জীবনী- বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু | Satyendranath Bose Biography in Bengali
[প্রবন্ধ সংকেত :: ভূমিকা | জন্ম ও শিক্ষা | কর্মজীবন | অন্যান্য গুণাবলী | উপসংহার]
■ ভূমিকা:- বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের পাশে যে ক’জন ভারতীয় বিজ্ঞানী নিজেদের আসন করে নিতে পেরেছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন হলেন নিরহঙ্কারী ছাত্রবৎসল সত্যেন্দ্রনাথ বসু। পরাধীন ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলো এসে পড়ার সম্ভাবনা কম ছিল। তবু তার মধ্য থেকে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা অর্জন করতে সক্ষম হলেন। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের নামের সঙ্গে একটি নাম যুক্ত হয়ে গেল, তিনি কোয়ান্টাম স্ট্যাটিটিক্সের উদ্ভাবক সত্যেন্দ্রনাথ বসু।
■ জন্ম ও শিক্ষা:- উত্তর কলকাতার ঈশ্বর মিল লেনে ১৮৯৪ সালের ১ জানুয়ারি বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী সত্যেন্দ্রনাথ বসু জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সুরেন্দ্রনাথ বসু এবং মাতা আমোদিনী দেবী। ১৯০৬ সালে হিন্দুস্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এন্ট্রাস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখানে বিশ্বখ্যাত দুই বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়কে শিক্ষক হিসাবে পেলেন সত্যেন্দ্রনাথ। ১৯১১ সালে আই.এস.সি. পরীক্ষায় প্রথম হলেন। গণিতে অনার্স নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে পাশ করলেন ১৯১৩ সালে। এম.এস.সি. পরীক্ষায়ও প্রথম শ্রেণিতে প্রথম।
■ কর্মজীবন:- স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে বিজ্ঞান কলেজে অধ্যাপক পদ গ্রহণ করেন ১৯১৫ সালে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি তাঁর গবেষণাপত্র প্রেরণ করেন বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কাছে। সঙ্গে সঙ্গে সত্যেনন্দ্রনাথ বসুর নাম বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলে ছড়িয়ে পড়ে। ‘বোস – আইনস্টাইন সংখ্যায়ন’ এর জন্য আজও তাঁর নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। ১৯৪৫ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে খয়রা অধ্যাপক হন।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার জন্য তিনি বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। জ্ঞান ও বিজ্ঞান নামে একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনের দায়িত্বও তিনি পালন করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রি দান করেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পান ‘দেশিকোত্তম’। ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ খেতাব প্রদান করেন। ১৯৮৫ সালে রয়েল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন । তিনি জাতীয় অধ্যাপক ঘোষিত হন ১৯৫৯ সালে।
■ অন্যান্য গুণাবলী:- কেবল বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সত্যেন্দ্রনাথের প্রতিভা আবদ্ধ থাকেনি। সাহিত্যে, শিল্পেও তিনি তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তিনি ‘সবুজপত্রের’ নিয়মিত লেখক ছিলেন। ভাস্কর্য শিল্পেও তাঁর দক্ষতা ছিল। এসারজ বাজিয়ে তিনি পরম আনন্দ পেতেন। বিভিন্ন ভাষায় তাঁর অসামান্য দক্ষতা ছিল।
■ উপসংহার:- বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ যেমন প্রশংসিত, তেমন মানুষ সত্যেন্দ্রনাথ সমানভাবে বন্দিত। তাঁর মতো সরল, নিরহংকারী মামুষ দুর্লভ। ছাত্রদের সঙ্গে ছিল তাঁর গভীর মমতার সম্পর্ক। নিজে কেবল বিজ্ঞানের সাধনায় মগ্ন থাকেন নি, বিজ্ঞানকে তিনি জনপ্রিয় করে তোলার জন্য নানা ব্যবস্থাও অবলম্বন করেছিলেন। ১৯৭৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঋষিকল্প এই ব্যক্তির মহান জীবনের অবসান ঘটে। ভারতবাসী হিসেবে আমরা তাকে কোটি প্রণাম জানাই।