রাসায়নিক সমীকরণ ব্যালান্স করার পদ্ধতি | Method of balancing a Chemical equation
■ রাসায়নিক সমীকরণ ব্যালান্স করার পদ্ধতি (Method of balancing a Chemical equation) :
রাসায়নিক সমীকরণ ব্যালান্স করতে হলে নীচের বিষয়গুলি জানা দরকার :
● (i) রাসায়নিক বিক্রিয়াটিতে কী কী পদার্থ উৎপন্ন হয়।
● (ii) বিক্রিয়ক এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলির সঠিক সংকেত।
● (iii) বিক্রিয়ার আগে বা পরে পদার্থের অণু এক বা একাধিক সংখ্যায় থাকতে পারে, অণুর সংখ্যা কখনো ভগ্নাংশ হয় না।
■ পরীক্ষা-নিরীক্ষা পদ্ধতি (Trial and error method) :
● (i) বামদিকে বিক্রিয়ক এবং ডানদিকে বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলির অণুর সংকেত লেখা হয়। যেমন— পটাশিয়াম ক্লোরেটকে উত্তপ্ত করলে পটাশিয়াম ক্লোরাইড এবং অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। এখন বামদিকে বিকারক ও ডানদিকে বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলির সংকেত লেখা হয়।
KCIO3 → KCI + O2
● (ii) যেহেতু বিকারক এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থের অণুগুলির মধ্যে বিভিন্ন মৌলের পরমাণুগুলির সংখ্যা সমান থাকবেই, সেইজন্য দুপাশে পরমাণুর সংখ্যা গুণে, প্রয়োজন হলে দুপাশে অণুগুলির সহগ সংখ্যা বাড়িয়ে দেখতে হবে যে দুপাশের পরমাণুর সংখ্যা সমান হল কি না। যখন ডানদিকের পরমাণুর সংখ্যা, বামদিকের পরমাণুর সংখ্যার সমান হয় তখন বিকারক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের মাঝে সমান (=) চিহ্ন দিয়ে সমীকরণটি ব্যালান্স করা হয়।
KClO3 → KCl + O2
–এই বিক্রিয়াটিতে দেখা যায় যে, বামদিকে 2 অণু KClO3 ও ডানদিকে 2 অণু KCl এবং 3 অণু O, বসালে প্রত্যেকটি পরমাণুর সংখ্যা উভয়দিকে সমান 16 হয়। সুতরাং, বিক্রিয়াটির সমতাযুক্ত সমীকরণটি হল— 2KClO3 = 2KCl + 302 অনুরূপে, H2S + SO2 → S + H2O, একে ব্যালান্স করলে 2H2S + SO2 = 3S + 2H2O হয়।
■ রাসায়নিক সমীকরণের তাৎপর্য (Significance of Chemical y you equations) : রাসায়নিক সমীকরণ থেকে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার গুণগত এবং পরিমাণগত অনেক তথ্য পাওয়া যায়।
❏ (a) গুণগত তথ্য:- রাসায়নিক বিক্রিয়াটিতে কী কী মৌল বা যৌগ পরস্পরের সঙ্গে বিক্রিয়া করে কী কী মৌল বা যৌগ উৎপন্ন করে তাদের নাম জানা যায়।
❏ (b) পরিমাণগত তথ্য:- আবার পরিমাণগত দিক দিয়ে বিচার করলে জানা যায়-
● (i) কত ভাগ ওজনের কী কী পদার্থ পরস্পরের সঙ্গে রাসায়নিকভাবে বিক্রিয়া করে কত ভাগ ওজনের কোন্ কোন্ পদার্থ উৎপন্ন করেছে।
● (ii) বিকারক এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলি যদি গ্যাসীয় হয়, একই উষ্মতায় এবং চাপে ওদের আয়তনের অনুপাতও জানা যায়। বিক্রিয়ক এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলির অণু কিংবা পরমাণুর সংখ্যা জানা যায়।
● (iii) ভরের সংরক্ষণ সূত্রের সত্যতা জানা যায়।
■ রাসায়নিক সমীকরণের অসম্পূর্ণর্তী (Limitations of a Chemical equation) :
রাসায়নিক বিক্রিয়া হওয়ার সময় যেসব তথ্য রাসায়নিক সমীকরণ থেকে জানা যায় না, সেগুলিকে রাসায়নিক সমীকরণের অসম্পূর্ণতা বলে।
❏ রাসায়নিক সমীকরণ থেকে আমরা নীচের বিষয়গুলি জানতে পারি না-
● (i) কোন্ কোন্ শর্তে রাসায়নিক বিক্রিয়াটি ঘটে অর্থাৎ, বিক্রিয়ার সময় চাপের, তাপের বা অনুঘটকের প্রয়োজন আছে কিনা? যেমন, N2 + 3H2 = 2NH3 – এই বিক্রিয়াটি ঘটে 200 বায়ুমণ্ডল চাপে এবং 550°C তাপমাত্রায়, অনুঘটক হিসাবে থাকে Fe_O, কিন্তু সমীকরণে তা প্রকাশ করা যায় না।
● (ii) বিক্রিয়াটি তাপ-উৎপাদক না তাপ-শোষক, তা কিন্তু সমীকরণ থেকে বোঝার উপায় নেই। যেমন — উপরের বিক্রিয়াটি তাপ-উৎপাদক কিন্তু সমীকরণ থেকে তা জানার উপায় নেই।
● (iii) রাসায়নিক বিক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হওয়ার জন্য কত সময়ের প্রয়োজন তা জানা যায় না।
● (iv) বিকারক এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলির ভৌত অবস্থা সমীকরণ থেকে জানা যায় না। বর্তমানে রাসায়নিক সমীকরণে বিক্রিয়ক এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলির ভৌত অবস্থা Zn (s) + H2SO4 (1) উল্লেখ করা একান্ত বাঞ্ছনীয়। ZnSO4 ( l ) + H2 ( g ) =
● (v) বিক্রিয়াটি উভমুখী কিনা জানা যায় না। উপরের N2- এর সঙ্গে Ho -এর বিক্রিয়াটি উভমুখী বদ্ধ অবস্থায়, কিন্তু সমীকরণে তা জানার উপায় নেই। এখন বিক্রিয়ার উভমুখীতা জানাবার জন্য = চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন – N2 + 3H, = 2NH3
● (vi) বিক্রিয়াটি কত তাড়াতাড়ি বা ধীরগতিতে ঘটছে অর্থাৎ, বিক্রিয়ার বেগ সম্বন্ধে সমীকরণ থেকে কিছু জানা যায় না।