রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী | Rabindranath Tagore Biography in Bengali
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচিতি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা ছিলেন জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতা ছিলেন সারদাসুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ছিল ব্রাহ্ম আদিধর্ম মতবাদের প্রবক্তা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাঙ্গালী কবি, নাট্যকার, গল্পকার, চিত্রকর, অভিনেতা, দার্শনিক, অভিনেতা, ছোটো গল্পকার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে কবিগুরু, বিশ্বকবি বিভিন্ন নামে ভূষিত করা হয়। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলেন সকল দেশের সকল কালের এবং সকল মানবের তীর্থভূমি।
নাম ➤ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জন্ম ➤ ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ / ইং- ৭ই মে ১৮৬১,
স্থান ➤ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কোলকাতা (7th May 1861, Jorasanko Thakurbari, Kolkata)
পিতা ➤ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
মাতা ➤ সারদাসুন্দরী দেবী
ছদ্দনাম ➤ ভানুসিংহ (Vanusingh)
দাম্পত্যসঙ্গী ➤ মৃণালিনী দেবী
মৃত্যু ➤২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ / ইং- ৭ই আগস্ট ১৯৪১ (7th August, 1941)
মৃত্যু স্থান ➤ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কোলকাতা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী | Rabindranath Tagore Biography in Bengali
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচিতি
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম পরিচয়
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা-মাতার পরিচয়
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈশবকাল
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাজীবন
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাল্যজীবনের রচনাবলী
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মজীবন
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিবাহজীবন
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষজীবন
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভ্রমণ
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম
- ❏ শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাবলী
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটো গল্প
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস
- ❏ নাট্য সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃতিত্ব
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক দর্শন
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামাঙ্কিত স্মারক ও দ্রষ্টব্যস্থল
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাপ্ত পুরষ্কার সমূহ
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুকাল
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম পরিচয়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবির্ভাব হয়েছিলাে ১৮৬১ খ্রি : ৭ ই মে বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫ শে বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর এক অভিজাত ব্রাহ্মন (ঠাকুর) পরিবারে। উনিশ শতকের সাহিত্য – সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিলাে এই ঠাকুর পরিবার।
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা-মাতার পরিচয়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাতার নাম সারদা দেবী, তিনি ছিলেন একজন স্নেহময়ী মহিলা। রবীন্দ্রনাথের পিতামহের নাম প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। তিনি একজন বিত্তশালী জমিদার ও জনহিতৈষী ছিলেন। ঠাকুর পরিবারের শিক্ষা – দীক্ষা, মার্জিত সাংস্কৃতিক চেতনা ও পিতার আলােকিত ধর্মবিশ্বাস কবির মধ্যে মূর্ত হয়ে উঠেছিলাে।
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈশবকাল
শিশুকাল থেকেই অন্যান্য সন্তানদের মতাে রবীন্দ্রনাথ অভিজ্ঞ পরিচারকদের দ্বারা লালিত – পালিত হন। একজন জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা এবং কয়েকজন গৃহশিক্ষকের কাছে তার প্রাথমিক বিদ্যালাভ শুরু হয়। বিভিন্ন স্কুলেও পড়েন কিছুদিন। কিন্তু স্কুলের বাঁধাধরা নিয়ম ও আবহাওয়া তার মনঃপুত না হওয়ায় বাড়িতেই পড়াশুনার ব্যবস্থা করা হয়। বাড়িতেই বিশ্ববিদ্যার সকল দুয়ার তার সম্মুখে উন্মুক্ত হয়ে গেল।
শৈশবে রবীন্দ্রনাথ কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন করে পড়াশোনা করেছিলেন।কিন্তু বিদ্যালয়-শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন রবীন্দ্রনাথ।
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাজীবন
১৮৭৩ সালে এগারো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের উপনয়ন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর তিনি কয়েক মাসের জন্য পিতার সঙ্গে দেশভ্রমণে বের হন। প্রথমে তারা আসেন শান্তিনিকেতনে। এরপর পাঞ্জাবের অমৃতসরে কিছুকাল কাটিয়ে শিখদের উপাসনা পদ্ধতি পরিদর্শন করেন। শেষে পুত্রকে নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ যান পাঞ্জাবেরই ডালহৌসি শৈলশহরের নিকট বক্রোটায়।
