ব্যাকরণ সাহিত্যে কাত্যায়নের ভূমিকা | Role of Qatani in Grammar Literature

ব্যাকরণ সাহিত্যে কাত্যায়নের ভূমিকা | Role of Qatani in Grammar Literature

■ কাত্যায়ন পাণিনি ব্যাকরণ আরও পরিমার্জিত রূপ পরিগ্রহ করে কাত্যায়নের হাতে। যে সকল পদ পাণিনির সময়ে ছিল অব্যবহৃত বা অল্পব্যবহৃত, কাত্যায়নের সময় সেই পদগুলি কথ্য ও লেখ্য ভাষায় বহুল প্রচলিত হয়েছিল। আবার পাণিনির সময়ে ব্যবহৃত পদগুলি কাত্যায়নের সময় অপ্রচলিত হয়ে পড়ল। তখনই পাণিনির দ্বারা পরিত্যক্ত পদসমূহের সাধুত্ব বিধানের প্রয়োজন অনুভূত হল।

এমনই এক প্রেক্ষাপটে আবির্ভূত হলেন ব্যাকরণচার্য্য কাত্যায়ন। কথাসরিৎসাগর প্রভৃতি গ্রন্থে কাত্যায়নকে পাণিনির সহাধ্যায়ী ও সমকালীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের মনে হয়, দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত কথাসরিৎসাগরে উল্লিখিত বৃত্তান্তের ঐতিহাসিকত্ব সর্বাংশে নিঃসন্ধিগ্ধ নয়।

কাত্যায়ন পাণিনির সমসাময়িক হলে তিনি স্বতন্ত্র ব্যাকরণ রচনা করতেন , পাণিনি – সূত্রের বার্তিক রচনা করতেন না। সম্ভবতঃ পাণিনি ব্যাকরণের সর্বাতিশায়ী প্রভাবের কালে কাত্যায়নের আবির্ভাব।

সে সময় আলাদা ব্যাকরণ রচনা করলে তা পাণিনির অষ্টাধ্যায়ীর প্রখর দীপ্তিতে ম্লান হয়ে পড়ত। তাই কাত্যায়ন পাণিনীয় সূত্রের সংস্কার সাধনে ব্রতী হন। তিনি পাণিনির সূত্রের উপর প্রায় চার হাজার বার্তিক রচনা করেন। গ্রন্থের নাম ‘বার্তিক’। গ্রন্থটি সূত্রাকারে রচিত। পাণিনি যে অর্থে যে শব্দের প্রয়োগ দেখে সূত্র প্রণয়ন করেছিলেন, বার্তিককার কাত্যায়নের সময় সেই শব্দ ভিন্নার্থে ব্যবহৃত হতে শুরু করেছিল। শব্দার্থের এই পরিবর্তন দেখে কাত্যায়ন অনেক স্থলে সূত্রের অপ্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে বার্তিক রচনা করেন। তিনি সূত্রকারের অপকর্ষ, অনবধানতা প্রভৃতি সংশোধন করেছেন; প্রয়োজনবোধে পাণিনির সূত্রকে পরিপূর্ণতা দান করে তার পরিধিকে বিস্তৃত করেছেন। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে পাণিনির সূত্রদ্বারা যে শব্দের যে রূপ সিদ্ধ হতে পারত, কাত্যায়ন সেই রূপেরও পরিবর্তন করেছেন। কাত্যায়নের এই সংস্কারকের ভূমিকা সম্পর্কে অধ্যাপক কীথ যথার্থই বলেছেন—

“Kātyāyana was not a captious critic of Panini; he was not the first to call in question his rules, what he did was to examine criticisms, rejecting some, accepting others, and therefore supplimenting and limiting Panini’s rules.”

“বার্তিককার কাত্যায়ন যে পাণিনির পরবর্তী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্ভবতঃ পাণিনির দু’শত বছর পরে কাত্যায়নের আবির্ভাব। তিনি দাক্ষিণাত্যের অধিবাসী ছিলেন। অনেকে মনে করেন যে ‘লিঙ্গানুশাসন’ এবং ‘পুষ্পসূত্রের’ রচয়িতা বররুচিরই অপর নাম কাত্যায়ন। এই মতটিও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়।