Rivers of Asia

এশিয়া মহাদেশের নদ-নদী (Rivers of Asia) :

মধ্যভাগের উঁচু পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে ভূমির ঢাল অনুসারে উত্তরে , পূর্বে ও দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে । দক্ষিণের নীচু মালভূমি থেকে বহু নদী উৎপন্ন হলেও এগুলির দৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত ছােটো । এশিয়ার নদ নদীগুলির মধ্যে অনেকগুলিই যুগ্ম ও বেশ কয়েকটি অন্তর্বাহিনী নদী । প্রবাহপথ অনুযায়ী এশিয়ার নদ – নদীগুলিকে চারভাগে ভাগ করা যায় — উত্তরবাহিনী নদী , পূর্ববাহিনী নদী , দক্ষিণবাহিনী নদী ও অন্তর্বাহিনী নদী ।

উত্তরবাহিনী নদী : মধ্যএশিয়ার পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে বেশ কয়েকটি নদী উত্তরদিকে প্রবাহিত হয়ে সুমেরু মহাসাগরে মিশেছে ।

বৈশিষ্ট্য :

[ i ] উত্তরবাহিনী নদীগুলিতে বছরে অন্তত দুবার বন্যা হয় । কারণ — হিমমণ্ডলে অবস্থিত বলে নদীগুলির মােহনা প্রায় ৪ 9 মাস বরফে ঢাকা থাকে । ফলে শরৎকালে বৃষ্টির জল যেমন নিষ্কাশিত হতে পারে না , তেমনই বসন্তকালে বরফগলা জল নদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে তা সহজে নিষ্কাশিত হতে পারে না । ফলে নদীগুলির তীরবর্তী অঞ্চলে শরৎকালে ও বসন্তকালে বন্যা হয় ও জলাভূমির সৃষ্টি হতে দেখা যায় । [ ii ] বছরে বেশিরভাগ সময় বরফে ঢাকা থাকার জন্য এই নদীগুলি ব্যাবসা – বাণিজ্য ও যাতায়াতের পক্ষে উপযােগী নয় ।

উল্লেখযােগ্য উত্তরবাহিনী নদী : ( ক ) ওব নদী [ 4,344 km ] : আলতাই পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে ওব নদী উত্তরদিকে প্রবাহিত হয়ে ওব সাগরে মিলিত হয়েছে । এর প্রধান উপনদী । ইরতিশ । ( খ ) ইনিসি নদী [ 5,280 km ] সায়ান পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে ইনিসি নদী ( এশিয়ার দ্বিতীয় এবং পৃথিবীর পঞম দীর্ঘতম ) উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে ইনিসি উপসাগরে মিলিত হয়েছে । এর প্রধান উপনদী হল তুনগুষ্কা । ( গ ) লেনা [ 4,818 km ] : বৈকাল হ্রদের নিকটবর্তী বৈকাল পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে লেনা নদী উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে লাপতে সাগরে মিলিত হয়েছে । এর প্রধান দুটি উপনদী হল ভিত্তিম ও আলদান । ( ঘ ) এছাড়া ইয়েনা , ইন্দিগির্জা , কোলায়মা প্রভৃতি অন্যান্য উত্তরবাহিনী নদী ।

পূর্ববাহিনী নদী : এশিয়ার মধ্যভাগের পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে বেশ কয়েকটি নদী পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে প্রশান্ত মহাসাগর ও সন্নিহিত বিভিন্ন সাগর উপসাগরে মিলিত হয়েছে ।এইসব নদীগুলি হল— ( ক ) আমুর নদী [ 4,023 km ] : ইয়াক্লোনয় পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে আমুর নদী রাশিয়া ও চিনের সীমানা বরাবর পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে ওখােট সাগরের সংকীর্ণ তাতার প্রণালীতে মিলিত হয়েছে । এর প্রধান উপনদীগুলি হল শিক্ষা , আরগুন , সুনগারি , উসুরি প্রভৃতি ।

( খ ) হােয়াং হাে [ 4.183 km , হাে = নদী ) : কুনলুন পর্বতের জরিন নাের ও নরিন নাের ( নাের = হ্রদ ) থেকে উৎপন্ন হয়ে হােয়াং হাে প্রথমে পূর্বদিকে এবং পরে উত্তর – পূর্ব দিকে চুলের কাটার মতাে বেঁকে মঙ্গোলিয়া ও লােয়েশ মালভূমির ওপর দিয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়ে সানুটুং উপদ্বীপের নিকট পােহাই উপসাগরে মিলিত হয়েছে । এই নদীকে পীত নদীও বলা হয় । এর প্রধান উপনদীগুলি হল ওয়েই হাে , ফেন হাে প্রভৃতি ।

( গ ) ইয়াংসি কিয়াং [ 5,520 km , কিয়াং = নদী ] : ইয়াংসি কিয়াং বা চাং জিয়াং এশিয়ার দীর্ঘতম নদী । তিব্বত মালভূমির থাংগুলা পর্বতের গেলাড়ানডং শৃঙ্গের দক্ষিণ – পশ্চিম ঢালের একটি হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রথমে দক্ষিণ – পূর্বে ও পরে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে পূর্ব চিনসাগরে মিলিত হয়েছে । এর প্রধান উপনদীগুলি হল হ্যান কিয়াং , টুং কিয়াং , যুয়েন কিয়াং প্রভৃতি । ( ঘ ) সি কিয়াং [ 1900 km ) : ইউনান মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে সি কিয়াং পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েকয়েকটি নদী দক্ষিণ ও দক্ষিণ – পূর্বে প্রবাহিত হয়ে ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে মিলিত হয়েছে।এইসব নদীর অধিকাংশ তুষারগলা জল ও মৌসুমি বৃষ্টির জলে পুষ্ট ।

