ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রসারে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি | Policy of Subsidiary Alliance in British Empire Expansion
কট্টর সাম্রাজ্যবাদী লর্ড ওয়েলেসলি (১৭৯৮-১৮০৫ খ্রিঃ) কেবল যুদ্ধের সাহায্যেই নয়, কূটকৌশলের মাধ্যমেও এদেশের এক বিশাল অংশ কোম্পানির সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। এ ব্যাপারে তাঁর প্রধান অস্ত্র ছিল অধীনতামূলক (বশ্যতামূলক) মিত্রতা নীতি। এই নীতি মেনে নিয়ে ভারতীয় কোনো রাজা যদি কোম্পানির সঙ্গে মিত্রতা সূত্রে আবদ্ধ হন, তাহলে তাঁর রাজ্যকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ থেকে কোম্পানি রক্ষা করবে।
প্রতিদানে ওই রাজা ইংরেজদের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে একদল ইংরেজ সৈন্য রাখবেন ও তাদের ভরণ-পোষণের ব্যয়ভার বহন করবেন, নতুবা নিজ রাজ্যের একটি অংশ কোম্পানিকে ছেড়ে দেবেন। ওই রাজ্যের দরবারে একজন ইংরেজ প্রতিনিধি (রেসিডেন্ট) নিযুক্ত থাকবেন। এ ছাড়া ওই রাজা কোম্পানির অনুমতি ব্যতীত কোনো ইউরোপীয়কে যেমন তাঁর রাজ্যে চাকুরি দিতে পারবেন না, তেমনি অন্য কোনো ভারতীয় বা বিদেশি শক্তির সঙ্গে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত বা রাজনৈতিক সম্বন্ধে আবদ্ধ হতেও পারবেন না। এদেশের রাজন্যবর্গের মধ্যে হায়দ্রাবাদের নিজাম-ই সর্বপ্রথম ওই নীতি গ্রহণ করে কোম্পানির মিত্ররাজায় পরিণত হন (১৭৯৮ খ্রিঃ)।
এরপর নানা উপায়ে বিনাযুদ্ধে একের পর এক সুরাট (১৭৯৯ খ্রিঃ), তাঞ্ঝোর (১৮০০ খ্রিঃ), কর্ণাটক (১৮০১ খ্রিঃ) ও অযোধ্যা (১৮০১ খ্রিঃ) রাজ্যকে ওয়েলেসলি কোম্পানির শাসনাধীনে আনেন। সুরাটের নবাব ও তাঞ্জোরের মারাঠা রাজাকে বার্ষিক বৃত্তি দিয়ে রাজ্যদুটি এবং টিপু সুলতানের সঙ্গে গুপ্ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে নবাবকে রাজ্যচ্যুত করে তিনি কর্ণাটককে কোম্পানির রাজ্যভুক্ত করেন। আর অযোধ্যার নবাব সাদাৎ আলির বিরুদ্ধে কুশাসনের অভিযোগ তুলে ওই রাজ্যের গঙ্গা-যমুনা দোয়াব, রোহিলাখণ্ড ও গোরক্ষপুর তিনি অধিকার করে নেন। ফলে কেবলমাত্র উত্তর সীমান্ত ব্যতীত অন্য তিনদিক দিয়ে অযোধ্যা রাজ্যটি কোম্পানির রাজ্য দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়ে। এইভাবে ওয়েলেসলি “ভারতের অভ্যন্তরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত করেন।”