এখানকার বক্রোটা বাংলোয় বসে রবীন্দ্রনাথ পিতার কাছ থেকে সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতে শুরু করেন। অল্প বয়স থেকেই রবীন্দ্রনাথের কবিপ্রতিভার উন্মেষ হয়। কিশাের কাল থেকেই শুরু করলেন নিরবচ্ছিন্ন কাব্যচর্চা। মাত্র তেরাে বছর বয়সেই তার প্রথম কবিতা ছাপা হয় তত্ত্ববােধিনী পত্রিকায়।
আরও পড়ুন:- মহাত্মা গান্ধীর সম্পূর্ণ জীবনী
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাল্যজীবনের রচনাবলী
১৮৭৮ খ্রীষ্টাব্দে তার প্রথম বই ‘কবিকাহিনী’ প্রকাশিত হয়। তারপর একে একে প্রকাশিত হতে থাকে সন্ধ্যাসঙ্গীত, প্রভাত সঙ্গীত, ছবি ও গান, কড়ি ও কোমল, মানসী, সােনার তরী কাব্যসমূহ।
১৯১২ সালে গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় লন্ডনের ইন্ডিয়া সােসাইটি থেকে। সঙ্গে সঙ্গে প্রতীচ্যের বিদগ্ধ সমাজে সাড়া পড়ে যায়। আইরিশ কবি ডব্লিউ.বি.ইয়েস ইংরেজি গীতাঞ্জলির ভূমিকা লেখেন।
১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশরাজ কবিগুরুকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯১৯ খ্রীঃ জালিওয়ালাবাগে নিরস্ত্র ভারতীয়দের ব্রিটিশ সৈন্যরা নির্মমভাবে হত্যা করলে তার প্রতিবাদে তিনি ঐ উপাধি। পরিত্যাগ করেন।
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মজীবন
ভারতী পত্রিকায় ১৮৭৭ সালে, মাত্র ১৬ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশ করেন। সেগুলো ছিলো ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী, মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা আর ভিখারিণী ও করুণা নামে দুটো সুন্দর ছোটগল্প। এগুলোর মধ্যে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পায়।
এরপর ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ “কবিকাহিনী”। এছাড়াও পরে তিনি রচনা করেছিলেন “সন্ধ্যাসংগীত” নামক আরেকটি কাব্যগ্রন্থ। “নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ” নামে লেখা তাঁর সেই বিখ্যাত কবিতা এই কাব্যগ্রন্থেরই অন্তর্গত ছিলো।
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিবাহজীবন
ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আশার পর, অবশেষে ১৮৮৩ সালে ৯ই ডিসেম্বর তারিখে রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হয় বেণীমাধব রায়চৌধুরী নামে ঠাকুরবাড়ির এক অধস্তন কর্মচারীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে । বিয়ের সময় ভবতারিণীর পুণরায় নামকরণ করা হয় এবং তাঁর নাম পাল্টে রাখা হয় মৃণালিনী দেবী।
পরবর্তীকালে, মৃণালিনী দেবী ও রবীন্দ্রনাথের মোট পাঁচ সন্তান হয় । তাঁদের নাম যথাক্রমে ছিলো- মাধুরীলতা (১৮৮৬–১৯১৮), রথীন্দ্রনাথ (১৮৮৮–১৯৬১), রেণুকা (১৮৯১–১৯০৩), মীরা (১৮৯৪–১৯৬৯) এবং শমীন্দ্রনাথ (১৮৯৬–১৯০৭)।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এঁদের মধ্যে অতি অল্প বয়সেই রেণুকা ও শমীন্দ্রনাথ মারা যায়।
১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ তার গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার নােবেল পুরস্কার লাভ করেন । তিনিই নােবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রথম ভারতীয় এবং প্রথম এশিয়াবাসী।
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষজীবন
জীবনের শেষ চার বছর ছিল তার ধারাবাহিক শারীরিক অসুস্থতার সময়। এই সময়ের মধ্যে দুইবার অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল তাকে। ১৯৩৭ সালে একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থা হয়েছিল কবির। সেবার সেরে উঠলেও ১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর আর তিনি সেরে উঠতে পারেননি। এই সময়পর্বে রচিত রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলি ছিল মৃত্যুচেতনাকে কেন্দ্র করে সৃজিত কিছু অবিস্মরণীয় পংক্তিমালা। মৃত্যুর সাত দিন আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালে জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৪১ খ্রীষ্টাব্দের ৭ ই আগষ্ট বিশ্বকবি মহামনীষী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতা , জোড়াসাঁকোয় মহাপ্রয়াণে যাত্রা করেন । ২৫ শে বৈশাখের সূর্য (রবি) ২২ শে শ্রাবণের সন্ধ্যায় অস্ত যায়।
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভ্রমণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট বারো বার বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন।১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে তিনি পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন।
রবীন্দ্রনাথ যেসকল বইতে তার বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাগুলি লিপিবদ্ধ করে রাখেন সেগুলি হল: য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র (১৮৮১), য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি (১৮৯১, ১৮৯৩), জাপান-যাত্রী (১৯১৯), যাত্রী (পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি ও জাভা-যাত্রীর পত্র, ১৯২৯), রাশিয়ার চিঠি (১৯৩১), পারস্যে (১৯৩৬) ও পথের সঞ্চয় (১৯৩৯)।