উল্লেখযােগ্য ই নদীগুলি হল— ( ক ) মেকং নদী [ 4,180 km ] : তিব্বত মালভূমির দাংকু – লা থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ – পূর্ব দিকে থাইল্যান্ডের পূর্বে সীমা বরাবর প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ চিনসাগরে মিলিত হয়েছে । ( খ ) মেনাম নদী [ 365 km ] : শান মালভূমির নিকট থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী থাইল্যান্ডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শ্যাম উপসাগরে মিলিত হয়েছে । এর অপর নাম চাউপ্রায় । ( গ ) ইরাওয়াদি নদী (2,720 km ) : ইউনান মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে মায়ানমারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই নদী মার্তাবান উপসাগরে মিলিত হয়েছে । এর প্রধান উপনদী চিল্লুইন ।( ঘ ) সালউইন নদী : ইউনান মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে মায়ানমারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই নদী মার্তাবান উপসাগরে মিলিত হয়েছে ।

( ঙ ) ব্রক্ষ্মপুত্র নদ [ 2,900 km ] : তিব্বত মালভূমির মানস সরােবরের নিকট চেমায়ুং দুং হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে চিনের ওপর দিয়ে সাংপাে , ভারতের ওপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র এবং বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যমুনা নামে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । এর প্রধান উপনদীগুলি হল দিবং , লুহিত , মানস , সঙ্কোশ , তিস্তা প্রভৃতি । ( চ ) গঙ্গা নদী [ 2,510 km ] : হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন ভাগীরথী ; অলকাপুরী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন অলকানন্দা এবং ঘােড়াবাড়ি হিমবাহ থেকে উৎপন্ন মন্দাকিনীর মিলিত স্রোতধারা গঙ্গা নামে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । এর দুটি প্রধান শাখা হল পদ্মাও ভাগীরথী । গােমতী , ঘর্ঘরা , গণ্ডক , যমুনা , শােন এর প্রধান উপনদী ।

( ছ ) সিন্ধু নদ [ 2,900 km ] : তিব্বত মালভূমির মানস সরােবরের নিকট থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই নদ আরব সাগরে মিলিত হয়েছে। এর প্রধান উপনদীগুলি হল বিতস্তা , চন্দ্রভাগা , ইরাবতী , শতদ্রু ও বিপাশা । ( জ ) শত – অল – আরব, [5,463 km ] : আর্মেনীয় মালভূমির কুর্দিস্তান পর্বতের একটি হ্রদ থেকে উৎপন্ন টাইগ্রিস ( আরবি নাম শত দজলা —1890 km ] এবং ইউফ্রেটিস ( তুর্কি নাম ফিরাৎ 3,573 km ] পাশাপাশি প্রবাহিত হয়ে ইরানে পরস্পর মিলিত হয়েছে এবং শত – অল – আরব ( আরবি শব্দ ‘ শত ’ = নদী , লবণ হ্রদ , জলাভূমি ) নামে পারস্য উপসাগরে মিশেছে ।

অন্তর্বাহিনী নদী : এশিয়া মহাদেশের উল্লেখযােগ্য অন্তর্বাহিনী নদীগুলি হল— ( ক ) উরাল নদী [ 2,520 km ] : উরাল পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে এশিয়া ও ইউরােপের সীমানা বরাবর দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে উরাল নদী কাস্পিয়ান সাগরে মিলিত হয়েছে । ( খ ) আমু দরিয়া [ 2,525 km ] : হিন্দুকুশ পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী উত্তর – পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে আরল সাগরে মিলিত হয়েছে । ( গ ) সির দরিয়া [ 2,420 km , ফারসি শব্দ দরিয়া = নদী ) : তিয়েন শান থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী উত্তর – পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে আর সাগরে মিলিত হয়েছে ।

( ঘ ) হেলমন্দ নদী ( 1,400 km ] : হিন্দুকুশ পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ – পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে হামুন – এ – হেলমন্দ – এ ( ফারসি শব্দ হামুন = হ্রদ ) মিলিত হয়েছে । ( ৬ ) তারিম নদী ( 2,700 km ] : তিব্বত মালভূমির শিনজিয়ার – উইগুর থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে লােপ নাের – এ মিলিত হয়েছে । ( চ ) জর্ডন নদী { 320 km ] ; লেবাননের উঁচুভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী মরুসাগর – এ মিলিত হয়েছে । । অন্যান্য নদী : এশিয়া মহাদেশে আরও অসংখ্য ছােটো ও মাঝারি দৈর্ঘ্যের নদী আছে । ভারতের গােদাবরী , কৃয়া , কাবেরী প্রভৃতি নদী পূর্ববাহিনী এবং নর্মদা , তাপী প্রভৃতি নদী

আরও পডুনঃ নীলনদ অববাহিকা সম্পর্কে

Leave a comment