সুলতানি যুগে চিত্রকলা, স্থাপত্য ও সাহিত্য | Painting Architecture and in Sultanate Period




Hello Students,


Wellcome to edu.bengaliportal.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা,  edu.bengaliportal.com আজ আমরা নিয়ে এসেছি Painting Architecture and in Sultanate Period. প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষার যেমন  CTET | WBTET | WBCS । MPTET | ATET| UPTET | Rajasthan PTET | TNTET | Karnataka TET | RTET | HTET| PSTET। BANK EXAM। ইত্যাদি পরীক্ষার বিভিন্ন প্রস্তুতি পত্র আপনাদের বিনামূল্যে দিয়ে এসেছি। তাই Ajjkal.com আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে সুলতানি যুগে চিত্রকলা, স্থাপত্য ও সাহিত্য | Painting Architecture and in Sultanate Period

Ajjkal



সুলতানি যুগে চিত্রকলা, স্থাপত্য ও সাহিত্য | Painting Architecture and in Sultanate Period

■ সুলতানি যুগে চিত্রকলা, স্থাপত্য ও সাহিত্য :

সুলতানি যুগে ধর্মীয় আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যে সমন্বয়বাদী ভাবধারার সূচনা হয় তা সমসাময়িক ও উত্তরকালের চিত্রকলা, স্থাপত্য ভাস্কর্য ও সাহিত্যকে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

[1] চিত্রকলা : সুলতানি আমলে চিত্রকলার আশানুরূপ উন্নতি ঘটে নি। এযুগে ইসলামধর্মে চিত্র অঙ্কন নিষিদ্ধ থাকায় সুলতানরা চিত্রশিল্প বিকাশে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন নি। কিন্তু ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে হারম্যান গোয়েৎস নামে এক বিদেশি পণ্ডিত গবেষণা করে সর্বপ্রথম প্রমাণ করেন যে, সুলতানি আমলে চিত্রকলার অনুশীলন চলত । সমকালীন পারসিক সাহিত্যেও সুলতানি যুগের চিত্রকলার উল্লেখ পাওয়া যায়।



[২] স্থাপত্য : তুর্ক-আফগানরা মধ্য এশিয়া থেকে এক উন্নতমানের স্থাপত্যরীতি ভারতে নিয়ে আসে। তুর্ক-আফগানরা স্থাপত্যের সঙ্গে হিন্দু স্থাপত্যের সংমিশ্রণে সুলতানি যুগে যে-শিল্প স্থাপত্য গড়ে ওঠে তাকে “ইন্দো-ইসলামি শিল্পরীতি” বলা হয়। জন মার্শালের মতে, ভারতীয় শিল্প-স্থাপত্য হিন্দু ও মুসলমান প্রতিভার সংমিশ্রণে উদ্ভূত। অবশ্য একথা বলা সহজসাধ্য নয় যে, এই মিশ্রিত শিল্প-স্থাপত্যে কোন সংস্কৃতির দান কতটুকু। ইসলামি স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য ছিল গম্বুজ, স্তম্ভ, খিলান ও খিলান করা ছাদ। হিন্দু স্থাপত্যে নক্সার কাজ ছিল বেশি।




সুলতানি যুগে স্থাপত্যের ক্ষেত্রে দুটি ধরন দেখা যায় — একটি হল দিল্লি অঞ্চলের স্থাপত্য এবং অন্যটি হল প্রাদেশিক স্থাপত্য। দিল্লি অঞ্চলের স্থাপত্য : প্রথম দিকে দিল্লির তুর্কি শাসকরা তাঁদের অনুচরদের জন্য বাসগৃহ ও উপাসনালয় তৈরি করেন। উপাসনালয় হিসাবে তাঁরা মন্দির ও অন্যান্য হিন্দু অট্টালিকা ভেঙে সেগুলিকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন, যেমন : দিল্লির কুতবমিনারের কাছে কুওয়া উল-ইসলাম মসজিদ ও আজমীরের ‘আড়াই-দিন-কা-ঝোপরা’ প্রাসাদ। কুওয়াৎ-উল-ইসলাম মূলত ছিল এক জৈন মন্দির। আড়াই-দিন-কা-ঝোপরা ছিল এক বৌদ্ধ মঠ। কিছুদিনের মধ্যেই তুর্কিরা নিজেদের প্রাসাদ তৈরি করতে শুরু করে। এ ব্যাপারে তারা ভারতীয় দক্ষ কারিগর যেমন খোদাই শিল্পী ও রাজমিস্ত্রীদের কাজে লাগায়।