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মূলত এক কবি। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কাব্যরচনা শুরু করেন। তার প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫২। তবে বাঙালি সমাজে তার জনপ্রিয়তা প্রধানত সংগীতস্রষ্টা হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ প্রায় দুই হাজার গান লিখেছিলেন। কবিতা ও গান ছাড়াও তিনি ১৩টি উপন্যাস, ৯৫টি ছোটগল্প, ৩৬টি প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ এবং ৩৮টি নাটক রচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সমগ্র রচনা রবীন্দ্র রচনাবলী নামে ৩২ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রবর্তিত নৃত্যশৈলী “রবীন্দ্রনৃত্য” নামে পরিচিত।
❏ শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক বছর আগে বোলপুরের শান্তিনিকেতনে, এক বিশাল জমি কেনেন। সেখানে তিনি ১৮৮৮ সালে একটা আশ্রম ও ১৮৯১ সালে একটা ব্রহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
বাবার সেই কেনা জমিতে রবীন্দ্রনাথ একটা শিক্ষাকেন্দ্র তৈরী করতে চেয়েছিলেন । তাই প্রথমে তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন “পাঠ্য ভবন” নামে একটা স্কুল, যেটা বাকি সব স্কুলের থেকে বেশ আলাদা ছিলো। কারণ সেই স্কুল ছিলো সম্পূর্ণ খোলা আকাশের নীচে একটা গাছের তলায়।
পরে ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি সেই স্কুলকে আরো বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যে সেটাকে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেন। যেটার পরবর্তীকালে নাম রাখেন তিনি “বিশ্বভারতী” যা ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সমাজের পিছিয়ে পরা মানুষদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে তিনি আবার ১৯২৪ সালে আরেকটি শিক্ষাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করেন যেটা ছিলো “শিক্ষা সত্র”। তিনি এই প্রতিষ্ঠান মাত্র ৭ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে শুরু করেছিলেন।
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাবলী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিক কবিতা লিখেছেন।তার মধ্যে রয়েছে ১৮৯০ সালে প্রকাশিত মানসী, সোনার তরী (১৮৯৪), চিত্রা (১৮৯৬), চৈতালি (১৮৯৬), কল্পনা (১৯০০) ও ক্ষণিকা (১৯০০) কাব্যগ্রন্থে ফুটে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের প্রেম ও সৌন্দর্য সম্পর্কিত রোম্যান্টিক ভাবনা।এছাড়াও পলাতকা (১৯১৮) কাব্যে গল্প-কবিতার আকারে তিনি নারীজীবনের সমসাময়িক সমস্যাগুলি তুলে ধরেন।বহির্বিশ্বে তার সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত কাব্যগ্রন্থটি হল গীতাঞ্জলি। এ বইটির জন্যই তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন।
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটো গল্প
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন ছোট গল্পকার ।তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গল্প হল “কঙ্কাল”, “নিশীথে”, “মণিহারা”, “ক্ষুধিত পাষাণ”, “স্ত্রীর পত্র”, “নষ্টনীড়”, “কাবুলিওয়ালা”, “হৈমন্তী”, “দেনাপাওনা”, “মুসলমানীর গল্প” ইত্যাদি।
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট তেরোটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এগুলি হল: বৌ-ঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩), রাজর্ষি (১৮৮৭), চোখের বালি (১৯০৩), নৌকাডুবি (১৯০৬), প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮), গোরা (১৯১০), ঘরে বাইরে (১৯১৬), চতুরঙ্গ (১৯১৬), যোগাযোগ (১৯২৯), শেষের কবিতা (১৯২৯), দুই বোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪) ও চার অধ্যায় (১৯৩৪)। রবীন্দ্রনাথের প্রথম উপন্যাস রচনার প্রচেষ্টা হল বৌ-ঠাকুরাণীর হাট ও রাজর্ষি ।
❏ নাট্য সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃতিত্ব
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে ছিলেন নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক নাট্যমঞ্চে মাত্র ষোলো বছর বয়সে অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত হঠাৎ নবাব নাটকে ও পরে জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরই অলীকবাবু নাটকে নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৮৮১ সালে তার প্রথম গীতিনাট্য বাল্মীকিপ্রতিভা মঞ্চস্থ হয়।এই নাটকে তিনি ঋষি বাল্মীকির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক দর্শন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক দর্শন অত্যন্ত জটিল। ১৮৯০ সালে প্রকাশিত মানসী কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রথম জীবনের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি নাইটহুড বর্জন করেন।নাইটহুড প্রত্যাখ্যান-পত্রে লর্ড চেমসফোর্ডকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “আমার এই প্রতিবাদ আমার আতঙ্কিত দেশবাসীর মৌনযন্ত্রণার অভিব্যক্তি।” রবীন্দ্রনাথের “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য” ও “একলা চলো রে” রাজনৈতিক রচনা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। “একলা চলো রে” গানটি গান্ধীজির বিশেষ প্রিয় ছিল।যদিও মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর। হিন্দু নিম্নবর্ণীয় জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে গান্ধীজি ও আম্বেডকরের যে মতবিরোধের সূত্রপাত হয়, তা নিরসনেও রবীন্দ্রনাথ বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ফলে গান্ধীজিও তার অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামাঙ্কিত স্মারক ও দ্রষ্টব্যস্থল
