প্রবন্ধ রচনা- জনমত গঠনে গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা | Role of Media in Shaping Public Opinion

জনমত গঠনে গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা | Role of Media in Shaping Public Opinion

[প্রবন্ধ – সংকেত:: ভূমিকা / গণমাধ্যম কি? | কীভাবে তারা জনমত গঠন করে | গণমাধ্যমগুলির প্রচারের সু-ফল | কু-ফল -উপসংহার]

ভূমিকা / গণমাধ্যম কি?:- জীবিকা সন্ধান, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রয়োগবিদ্যা, দেশ ও জাতির উন্নতি, বিশ্ব-পরিস্থিতি প্রভৃতি জনগণকে মানবিক শিক্ষা ও শুভবুদ্ধি জাগরণ করে যে সব শিক্ষামূলক মাধ্যম সেগুলি গণমাধ্যম রূপে চিহ্নিত। মেলা, কীর্তন, কবিগান, তরজা, খেউড়, পুতুলনাচ, যাত্রা, থিয়েটার, সংবাদপত্র, রেডিও, দূরদর্শন, চলচ্চিত্র প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য গণমাধ্যম।

কীভাবে তারা জনমত গঠন করে:- উৎসব ও মেলায় মানুষ মিলিত হয়। একটা মানুষের সঙ্গে আর একটা মানুষের পরিচয় ঘটে, আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, ভাবের আদানপ্রদান হয়। এক অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা, রীতি-নীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য অঞ্চলের মানুষ পরিচিত হয়। ভাগবত, পুরাণ প্রভৃতি শাস্ত্রীয় জ্ঞান, আধ্যাত্মিক চেতনা, প্রেম ও ভক্তির ভাব জাগাতে কীর্তন বিশেষ সহায়ক মাধ্যম, তরজা শাস্ত্রীয় জ্ঞানের উন্মেষ ঘটায়, ঐতিহাসিক, সামাজিক ও কাল্পনিক কাহিনীর রস আস্বাদনের সঙ্গে জটিল সমস্যা ও তার সমাধানের উপায় খুঁজে পাওয়া যায়। ফলে জনমত গড়ে ওঠে।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নাগরিকের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ন্যস্ত। তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করে আর নির্বাচিত প্রতিনিধি কর্তৃক গঠিত সরকার দেশ শাসন করে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এজন্যই নাগরিকের রাজনৈতিক শিক্ষা ও সচেতনতা অপরিহার্য। সরকারী নীতি ও গৃহীত ব্যবস্থাদি বিষয়ে জনমত গঠন ও একান্ত দরকার। এই জনমত গঠনের অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যমগুলি হল সংবাদপত্র, বেতার, দূরদর্শন ও চলচ্চিত্র। সংবাদাপত্রে বেতার ও দূরদর্শনে সরকারী নীতি ও অনুসৃত ব্যবস্থাদি বিষয়ে খবর পরিবেশিত হয়। তার পক্ষে ও বিপক্ষে সমালোচনামূলক বিভিন্ন অভিমত মুদ্রিত হয় । বহু জনগণের মতামত সম্বলিত চিঠি পত্রাদি পাঠ ও ছাপানো হয়। তথ্য সমৃদ্ধ সমালোচনামূলক নানা মতামত জনগণ জেনে একটা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে, আর এভাবে টি.ভি., রেডিও, সংবাদপত্র জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।

গণমাধ্যমগুলি প্রচারে সুফল:- গণমাধ্যমগুলো প্রচারে জনগণের বিচার ক্ষমতা যথাযথ প্রয়োগ হয়। গণমাধ্যম বর্তমান সভ্যতার অপরিহার্য অঙ্গ কারণ জনগণের পবিত্রতা কোন কারণে কলুষিত হলে গণমাধ্যমগুলো নির্ভীক কণ্ঠে সোচ্চার হয়ে ওঠে। মানবতার শত্রুদের তৎক্ষণাৎ বিদ্ধ করে জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করে। অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় জনগণের জয় হয় গণতন্ত্রের। এছাড়াও প্রাকৃতিক বিপর্যয় যখন মানব ভাগ্যে দুর্দিন ঘনিয়ে তোলে তখন টি.ভি., রেডিও, খবরের কাগজ সেই দুঃসংবাদ গণদুয়ারে পৌঁছে দেয়, ত্রাণকার্যকে করে ত্বরান্বিত। পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয় সকল সংবাদ। বিশ্বের রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধূলা, আমোদ প্রমোদ সকল ক্ষেত্রে তার অবাধ পদসঞ্জার, শিক্ষার মাধ্যমরূপেও গণমাধ্যম সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে।

কু-ফল:- গণমাধ্যমগুলির প্রয়োজনীয় ভূমিকা কিন্তু সদাসর্বদা গৌরবোজ্জ্বল নয় এবং সংকট মুক্তও নয়। সংকটের নানা গ্রাসে কবলিত হয়ে মাঝে মাঝে তাদের পবিত্র দায়িত্ব বহনে অসমর্থ হয়ে পড়ে। বলাবাহুল্য গণমাধ্যমগুলি আজকাল একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমগুলি ধনিকসমাজের কুক্ষিগত হয়ে উঠেছে। ক্ষমতা রূঢ় শক্তিশালী শাসকগোষ্ঠীর মনোরজুনের আত্মনিয়োগের ফলে শাসকগোষ্ঠীর জনস্বার্থবিরোধী কার্যাবলী সমর্থিত হয় এবং পবিত্র জনস্বার্থ নির্মমভাবে পদদলিত হয়। অনেক সময় খবরের কাগজে, দূরদর্শনে এমন কুরুচিকর বিজ্ঞাপন ও খবর পরিবেশিত হয় যাতে মানব সভ্যতা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উপসংহার:- শহরের ছেলেমেয়েরা গ্রামের চেয়ে অধিকতর অগ্রসর, চালচলনে এগিয়ে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে চলচ্চিত্র, থিয়েটার, সংবাদপত্র প্রভৃতি মাধ্যমগুলি শুধু জ্ঞানের সহায়তা করে না সভ্যতায় পরিপূর্ণতা আনে। সেই তুলনায় অত্যাধুনিক মাধ্যমে সুযোগের অভাবে গ্রামের মানুষ পিছিয়ে পড়ছে, চলমান জীবনযাত্রা থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। সেই অবলুব্ধ গ্রামীণ মাধ্যমের পুনর্জন্ম ও আধুনিক মাধ্যমগুলির বহুল প্রচারের দিকে নজর দিলে গ্রাম ও শহর জীবনের শিক্ষা, মতামত প্রকাশে সমতা আসতে পারে।