সাঁওতাল ও কোল বিদ্রোহ The great Santal and Cole Rebellion 1831-1857 খ্রি

Santal and Cole Rebellion: The Santal Rebellion is one of the few uprisings on Indian soil. The revolt was joined by the people of the indigenous community who were exploited by the English in various ways. Who declared rebellion against the English for their necessary needs and survival. This Santal Rebellion has a special place in the history of India.

সাঁওতাল ও কোল বিদ্রোহ: (The Santal and Cole Rebellion)

ভারতের মাটিতে ঘটে যাওয়া অন্যান্য বিদ্রোহের মতো সাঁওতাল বিদ্রোহ অন্যতম। এই বিদ্রোহে যোগদান করেছিল বিভিন্ন ভাবে ইংরেজদের দ্বারা শোষিত হওয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। যারা তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা এবং বেঁচে থাকার জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। ভারতের ইতিহাসে এই সাঁওতাল বিদ্রোহ বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণঃ

সাঁওতালরা ছিল অত্যন্ত কর্মঠ ও কষ্টসহিষ্ণু উপজাতি। এদের বেশিরভাগই ছিল কৃষিজীবি। তারা রাজমহলের পার্বত্য এলাকার ‘ দামিন – ই – কোহ ’ অঞলে বসবাস করত।

( ১ ) সাঁওতালদের ধারণা ছিল যারা জমি প্রথমে চাষ করবে , জমির অধিকার তারাই পাবে। কিন্তু জমিদাররা সাঁওতালদের নানাভাবে প্রতারিত করে জমির দখল নিতে শুরু করে।

( ২ ) ইংরেজ কোম্পানি জমির ওপর খাজনা বৃদ্ধি করে। জমির খাজনা নগদ টাকায় দিতে হত। আবার সাঁওতালদের হাতে নগদ টাকাও ছিল না। ফলে তারা মহাজনদের কাছ থেকে ধার নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু একবার ধার নিলে সে ধার আর শােধ হত না। ফলে তাদের জমি ক্রমে ক্রমে মহাজনদের হাতে চলে যায়।

( ৩ ) বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা সাঁওতালদের কাছে বেশি দামে জিনিস বিক্রি করত, বিনিময়ে অল্পমূল্যে সাঁওতালদের খেতের ফসল কিনত। এছাড়াও তারা কেনাবেচার জন্য দু – রকম বাটখারা ব্যবহার করত। এভাবে ইংরেজ , জমিদার , মহাজন , ব্যবসায়ী সকলের দ্বারা সাঁওতালরা অর্থনৈতিকভাবে শােষিত হতে থাকে।

( ৪ ) এছাড়া সাঁওতাল নারীদের প্রতি অশালীন ও অসম্মানজনক ব্যবহার করা হত।

( ৫ ) তাদেরকে ধর্মান্তরিত করারও চেষ্টা করা হয়।

( ৬ ) সাঁওতালরা নিজস্ব আইনের সাহায্যে নিজেদের শাসন করত । কিন্তু ব্রিটিশরা সাঁওতালদের ব্রিটিশদের আইনের অধীনে এনে তাদেরকে আইনের সাহায্যে অনেক ক্ষয়ক্ষতি করত।

( ৭ ) নীলকর সাহেবরাও জোর করে সাঁওতালদের নীল চাষে বাধ্য করত।

( ৮ ) এছাড়া থানার দারােগা , নতুন রেললাইনের ঠিকাদাররা তাদের ওপর জোরজুলুম ও অত্যাচার করত।

উপরােক্ত কারণগুলির প্রতিকার করার জন্য শেষ পর্যন্ত সিধু ও কানুর নেতৃত্বে তারা। বিদ্রোহের পথে অগ্রসর হয়। অর্থনৈতিক শােষণ তাদের বিদ্রোহের প্রধান কারণ হলেও তারা স্বাধীনতা লাভেরও স্বপ্ন দেখত।

সাঁওতাল বিদ্রোহের গুরুত্ব বা ফলাফলঃ

( ১ ) ইংরেজবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল বিক্রমে লড়াইয়ের পর সাঁওতালরা পরাজয় বরণ করে।

( ২ ) সাঁওতাল বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এই বিদ্রোহের ফলে সরকার সাঁওতালদের জন্য একটি স্বতন্ত্র পরগণা গঠন করে যার নাম দেওয়া হয় সাঁওতাল পরগণা।

( ৩ ) সাঁওতাল পরগণায় তিন বছরের জন্য মহাজনদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।

( ৪ ) সাঁওতাল পরগণায় সাঁওতালদের নিজস্ব আইন বলবৎ হয়।

( ৫ ) সরকারি কর্মচারীদের সাঁওতালদের অভাব – অভিযােগের প্রতি লক্ষ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

( ৬ ) তবে জমির রাজস্ব হ্রাস করা হয়নি বা তাদেরকে জমির অধিকারও ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।

( ৭ ) এতসত্ত্বেও এই বিদ্রোহের মধ্যে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পদধ্বনি শােনা যায়।

( ৮ ) কালিকিঙ্কর দত্তের মতে, এই বিদ্রোহ ‘ Opened a new chapter in the history of Bengal and Bihar.

কোলবিদ্রোহের কারণঃ

কোলবিদ্রোহ নামে পরিচিত হলেও বিদ্রোহের প্রধান কারণ ছিল কৃষি নিয়ে অসন্তোষ। তারা কয়েকটি গ্রামকে একসঙ্গে নিয়ে একজন সর্দারের অধীনে চাষ – আবাদ করত। কিন্তু ইংরেজ শাসন শুরু হলে তাদের জমি থেকে কোলরা বিচ্যুত হয়ে পড়ে। এছাড়া ইংরেজদের ভূমিরাজস্বের হার বাড়ানাে তাদের ক্ষোভ ও অসন্তোষকে বৃদ্ধি করেছিল। এরই প্রতিবাদে কোলরা ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করে।

কোলবিদ্রোহের বিস্তারঃ

কোলবিদ্রোহ রাঁচি , সিংভূম , হাজারিবাগ , পালামৌ , মানভূম প্রভৃতি অঞ্চলে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছিল।

কোলবিদ্রোহের উল্লেখযােগ্য নেতাঃ

কোলবিদ্রোহের নেতাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন বুদ্বু ভগত , জোয়া ভগত , সিংরাই মাংকি , বিন্দ্রাই মাংকি , সুই মুন্ডা প্রমুখ।

কোলবিদ্রোহের ফলাফলঃ

( ১ ) ইংরেজরা সেনাবাহিনীর সাহায্যে এই বিদ্রোহ নির্মমভাবে দমন করে (১৮৩২ খ্রিস্টাব্দ )।

( ২ ) এই বিদ্রোহ দমন করা হলেও এই বিদ্রোহের প্রভাবে ইংরেজ কোম্পানি ছােটনাগপুর অঞ্চলে এক নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তােলে।

( ৩ ) এছাড়া এখানকার জমি জরিপ করার ব্যবস্থা করা হয় এবং সেইমতাে ভূমি বন্টন ও রাজস্ব ব্যবস্থা চালু করা হয়।

( ৪ ) ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার কোলদের জন্য দক্ষিণ – পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি ’ নামে একটি ভূখন্ড নির্দিষ্ট করে দেয়।

আরও পড়ুনঃ গান্ধীজির ডান্ডি অভিযান

Leave a comment