃত্বে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করলে স্পেনে এক সর্বনাশা গৃহযুদ্ধ শুরু হয় । স্পেনের গৃহযুদ্ধ একটি মহাদেশীয় সংকটে প্রসারিত হতে পারে এই যুক্তিতে ইংল্যান্ড স্পেনে হস্তক্ষেপ না করে নিরপেক্ষ থাকার সিদ্ধান্ত নেয় এবং অন্যান্য দেশগুলিকেও এই নীতি গ্রহণ করার নির্দেশ দেয় । এই গৃহযুদ্ধে ফ্রান্স প্রজাতান্ত্রিক সরকারকে সমর্থন জানাতে চাইলেও ব্রিটেনের বিরােধিতায় তাকে নিবৃত্ত থাকতে হল , অন্যদিকে , ইতালি ও জার্মানি অস্ত্রশস্ত্র , সামরিক সরঞ্জাম ও সেনাবাহিনী দিয়ে বিদ্রোহীদের সমর্থন করতে থাকে।
অবশেষে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি ফ্রাঙ্কো বাহিনীর জয় যখন সুনিশ্চিত তখন জার্মানি ও ইতালি তাদের সৈন্যবাহিনী সরিয়ে নিতে স্বীকৃত হল ; এর কয়েক মাসের মধ্যেই স্পেনের গণতান্ত্রিক সরকারের পতন হলে , ব্রিটেন ও ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্রাঙ্কো সরকারকে স্বীকার করে নেয় এবং স্পেনীয় গৃহযুদ্ধের অবসান হয় । ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের নিরপেক্ষতা নীতি স্পেনের গৃহযুদ্ধকে প্রশমিত করতে , গণতান্ত্রিক সরকারকে রক্ষা করতে এবং গৃহযুদ্ধের আগুন স্পেনের ভূখণ্ডে সীমাবদ্ধ করে রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল । ব্রিটেন ও ফ্রান্সের এই নীতি একদিকে স্পেনের প্রজাতন্ত্রের বিনাশসাধনেই সহায়ক হয় নি , ( কারণ প্রজাতান্ত্রিক সরকার সােভিয়েট রাশিয়ার সাহায্য ছাড়া অন্য বৈদেশিক সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়েছিল ।
অন্যদিকে স্পেনে ফ্যাসিবাদী ইতালি ও জার্মানির মদতপুষ্ট সামরিক প্রতিক্রিয়াশীলচক্রীর জয়লাভ সম্ভবপর করেছিল। বস্তৃতপক্ষে , ইঙ্গ – ফরাসি নিরপেক্ষতা তােষণনীতির সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছিল । অথচ ব্রিটেন ও ফ্রান্স যদি এই সময় সােভিয়েট ইউনিয়নকে পাশে নিয়ে একসঙ্গে প্রজাতান্ত্রিক সরকারের পক্ষ সমর্থন করতাে তাহলে যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংরক্ষণ ও ফ্যাসী – বিরােধী মহাজোট ( Grand Alliance ) গঠনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হত । এই সম্ভাবনা শুধুমাত্র বিনষ্ট হল না , সােভিয়েট ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সম্পর্ক ক্রমশ অবনতি দেখা দিল এবং সােভিয়েট রাশিয়াকে কূটনৈতিক নিঃসঙ্গতার দিকে ঠেলে দেওয়া হল । স্পেনের গৃহযুদ্ধের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব : স্পেনীয় গৃহযুদ্ধের গুরুত্ব কেবল যে স্পেনের ভিতরেই সীমাবদ্ধ ছিল তা নয় , আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এর বিশেষ গুরুত্ব ছিল , যেমন :
( ১ ) হিটলার ও মুসােলিনীর শক্তি বৃদ্ধি : ফ্রাঙ্কোর অধিনায়কত্বে স্পেনে একনায়কত্ব । প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হিটলার – মুসােলিনী জোটের শক্তি ও প্রভাব যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় ।
( ২ ) ফ্যাসিবাদী শক্তির জয় : স্পেনে গণতান্ত্রিক সরকারের পরাজয়ের মাধ্যমে আদর্শগত দ্বন্দ্বে উদারনীতিকে সাময়িকভাবে পশ্চাদপসরণ করতে হল , এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি জয়যুক্ত হল ।
( ৩ ) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের রুশভীতি ও ফ্যাসিষ্ট তােষণ : এই গৃহযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ব্রিটিশ ও ফরাসি সরকারের হিটলার ও মুসােলিনীকে তােষণ করবার নীতি অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে প্রকট হল।