তুর্কিরা তাদের প্রাসাদগুলিতে প্রচুর খিলান ও গম্বুজ ব্যবহার করতেন। খিলানগুলি ছিল সূক্ষ্ম কারুকার্যমণ্ডিত। এগুলিতে মানুষ ও পশুর মূর্তি খোদাই করা হত না — কারণ তা ছিল ইসলামধর্মে নিষিদ্ধ। এর পরিবর্তে ছিল ফুলের সর্পিল অলংকরণ ও কোরাণের বাণী। তুর্কিরা প্রাসাদের অলংকরণে অবাধে হিন্দুরীতি গ্রহণ করেছিল, যেমন ঘণ্টাকৃতি, বেলকুড়ি, স্বস্তিকা, পদ্ম ইত্যাদি। ভারতীয়দের মতো তুর্কীরাও অলংকরণ প্রিয় ছিল।




ত্রয়োদশ শতকে তুর্কীরা যেসব স্থাপত্যের সৃষ্টি করে, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল কুতুবমিনার। এই মিনারটি ইলতুৎমিস তৈরি করেন। এবং আলাউদ্দিন খলজি কুতুবমিনারের একটি প্রবেশদ্বার নির্মাণ করেন যাকে বলা হয় ‘আলাই দরওয়াজা’ (অর্থাৎ আলাউদ্দিনের দরজা)। তুঘলক আমলেও নির্মাণকাজ কম হয়নি। গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ও মহম্মদ-বিন-তুঘলক তুঘলকাবাদ নামে এক বিরাট প্রাসাদ-দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। তুঘলক স্থাপত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ঢালু দেওয়াল। ফিরোজ তুঘলক ‘হৌজখাস’ নামে এক প্রমোদসৌধ নির্মাণ করেন। তুঘলক সুলতানরা তাঁদের প্রাসাদে দামি লাল বেলেপাথর ব্যবহার করতেন। কুতবমিনার : সুলতানি যুগ

প্রাদেশিক স্থাপত্য : সুলতানি যুগে দিল্লির বাইরেও ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যের বিকাশ ঘটে। এই স্থাপত্য-রীতিতে আঞ্চলিক ঐতিহ্যের প্রভাব দেখা যায়। জৌনপুর, বাংলাদেশ, গুজরাট, মালব ও দাক্ষিণাত্যের বিভিন্ন রাজ্যে এই মিশ্র স্থাপত্য – রীতি লক্ষ্য করা যায়। জৌনপুরের ‘আতালা মসজিদ’ -এ বিশেষ ধরনের শিল্পরীতি লক্ষ্য করা যায়। এই মসজিদটি গম্বুজ বাদ দিয়ে হিন্দুরীতি অনুসারে ঢালু ছাদ ও চারকোণা থাম দিয়ে তৈরি। গুজরাটের জামি মসজিদের খোদাইয়ের কাজ অপূর্ব । মালবের ‘হিন্দোলা মহল’, ‘জাহাজ মহল’ (গৌড়), ‘বড়ো ও ছোটো সোনা মসজিদ’ (গৌড়) ইত্যাদি সে – যুগের স্থাপত্য শিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। বাংলার স্থাপত্যে পাথরের চেয়ে ইটের ব্যবহার বেশি হত। এই সময় দক্ষিণ ভারতের স্থাপত্যে ভারতীয়, মিশরীয়, তুর্কী ও পারসিক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এখানকার স্থাপত্য-শিল্পের মধ্যে ‘ জামি মসজিদ ‘(গুলবর্গা), ‘চান্দ-মিনার’ (দৌলতাবাদ), ‘হাজার মন্দির’ ও ‘বিঠলস্বামী মন্দির’ উল্লেখযোগ্য। সুলতানি আমলের হিন্দু স্থাপত্যের মধ্যে মেবারের রাণা কুম্ভের নির্মিত চিতোরের ‘বিজয়স্তম্ভ’ উল্লেখযোগ্য।

