পত্র লিখনের নিয়মাবলী | Rules of Letter Writing in Bengali
■ প্রস্তাবনা:- প্রিয়জনের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান বা সংবাদ জানার বা জানানোর প্রয়োজনে ‘পত্রলিখন’ হল মুখ্য মাধ্যম। পত্রলিখন বাহ্যিক বিচারে খুব সহজ সাধ্য বিষয় নয়। পত্ররচনা করতে হলে বিশেষ কৃৎ -কৌশলের প্রয়োজন আছে। আমাদের জীবনে এমন অনেক বিষয় থাকে, যেগুলি আমরা মুখে প্রকাশ করতে পারিনা, সেইসব বিষয়গুলি পত্রলিখনের মুন্সিয়ানাতে প্রকাশ করতে পারলে, বিষয়টি অনেক সহজভাবে প্রকাশিত হয়।
রাজতন্ত্রের যুগে রাজা-বাদশারা পত্র প্রেরণের মাধ্যম হিসাবে দূত নিয়োগ করতেন। কিন্তু আধুনিক যুগে পত্র পাঠানোর মাধ্যম হল ডাকবিভাগ। এই ডাকবিভাগ প্রত্যেক পত্র প্রেরকের ও প্রাপকের দূত হিসাবে ভূমিকা পালন করে। পত্র রচনা করে আমরা যেমন আত্মীয়স্বজনের কুশল সংবাদ দেওয়া নেওয়া করি, তেমনি কোন অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ, চাকুরি বা কর্মক্ষেত্রেও সুযোগ-সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলিও পত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব। বর্তমান যুগে পত্র রচনার গুরুত্ব জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রয়োজন থাকার জন্য পত্রলিখনের নিয়ম সম্পর্কে বিশেষ ধারণা থাকা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে প্রথমেই পত্ররচনার শ্রেণী বিভাগ বিষয়টি জানা প্রয়োজন। সাধারণভাবে পত্ররচনার ধারাকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে এইভাবে—
(১) ব্যক্তিগত চিঠি।
(২) সামাজিক পত্র।
(৩) বৈষয়িক পত্রাদি।
(১) যে পত্রের বিষয় আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে একান্ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভাবের আদান প্রদান থাকবে, তাকে বলা ব্যক্তিগত চিঠি।
(২) যে পত্রের মাধ্যমে সামাজিক অনুষ্ঠানের (বিবাহ, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি) প্রসঙ্গ নির্দেশ করা হয় তাকে সামাজিক পত্র বলা হয়।
(৩) সামাজিক ও বৈষয়িক জীবনের প্রয়োজনে লেখা পত্রগুলিকে বৈষয়িক পত্র রূপে গণ্য করা হয়। এই শ্রেণীর পত্রের পর্যায়ে লেখা পত্রগুলি হল আবেদন পত্র বা সোজা কথায় যাকে আমরা বলে থাকি দরখাস্ত।
উপরোক্ত তিনটি বিষয়ের বাইরে ‘বিষয়ী প্রধান পত্র সাহিত্য’ নামে আর এক শ্রেণীর পত্র রচনার প্রচলন আছে। প্রবাসে বসবাস করে কোনো একান্ত আপনজনকে সাহিত্য সুষমা মণ্ডিত যে চিঠিতে প্রেরক ও প্রাপকের একান্ত ভাবের বিষয় সাহিত্য ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে এবং সেই পত্র সাধারণের সম্পদ রূপে গণ্য হওয়ার দাবি রাখে —তখন সেই পত্রগুলি হয়ে ওঠে পত্রসাহিত্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এমনই পত্রসাহিত্য হল— ‘ছিন্নপত্র’। তিনি তাঁর ভাইঝিকে যে পত্রগুলি লিখেছিলেন, ব্যক্তি সীমা অতিক্রম করে কাব্যিক মহিমায় তাঁর অন্তমানসের উন্মোচন ঘটে সংবেদনশীল পাঠকের হৃদয়ে অনির্বচনীয় রসের সন্ধান দিয়েছে। পত্রের ভাষা ও রীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে-
(১) সহজ সরল প্রাগুল ভাষায় পত্র রচনার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
(২) আড়ম্বর বর্জিত সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্ট পত্রে অবশ্যই ছোট ছোট বাক্যে রচনা করতে হবে এবং একই বাক্য একাধিকবার ব্যবহার করা চলবে না।
(৩) পত্রের মধ্যে সঠিকভাবে ছেদ, যতি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে নির্ভুল বানানের প্রতিও নজর দিতে হবে।
(৪) পত্রের ভাব অনুযায়ী যথাযথ অনুচ্ছেদ ব্যবহারের পাশাপাশি সঠিক মার্জিনযুক্ত ও সুবিন্যস্ত হওয়া উচিত।
(৫) ব্যক্তিগত পত্র ছাড়া অনান্য পত্রগুলিতে ব্যক্তিগত আবেগ উচ্ছ্বাসকে সম্পূর্ণভাবে বর্জন করতে হবে। নিম্নে নানাধরনের লেখা নমুনা পত্রগুলিকে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে যে, কোন ধরনের পত্রে কি কি রীতি অনুসৃত করা হয়েছে। এগুলি মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলেই পত্রের গঠন সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যাবে।