( ৪ ) জার্মানির লাভ : স্পেনের গৃহযুদ্ধের ফলে সবচেয়ে লাভবান হল জার্মানি । ডেভিড 1 PC , ” The chief beneficiary of the War was not Mussolini , Who had helped most , but Hitler ” , কারণ , স্পেনের গৃহযুদ্ধের ফলে একদিকে যেমন ব্রিটেন , ফ্রান্স ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলির রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরাজয় ঘটলাে । অন্যদিকে স্পেনে ইতালির ব্যস্ততার সুযােগ নিয়ে হিটলার দক্ষিণ – পূর্ব ইউরােপে জার্মানির প্রভাব বিস্তারের সুবর্ণ সুযােগ পেলেন । টমসনের মতে , “ Italy had been used as Germany’s cat’s pay ” | এছাড়া এই গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে হিটলার তাঁর বিমানবাহিনীর দক্ষতা ও বিভিন্ন মারণাস্ত্রের ক্ষমতা যাচাই করে দেখার সুযােগ পেলেন । সেই অনুসারে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপযােগী অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করার দিকে মন দিলেন । এই সমস্ত বিবেচনা করলে স্পেনের গৃহযুদ্ধ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি মহড়া ( Stage rehearsal of the Second World War ) — একথা বলা হলে অত্যুক্তি হবে না ।
দ্বিতীয় পর্ব [ প্রত্যক্ষ তােষণনীতি ] : ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের মার্চে জার্মানির সঙ্গে অস্ট্রিয়ার সংযুক্তিকরণের সময় ইঙ্গ – ফরাসি মিত্রপক্ষের দুর্বলতা ও দ্বিধাগ্রস্ত মনােভাব প্রকট হয়ে উঠে । হিটলারের সম্প্রসারণবাদী পররাষ্ট্রনীতির রূপায়নের প্রথম পদক্ষেপ ছিল অস্ট্রিয়ার সংযুক্তিকরণ । আশ্চর্যের কথা এই যে , এই সময় ব্রিটেন ও ফ্রান্স অস্ট্রিয়ার ব্যাপারে সর্তকবাণী উচ্চারণ করলেও অস্ট্রিয়ার অখণ্ডতা রক্ষায় কোনও সামরিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে চায় নি । অস্ট্রিয়া দখল করার পর চেকোশ্লোভাকিয়া হিটলারের বিস্তার নীতির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হল । চেকোশ্লোভাকিয়ার সুদেতান অঞ্চলে সাড়ে তিরিশ লক্ষ জার্মান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য স্বায়ত্তশাসনের দাবি উপস্থাপিত করা হলে জার্মানির প্ররােচনায় এই আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় ।
কিন্তু ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকেই চেক্ সমস্যা সম্পর্কে ভুল ধারণা পােষণ করতেন । তাঁরা চেকোশ্লাভাকিয়ার সুদেতান অঞ্চলে জার্মান সংখ্যালঘুদের সমস্যার যুক্তি সমর্থন করে মারাত্মক ভুল করেন । সুদেতান অঞলের দাবিতে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হিটলার যখন চেকোশ্লোভাকিয়ার সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করেন তখনই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেন শান্তি সংরক্ষণের যুক্তি দেখিয়ে হিটলারের সঙ্গে মিউনিক চুক্তি ( Munich Pact ) স্বাক্ষর করেন ( সেপ্টেম্বর ১৯৩৮ খ্রিঃ ) । মিউনিক চুক্তির স্বাক্ষরকারী ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেন , ফরাসি প্রধানমন্ত্রী দালাদিয়ার , হিটলার ও ইতালির একনায়ক মুসােলিনী । হিটলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে , এরপর পশ্চিম ইউরােপে তাঁর কোন দাবি নেই । কিন্তু ( মার্চ , ১৯৩৯ খ্রিঃ ) তিনি চেকোশ্লোভাকিয়া গ্রাস করে নিতে এতটুকুদ্বিধাবােধ করলেন না । সুতরাং কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় যে , মিউনিক – চুক্তি তােষণনীতির অসারতা ও ব্যর্থতার চরম নিদর্শন ছিল । চেম্বারলেন মিউনিক চুক্তিকে সম্মানজনক শান্তি ’ ( peace with honour ) বলেছিলেন — কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল এই চুক্তি ছিল গণতন্ত্রের পক্ষে বিপর্যয়কর , অনৈতিক , অসম্মানজনক ও শান্তিবিঘ্নকারী ।
তৃতীয় পর্ব [ ততাষণনীতি থেকে বিরতি ] : ১৯৩৮ সালের পর থেকে ব্রিটিশ জনমত হিটলার তােষণনীতির ও দুর্বল বৈদেশিক নীতির বিরােধিতা শুরু করায় ১৯৩৯ সালের মার্চ মাসের পর থেকে ব্রিটিশ বৈদেশিক নীতিতে একটি পরিবর্তন দেখা দিল । ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে ব্রিটিশ সরকার পােল্যান্ডকে যে কোনাে আক্রমণের বিরুদ্ধে সাহায্য করবার চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেন । এছাড়া তাঁরা রুমানিয়া ও গ্রীসেরও নিরাপত্তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিতে আর দেরি করলেন না । অতঃপর রাশিয়ার সঙ্গে একটি অনাক্রমণ চুক্তি সম্পদানের পর ( আগস্ট , ১৯৩৯ ) পর হিটলার তাঁর পূর্ব সীমান্ত সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে দ্রুত পােল্যান্ড আক্রমণ করলেন । প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হল ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ (The direct cause of Second World War):
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তােষণনীতি জার্মানি , ইতালি ও জাপানের শক্তি বাড়ায় ও তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কমিন্টার্ন বিরােধী চুক্তি সম্পন্ন করে সমর – সজ্জা শুরু করে । এই চুক্তির সংবাদে এবং ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের দুর্বলতায় আতঙ্কিত হয়ে রাশিয়া জার্মানির সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তিতে আবদ্ধ হয় ( ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ ) । এর ফলে পূর্ব সীমান্তের দিক থেকে রাশিয়ার আক্রমণের সম্ভাবনা দূর হওয়ায় হিটলার নিশ্চিন্ত হন । তিনি দেখলেন যে ইতালি ও জাপান জার্মানির সঙ্গে মিত্রতায় আবদ্ধ ; রাশিয়া নিরপেক্ষ , জাতিসংঘ মৃতপ্রায় এবং ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স দুর্বল ।
এই অবস্থায় তার আক্রমণাত্মক কাজকর্মে বাধা আসার আর কোনও সম্ভাবনা ছিল না । তার দৃষ্টি পড়ল বাল্টিক সাগরের ডানজিগ বন্দর ও পােল্যান্ডের ওপর । তিনি ডানজিগ বন্দর ও পােলিশ করিডোের দাবি করলেন । ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেন হিটলারের মনােভাব বুঝতে পেরে ঘােষণা করলেন যে , জার্মানি পােল্যান্ড আক্রমণ করলে ব্রিটেন পােল্যান্ডকে সাহায্য করবে । চেম্বারলেনের চেষ্টায় ব্রিটেন , ফ্রান্স ও পােল্যান্ডের মধ্যে এক চুক্তি সম্পন্ন হয় । ব্রিটেন পােল্যান্ড সম্পর্কে জার্মানিকে সতর্ক করে দেয় । কিন্তু হিটলার তা অগ্রাহ্য করে পােল্যান্ড আক্রমণ করেন ( ১ লা সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ ) । এই অবস্থায় দুদিন পর ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গতিপ্রবাহ (The pace of Second World War):
( ১ ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনার ফলে বিগত দুই দশকের যুদ্ধবিরতি পর্বের অবসান ঘটে । ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ লা সেপ্টেম্বর জার্মানি পােল্যান্ড আক্রমণ করলে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের সূত্রপাত হয় । এই যুদ্ধে এক পক্ষ ছিল জার্মানি ও ইতালি । যুদ্ধ শুরু হওয়ার দুবছর পর জাপান জার্মানির পক্ষে যােগ দেয় । অপর পক্ষে ছিল ইংল্যান্ড , ফ্রান্স , আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েট রাশিয়া । মানব ইতিহাসের ভয়ংকরতম এই যুদ্ধ ইউরােপ , এশিয়া ও আফ্রিকা এই তিন মহাদেশেই চলে ছয় বছর ধরে ।
( ২ ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে সামরিক সংগঠনের ও রণনীতির দিক থেকে জার্মানি সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল । জার্মানির পােল্যান্ড আক্রমণের সময় ব্রিটেন ও ফ্রান্স মােটেই প্রস্তুত ছিল না এবং ঠিক সেই সময় সােভিয়েট ইউনিয়ন জার্মানির সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি বন্ধনে আবদ্ধ । ব্রিটেন ও ফ্রান্সের তুলনায় জার্মানির সেনা সংখ্যা কম হলেও , সমরােপকরণ ও রণনীতির দিক থেকে জার্মানি অনেক উন্নত ছিল । সেই সময় জার্মানির বিমানের সংখ্যা ছিল ১২,০০০ এবং