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাপ্রাঙ্গন।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বীরভূম — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়। শান্তিনিকেতন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাপ্রাঙ্গন।
শিলাইদহ কুঠিবাড়ি, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারি কুঠিবাড়ি।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্মানে বাংলাদেশে তার নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়।
রবীন্দ্র পুরস্কার — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আন্তর্জাতিক পুরস্কার — ভারত সরকার প্রদত্ত একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
রবীন্দ্রসদন — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত কলকাতার একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাগৃহ ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান কার্যালয়।
রবীন্দ্র সেতু — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত হাওড়া ও কলকাতা শহরের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সেতু।
রবীন্দ্র সরোবর, কলকাতা — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত ভারতের একটি জাতীয় হ্রদ। এটি কলকাতার বৃহত্তম হ্রদ।
রবীন্দ্রনাথ সড়ক, যশোর, বাংলাদেশ। ‘মনিহার’ সিনেমা হল থেকে চৌরাস্তার (চার রাস্তা) মোড় এর মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী রাস্তা।
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাপ্ত পুরষ্কার সমূহ
১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে শান্তিনিকেতনে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে “ডক্টরেট অব লিটারেচার” সন্মানে ভূষিত করে।
বিদেশে তাঁর রচিত গীতাঞ্জলী কাব্য, বিশেষ জনপ্রিয়তা পায়। সেই সুবাদে তাঁকে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দিয়ে সন্মানিত করা হয়।
১৯১৫ সালে তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নাইট উপাধি পান। কিন্তু ১৯১৯ সালে ঘটে যাওয়া জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের পর তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।
১৯৩০ সালে রবীন্দ্রনাথের আঁকা একটা ছবি, প্যারিস ও লন্ডনে প্রদর্শিত হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাপানের ডার্টিংটন হল স্কুলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
৭ই মে ১৯৬১ সালে, ভারতীয় ডাকবিভাগ সম্মান জ্ঞাপনের উদেশ্যে; তাঁর ছবি দেওয়া একটা ডাক টিকিট প্রকাশ করে।
❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুকাল
জীবনের শেষ কিছু বছর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধারাবাহিক ভাবে শারীরিক অসুস্থতার শিকার হন। রোগ যেন তাঁকে কিছুতেই ছাড়তেই চাইছিলো না। দুবার তো তিনি এমন অসুস্থ হন, যারজন্য তাঁকে বহুদিন বিছানায় শয্যাশায়ী অবস্থায় পরে থাকতে হয়।
জানা যায় ১৯৩৭ সালে কবি একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থার শিকার হন। যদিও তিনি সেইসময় সেবার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন ঠিকই কিন্তু ১৯৪০ সালে আবার গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর তিনি আর সেরে উঠতে পারেননি।
অবশেষে দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট তারিখে, জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিলো প্রায় ৮০ বছর।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী | Rabindranath Tagore Biography in Bengali
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচিতি
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম পরিচয়
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা-মাতার পরিচয়
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈশবকাল
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাজীবন
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাল্যজীবনের রচনাবলী
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মজীবন
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিবাহজীবন
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষজীবন
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভ্রমণ
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম
- ❏ শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাবলী
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটো গল্প
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস
- ❏ নাট্য সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃতিত্ব
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক দর্শন
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামাঙ্কিত স্মারক ও দ্রষ্টব্যস্থল
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাপ্ত পুরষ্কার সমূহ
- ❏ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুকাল