পরিবেশে শিক্ষার বিষয়বস্তু | Scope of Environmental Studies
পরিবেশবাদী ও বিখ্যাত ভূগোলবিদ Ellen Churchill Semple (1911) তাঁর লেখা ‘Influence of Geographical Environment’ গ্রন্থে মানুষকে ‘ভূ-পৃষ্ঠের ফসল’ ও প্রকৃতির সন্তান বলে উল্লেখ করেছেন। পরিবেশবিদ্যার আলোচনায় পরিবেশে জ্ঞানের ক্ষেত্রটিকে জানতে হলে পরিবেশের পরিবর্তন এবং কী কারণে পরিবর্তন তার আলোচনা করা দরকার। এক্ষেত্রে মানুষ যেমন ভূপৃষ্ঠের ফসল বা সন্তান তেমনি তাঁরই হাত ধরে এই পরিবেশের ক্ষেত্রটি প্রসারিত হয়েছে যা আবার সম্পর্কযুক্ত— অরণ্য, কৃষিকার্য, নদীর জলপ্রবাহ, খনি, নগরায়ণ, শিল্পায়ণ, যানবাহন দূষণ, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান প্রকৃতি ক্ষেত্রে।
উপরোক্ত ওই বিষয়গুলো পরিবেশবিদ্যার ক্ষেত্রে (scope) -কে সম্বন্ধ করেছে। শিল্পক্ষেত্রে, পরিবেশ বিদ্যার এই ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা দরকার। কারণ ছাত্রাবস্থা থেকে যদি সেই বোধ বা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি না হয় তাহলে অচিরেই পরিবেশ আরও অবনমনের দিকে ধাবিত হয়।
■ (i) অরণ্য মানুষের মৌলিক চাহিদার আধার:- সভ্যতার আদিলগ্ন থেকে মানুষের মৌলিক চাহিদা – ‘খাদ্য, বস্তু, বাসস্থান’ -এর জন্য পরিবেশের উপর প্রতক্ষ্যভাবে নির্ভরশীল। সভ্যতার বিকাশ ও পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি ও বসতি বিস্তারের কালে অরণ্য সংকোচন শুরু হয় এবং সেই সঙ্গে বিপন্ন হয় পশুপাখি ও তাদের আশ্রয়স্থল, খাদ্যের উৎস উদ্ভিদজগৎ এবং বাসস্থানের ভিত্তিভূমি । এই বিপন্নতা ও পরিণাম এবং প্রতিকার সম্পর্কে ছাত্র – ছাত্রীদের অবগত হওয়া দরকার।
■ (ii) কৃষিকার্য— পরিবেশের পরিবর্তন:- পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের জীবিকার মাধ্যম হল কৃষিকার্য। কৃষিকার্যের মাধ্যমে মানুষ প্রত্যক্ষভাবে পরিবেশের পরিবর্তন আনছে। অরণ্যভূমি ধ্বংসের মাধ্যমে জমি তৈরি, সারপ্রয়োগের মাধ্যমে দূষণ সৃষ্টি, সেচখালের মাধ্যমে নদীর জলের গতির পরিবর্তন প্রভৃতি ঘটনা ঘটেছে। পৃথিবীর এই পরিবেশের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সম্পর্কে এবং তার ভালো খারাপ দিকটি শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা দরকার।
■ (iii) প্রকৃতির ‘কিডনী’ জলাভূমিতে মানুষের হস্তক্ষেপ:- পরিবেশের মধ্যে অবস্থিত জলাভূমি বর্তমানে প্রাকৃতিক বৃদ্ধ বলে পরিচিত। 1971 সালে রামসার সম্মেলনে (ইরান) পরিবেশবিদরা জলাভূমির গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্বের মানুষকে অবহিত করেছেন। গ্রামে, শহরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে জলাভূমির ভরাট, গ্রামাঞ্চলে ও পৌরঅঞ্চলের দূষণ প্রভৃতি জলাভূমির অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে। পরিবেশবিদ্যায়, জলাভূমির গুরুত্ব ও তার অস্তিত্ব রক্ষার দায়িত্ব শিক্ষক ও ছাত্রসমাজ উভয়কেই নিতে হবে।
■ (iv) নদীর জলপ্রবাহে হস্তক্ষেপ:- বর্তমানে বেশীমাত্রায় পৌর দূষিত আবর্জনা নদীর জলকে দূষিত করছে , নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ, সেতু নির্মাণ প্রভৃতির ফলে নদীর স্বাভাবিক গতি পরিবর্তিত হচ্ছে। যেমন গঙ্গা-দূষণ রোধ করতে ‘Ganga Action Plan’ 1985 সালে কেন্দ্রীয় সরকার গ্রহণ করেছে।
■ (v) খনিজসংক্রান্ত কাজকর্ম:- সভ্যতার অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে এবং শিল্পায়নের প্রয়োজনে খনি অঞ্চলের আবিষ্কার এবং খনিজ উত্তোলন পরিবেশের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। এই কাজকর্মের ফলে একদিকে যেমন অরণ্য নিধনযজ্ঞ চলেছে তেমনি হচ্ছে ভূমিক্ষয় এবং বন্যপ্রাণী হ্রাস, অপরদিকে খনিজ অঞ্চলের তরলবর্জ্য পদার্থ জলদূষণ এবং দূষিত গ্যাস বায়দূষণ ঘটাচ্ছে।
■ (vi) পৌর ও নগরায়ন:- আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত নগরায়ন ও পৌরবসতির বিস্তারের ফলে ভূমিদূষণ, জলদূষণ, শব্দদূষণ প্রভৃতি ঘটনাগুলি ঘটেছে। পৃথিবীর বড় বড় শহর ও নগর এখন আবর্জনার ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। তাই পরিবেশবিদ্যায় এই ক্ষেত্রে আলোচনা করতে হবে আত্ম উপলব্ধির উপর বিবেচনা করে।
■ (vii) নির্মাণ কার্য:- বসতি, রাস্তাঘাট নির্মাণ বহুতল নির্মাণ প্রভৃতি নির্মাণ কার্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পরিবেশকে প্রভাবিত করছে এবং পরিবেশের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।