প্রতিমাসে ১২০০ বিমান তৈরি করার ক্ষমতা জার্মানির ছিল । অন্যদিকে , মিত্রপক্ষের বিমানের সংখ্যা ছিল ৮,০০০ এবং প্রতিমাসে ৭০০ – র বেশি তৈরি করার ক্ষমতা মিত্রপক্ষের ছিল না । জার্মানির জঙ্গিবিমানের সঙ্গে জল ও স্থল বাহিনীর ঘনিষ্ঠ যােগ ছিল । আধুনিক সমরাস্ত্রের সঙ্গে সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ পরিচয় থাকার জন্য সুদক্ষ শিল্প – পরিকল্পনাও থাকা প্রয়ােজন । যুদ্ধের সূচনায় শিল্পোন্নয়নের দিক থেকে জার্মানির স্থান ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক পরেই । কিন্তু পশ্চিমী গণতন্ত্রী রাষ্ট্রগুলির যুদ্ধের কোনাে পরিকল্পনা বা প্রস্তুতি ছিল না ।
( ৩ ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনার এক বছরের মধ্যেই প্রায় সমগ্র ইউরােপে জার্মানির একচ্ছত্র প্রাধান্য স্থাপিত হয় । কিন্তু ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসে দুটি আলােড়নকারী ঘটনা এই যুদ্ধের চরিত্রের গুণগত পরিবর্তন ঘটায় । প্রথমত , ১৯৪১ সালের ২২ শে জুন জার্মান সৈন্যবাহিনী রাশিয়া আক্রমণ করলে রুশ – জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির অবসান ঘটে এবং ইংল্যান্ড , ফ্রান্স এবং রাশিয়া একসঙ্গে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে মহাজোটে আবদ্ধ হয় । অন্যদিকে ১৯৪১ সালের ৭ ই ডিসেম্বর জাপান প্রশান্ত মহাসাগরে পার্ল হারবারে মার্কিন ঘাঁটির ওপর বােমাবর্ষণ করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও জার্মানি ও জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করে ।
( ৪ ) ১৯৪৩ সাল থেকে যুদ্ধের গতিধারা অক্ষশক্তির বিপক্ষে চলে যায় । স্ট্যালিনগ্রাডের যুদ্ধে জার্মান বাহিনী রাশিয়ার কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয় । অন্যদিকে ইতালি আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় । ১৯৪৪ সালের জুন মাসে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খােলা হয় এবং মিত্রপক্ষ জার্মানীর বিরুদ্ধে প্রবল আঘাত হানে ।
১৯৪৫ সালের ৭ ই মে জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে । এরপর জাপানের উপর পরমাণু বােমা ফেলা হয় ( আগস্ট , ১৯৪৫ খ্রিঃ ) । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু বােমায় জাপানের হিরােসিমা এবং নাগাসাকি নামে দুই সমৃদ্ধ জনপদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় । এর কিছুদিনের মধ্যেই জাপান আত্মসমর্পণ করে ।
( ৫ ) দক্ষিণ – পূর্ব ইউরােপের কৃষি ও খনিজ পণ্যসামগ্রী আহরণ করে হিটলার জার্মান অর্থনীতিকে এমনভাবে পরিপুষ্ট করতে চেয়েছিলেন যে , যুদ্ধ বাধলেও তা হবে এক ক্ষণস্থায়ী , আঞ্চলিক ও একপেশে যুদ্ধ, কিন্তু জার্মানি পােল্যান্ড আক্রমণ করার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেন ও ফ্রান্স পােল্যান্ডের পাশে এসে দাঁড়াল । পােল্যান্ডকে কেন্দ্র করে যে যুদ্ধ বাধল , তা বিদ্যুৎ গতিতে সারা ইউরােপ মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ল । পরিশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিশাল সহায়সম্পদ নিয়ে মিত্রপক্ষে যােগ দিলে ( ১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রিঃ ) এক সার্বিক বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল । ছয় বছর ধরে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এই বিশাল যুদ্ধের বােঝা সামলানাে জার্মানির পক্ষে সম্ভব ছিল না । যুদ্ধের হুংকার দিয়ে হিটলার নিজেই সর্বনাশা মহাযুদ্ধের জালে আবদ্ধ হয়ে নিজের দেশের শােচনীয় পরিণতি ডেকে আনলেন । এই যুদ্ধে জার্মানি পরাজিত হল আর হিটলার স্বয়ং লােকচক্ষুর আড়ালে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন ।
আরও পডুনঃ প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ সম্পর্কে