জোটনিরপেক্ষ নীতি Non-aligned policy-1947 খ্রিস্টাব্দ

Non-aligned policy : After the Second World War, the Non-Alignment Movement was divided into two conflicting factions. Independent India adopted a policy of Non-aligned policy without compromising on the connivance of these two parties. This policy means maintaining friendly and equitable relations with both parties and establishing foreign relations independently and impartially. Non-aligned policy is a great policy.

জোটনিরপেক্ষ নীতি (Non-aligned policy) :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিশ দুটি পরস্পরবিরােধী গােষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে যায় । স্বাধীন ভারত এই দুই গােষ্ঠীর কোনােটিতে যােগ না দিয়ে জোটনিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ করে । এই নীতির অর্থ উভয় গােষ্ঠীর সঙ্গেই বন্ধুত্ব এবং সমদূরত্ব বজায় রেখে স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপন করা ।

( ১ ) উদ্দেশ্য ঃ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রধান উদ্ভাবক । তিনি জোট নিরপেক্ষ নীতিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন , এই নীতি হল বিশ্বের দেশগুলিকে সমমর্যাদার ভিত্তিতে নিরাপত্তা , শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে চলার । ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে গণপরিষদে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন ভারত সর্বপ্রকার রাষ্ট্রজোট ও ক্ষমতালাভের প্রতিযােগিতা থেকে দূরে থাকবে। ভারত তার সমস্ত শক্তি দিয়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হবে । অধ্যাপক ভি , পি . দণ্ডের মতে , Non alignment was the bed – rock of Nehru’s foreign policy.

( ২ ) প্রচারঃ জোটনিরপেক্ষতার মাধ্যমে জওহরলাল নেহরু একটি যুদ্ধইনি তাল সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন যা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় বিস্তৃত হবে । ভারতের জোটনিরপেক্ষতার আদর্শ ক্রমশ অন্যান্য দেশগুলিতেও প্রসারিত হয় । নেহরুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে একে একে মিশরের প্রধানমন্ত্রী গামাল নাসের ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি ড . সুকর্ণ , যুগােশ্লাভিয়ার রাষ্ট্রপতি মার্শাল টিটো প্রমুখ জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে যােগ দেন ।

( ৩ ) পঞ্চশীল নীতিঃ ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ঘটে । চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ – এন – লাই ভারতে উপস্থিত হলে দুই দেশের মধ্যে ২৯ শে এপ্রিল একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয় যা ‘ পঞশীল নীতি ‘ নামে পরিচিত । দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করতে এই নীতিগুলি গ্রহণ । করার অঙ্গীকার করা হয় । এই নীতিগুলির সঠিক রূপায়ণ হলে পৃথিবীতে শান্তি বজায় থাকা সম্ভব বলে । মনে করা হয় । এই নীতিগুলি হল-( ক ) পরস্পরের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। ( খ ) পরস্পরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা । ( গ ) একে অপরকে আক্রমণ না করা । ( ঘ ) সমমর্যাদার ভিত্তিতে পারস্পরিক সাহায্য প্রদান করা । ( ঙ ) শান্তিপূর্ণভাবে পাশাপাশি অবস্থান করা।

( 4 ) বান্দুং সম্মেলনঃ ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে এশিয়ার ১৪ টি দেশ নতুন দিল্লিতে এক অধিবেশনে মিলিত হয় । এখানে তারা সাম্রাজ্যবাদ , ঔপনিবেশিক আগ্রাসন এবং বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় । ওই বছরেই ১৮ ই থেকে ২৬ শে এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে এশিয়া ও আফ্রিকার ২৯ টি দেশ এক সম্মেলনে মিলিত হয় । এই বান্দুং সম্মেলনের নেতৃত্ব ছিল জওহরলাল নেহরুর হাতে । এই সম্মেলনে ‘ পঞশীল ’ ‘ দশশীলে পরিণত হয় । এই সম্মেলন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সূচনা হয় ।

( ৫ ) দশশীল নীতিঃ বান্দুং সম্মেলনে গৃহীত দশশীল নীতিগুলি হল-( ক ) মৌলিক মানবাধিকার ও জাতিপুঞ্জের সনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। (খ) সকল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি স্বীকৃতি জানানাে। ( গ ) সকল বর্ণ ও জাতির সমান অধিকারের স্বীকৃতি। ( ঘ ) অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ না করা। ( ঙ ) সকল জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা।( চ ) বৃহৎ শক্তির সামরিক ও অন্যান্য স্বার্থরক্ষা করা থেকে বিরত থাকা । ( ছ ) অন্য কোনাে রাষ্ট্রের প্রতি আগ্রাসনবা বলপ্রয়ােগ করা থেকে বিরত থাকা। ( জ ) শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলাপ – আলােচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান করা। ( ঝ ) পারস্পরিক সহযােগিতা করা।( ঞ ) আন্তর্জাতিক ন্যায়নীতি ও দায়বদ্ধতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা।

( ৬ ) বেলগ্রেড শীর্ষ সম্মেলনঃ ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ৫ ই থেকে ১২ ই জুন মিশরের কায়রােতে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যাতে এশিয়া , ইউরােপ ও লাতিন আমেরিকার ২১ টি দেশ যােগ দেয়। এই সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই বছরেই ১ লা থেকে ৬ ই সেপ্টেম্বের যুগােশ্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে অনুষ্ঠিত হয় জোট নিরপেক্ষ দেশগুলির প্রথম শীর্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলনে ২৫ টি সদস্য দেশ যােগদান করে । যুদ্ধ , আণবিক অস্ত্র , ঔপনিবেশিকতা , সাম্রাজ্যবাদ ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং শান্তি ও পারস্পরিক সহবস্থানের পক্ষে এই সম্মেলনে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় ।

মূল্যায়নঃ জোটনিরপেক্ষ দেশগুলির মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি ও চরিত্রগত কিছু পার্থক্য ছিল । এই আন্দোলনের কিছু ত্রুটি – বিচ্যুতিও ছিল । তা সত্ত্বেও এই আন্দোলনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য । ( ১ ) বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ( ২ ) তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এবং ( ৩ ) বিশ্বরাজনীতিতে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম ।

আরও পড়ুনঃ ভারতের সংবিধান

Leave a comment