[৩] সাহিত্য : সুলতানি যুগে দিল্লির সুলতানরা ফার্সি ভাষা ও সাহিত্যের গভীর অনুরাগী ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এই যুগে ফার্সি ভাষায় বহু সাহিত্য ও ঐতিহাসিক গ্রন্থ লেখা হয়। এই যুগের ফার্সি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখক ছিলেন আমীর খসরু ও হাসান দেহলবী। আমীর খসরু ‘হিন্দুস্থানের তোতাপাখি’ নামে খ্যাত ছিলেন। আমীর খসরু-ই সর্বপ্রথম হিন্দি শব্দের ব্যবহার করেন ও ভারতীয় কাব্যের অনুকরণে ‘মসনভী’ বা কাব্য রচনা করেন। তাঁর রচিত ঐতিহাসিক কাব্যের মধ্যে ‘ কিরাণ-উস্-সাদাইন’, ‘অশিক’, ‘নৃ-শিপার’, ‘তুঘলকনামা প্রভৃতির উল্লেখ করা যায়। দিল্লির সুলতান ফিরোজ তুঘলক ‘ফুতুহাৎ – ই – ফিরোজশাহী’ নামে এক গ্রন্থে তাঁর রাজত্বকালের ও তাঁর প্রজাকল্যাণমূলক কাজকর্মের বিবরণ দিয়ে গেছেন। এই যুগে ফার্সি ভাষায় লেখা ঐতিহাসিক গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মিনাজ-উস-সিরাজ -এর ‘তাবকৎ-ই-নাসিরী’, জিয়া-উদ্দিন বারণীর ‘তারিখ – ই – ফিরোজশাহী’, ইসামির ‘ফুতুহ-উস-সালাতিন’ প্রভৃতি। ভারতে ঐতিহাসিক সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে মুসলমীন পণ্ডিতদের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁরাই ভারতে যথার্থ ইতিহাস লিখনের রীতি চালু করেন।

আঞ্চলিক ভাষা ও সাহিত্য : সুলতানি যুগের উর্দু লেখকদের মধ্যে ওয়ালি, হাতিম, খান-আর্জু প্রমুখের নাম করা যায়। হিন্দি সাহিত্যের ক্ষেত্রে চাঁদ বরদাই রচিত ‘পৃথ্বীরাজ রাসো’, সরঙ্গধর রচিত ‘হামির রাসো’, ‘হামির কাব্য’, কবীর ও রামানন্দের দোঁহা ইত্যাদির উল্লেখ করা যয়। এই যুগে মৈথিলি সাহিত্য যথেষ্ট উৎকর্ষতা লাভ করে। মৈথিলি ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ লেখক ছিলেন বিদ্যাপতি। সুলতানি যুগে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতি দেখা যায়।

তৎকালীন বাংলার সুলতান বরবক শাহ্ -এর পৃষ্ঠপোষকতায় কৃত্তিবাস সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় ‘রামায়ণ’ রচনা করেন। ‘শ্রীকৃষ্ণ-বিজয়’ কাব্যের রচয়িতা মালাধর বসু, অমর কোষ টীকা ‘পদচন্দ্রিকা’র রচয়িতা বৃহস্পতি মিশ্র, ফার্সি শব্দকোষ’ শফরনামা’র সংকলয়িতা ইব্রাহিম কায়ুম ফারুকি প্রমুখ বরবক শাহের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন। কবি পরমেশ্বর ‘মহাভারত’ -এর বঙ্গানুবাদ করেন। পরাগল খাঁর পুত্র ছুটি খাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রীকর নন্দী জৈমিনি রচিত মহাভারতের অশ্বমেধ পর্ব বাংলায় অনুবাদ করেন। বিজয়গুপ্তের ‘মনসা মঙ্গল’ এবং বৈষ্মব পদাবলীর বেশিরভাগই হল সুলতানি যুগের রচনা। চণ্ডীদাস ছিলেন সুলতানি যুগের অন্যতম বৈাব কবি। তাঁর রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’ নামে ভক্তিমূলক কাব্যখানি উল্লেখ করা যায়। যোড়শ শতকে সাবিরিদ খাঁ নামে এক মুসলমান কবি শ্রীধর কবিরাজের ‘বিদ্যাসুন্দর’ – এর অনুকরণে একটি কাব্য রচনা করেন।




Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন।