India is a riverine country. River is the first sign that it is a stream of flowing water. The murmur that flows, that river, the river iti – bahubrihi samas. But water is not the only river. The combination of soil and water creates a river for billions of years. Where the river originates, the soil on which it flows – the character of the soil in these places, the slope, the presence or absence of the forest, the temperature of the region, the nature and amount of rainfall, everything depends on the river. It is also true that rivers control much of the soil type, land character and land slope, adjacent forests, grasslands, etc.
For example, let’s think of the Ganges. Gangotri Glacier. The main flow of the Ganges starts from Gaemukh. 16 km below that (previously this distance was 11 km. This distance is gradually increasing as the glacier continues to melt) a Ganges falls into the Ganges Haridwar Kankhal. Gangotri place is surrounded by high peaks, Bhagirathi 1, 2, 3, Sudarshan 1, 2 etc. Gangotri in the middle is like a huge bowl.
The Ganges flows down from the top of a huge granite rock of Sanali color cut on one side of that bowl. Then the long distance to Devprayag is very deep. Gangotri, Rudraprayag, Karnaprayag, Devprayag, Kedarganga, Mandakini, Nandakini, Alaknanda are the major tributaries of the Ganges. The rapid flow of the Ganges from Gaemukh to Gangotri falls has eroded the soft rocks. The river flows only over solid granite. The Himalayas are the youngest mountains in the world, five million years old.
নদীমাতৃক দেশ ভারতবর্ষ | India is a Riverine Country
নদী মানেই প্রথম পরিচয় যে তা বহমান জলের ধারা। কলকল নাদ করে যে বহমান, সেই নদী, নদতি ইতি — বহুব্রীহি সমাস। কিন্তু কেবলমাত্র জলের ধারাই নদীর স্বরূপ নয়। মাটি ও জলের অঙ্গাঙ্গি সম্বন্ধই কোটি কোটি বছরে একটি নদীর সৃষ্টি করে। যেখানে নদীর উষ্পত্তি, যে মাটির ওপর দিয়ে সে প্রবাহিত হয়ে আসে — এইসব জায়গার মাটির চরিত্র, ঢাল, জঙ্গল থাকা – না – থাকা, অঞ্চলের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের স্বভাব ও পরিমাণ, সবকিছুর ওপর নদী নির্ভর করে। আবার গতিপথের অনেকখানি মাটির ধরন, জমির চরিত্র ও জমির ঢাল, পাশের জঙ্গল, তৃণভূমি ইত্যাদি নদীই নিয়ন্ত্রণ করে, একথাও সত্যিই।
যেমন মনে করা যাক গঙ্গার কথা।
গঙ্গোত্রী হিমবাহের গােমুখ থেকে গঙ্গার মূল প্রবাহটি শুরু হয়। তা থেকে ১৮ কিলােমিটার নীচে ( আগে এই দূরত্ব ছিল ১১ কিলােমিটার। হিমবাহটি গলে যেতে থাকায় এই দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে ) গঙ্গোত্রীতে একটি জলপ্রপাত তৈরি করে গঙ্গা হরিদ্বার কনখলের দিকে রওনা হয়। গঙ্গোত্রী স্থানটির চারদিকে উঁচু উঁচু চূড়া, ভাগীরথী ১, ২, ৩, সুদর্শন ১, ২ ইত্যাদি। মাঝখানে গঙ্গোত্রী যেন একটি বিশাল বাটির মতাে। সেই বাটির একদিক কেটে সােনালি রঙের এক প্রকাণ্ড গ্রানাইট পাথরের ওপর থেকে গঙ্গার ধারা নীচে পড়ছে। তারপর দেবপ্রয়াগ পর্যন্ত দীর্ঘপথ গঙ্গার খাত বেশ গভীর।
গঙ্গোত্রী, রুদ্রপ্রয়াগ, কর্ণপ্রয়াগ, দেবপ্রয়াগ, কেদারগঙ্গা, মন্দাকিনী, নন্দাকিনী, অলকানন্দারই মতাে বড় বড় উপনদী গঙ্গায় যুক্ত হচ্ছে। গােমুখ থেকে গঙ্গোত্রীপ্রপাত পর্যন্ত গঙ্গার জলধারা তীব্র স্রোতে নরম পাথর ক্ষয় করেছে। কেবল কঠিন গ্রানাইটপাথরের ওপর দিয়ে চলছে নদী। হিমালয় পৃথিবীর সবচেয়ে তরুণ পর্বত, পাঁচ কোটি বছর এর বয়স। হিমালয়ের মাটি এখনও আলগা ঝুরঝুরে।
এই পর্বতমালার পূর্বপৃষ্ঠে অর্থাৎ ভারতবর্ষের দিকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় বলে পর্বতের মধ্য অঞ্চলে ঘন বন। এই বন ও তার চেয়ে বেশি উচ্চতায় বিশাল সব তৃণভূমি বা ‘বুগিয়াল’ শেকড় দিয়ে পাহাড়ের মাটি ধরে রেখেছে। বৃষ্টির জল এই পর্বতপৃষ্ঠ থেকে মাটি ধুয়ে এনে সবচেয়ে নিচু জায়গায় অর্থাৎ নদীর জলে মেশায়। হিমালয় পাহাড়ের অবস্থিতি ও উচ্চতার জন্য যেমন এই পাহাড় থেকে অসংখ্য ছােট – বড় নদীর জন্ম, অন্যদিকে এই নদীরাই হিমালয়ের শিলাস্তর ক্ষয় করে।
জলের ধারায় নীচে সমতলে নিয়ে আসে, আর আনে পাহাড়ের গা থেকে বাতাস ও বৃষ্টির জলে পােয়া মাটি পাথরও। সেই মাটিকে বলে পলিমাটি। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রপৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পলিমাটি বহন করে আনা নদী। হিমালয়ের আলগা মাটি ও নদীদুটির বিশাল দৈর্ঘ্যই তার প্রধান কারণ।
এই বিরাট নদীরা আসলে আরও অনেক ছােট – বড় নদীর মিলিত ধারা। একেকটি বিরাট অঞ্চলে ঝরে পড়া বৃষ্টির জলের বড় অংশই সেইসব নদীর জল বেয়ে সমতলে আসে। যেহেতু এই নদীগুলিতে স্রোত অবারিত থাকত এবং বর্ষার একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রচুর অতিরিক্ত জলে সেই স্রোতের বেগ আরও অনেক বেড়ে উঠত, নদীরা সহজেই নিজেদের বয়ে আনা পলিমাটি দুপাশে ছড়িয়ে দিয়ে জমিকে উঁচু করা ও খাত গভীর রাখার কাজ করতে পারত।
সমস্ত গাঙ্গেয় সমভূমি তৈরি হয়েছে এইভাবে গঙ্গা ব্রহ্মপুত্রের বয়ে আনা পলিমাটি দিয়ে। একসময়ে হিমালয়ের পায়ের কাছ পর্যন্ত প্রসারিত ছিল সমুদ্র। কোটি কোটি বছর ধরে বৃষ্টিতে ধুয়ে আসা মাটি ও নদীদের আনা পলিমাটি সেই সমুদ্রতলে জমা হতে হতে উত্তর ভারতের গাঙ্গেয় সমভূমি তৈরি হয়েছে । পলিমাটি বলেই এই মাটি এত উর্বর। এভাবে নদী ও মাটির গভীর ও জটিল সম্পর্কের মধ্য দিয়েই নদী তৈরি হয়।
কেন কোনও কোনও নদী বারেবারে আপনা থেকেই পথ পাল্টায় — কোশির বন্যা উপলক্ষে সে বিষয়ে কিছু আলােচনা হয়েছিল। পরে আবার এই প্রসঙ্গ আসবে। এমনকি নদীর সঙ্গে শেষ পর্যন্ত দেশের আবহাওয়া বা বৃষ্টিপাতেরও সম্পর্ক থাকে। যেখানে বৃষ্টি বেশি, সেখানে অধিকসংখ্যকবড় নদী থাকবে একথা সহজেই বলা যায়। আবার বড় নদীগুলি বৃষ্টিপাত থেকে প্রচুর মিষ্টিজল ( যা সমুদ্রের নােনাজল নয় ) সমুদ্রে এনে ঢালে।
মিষ্টিজল নােনাজলের চেয়ে হালকা বলে এই জল সমুদ্রের উপরিভাগে ছড়িয়ে থাকে ও সূর্যতাপে অপেক্ষাকৃত – তাড়াতাড়ি বাষ্পীভূত হয়। মানে বৃষ্টির জল নদী তৈরি করে আবার নদীর জল অধিক ও নিয়মিত বৃষ্টিপাতের একটি কারণ। অসংখ্য ছােট – বড় কার্যকারণ সূত্র দিয়ে নদী একটি ভূভাগের সঙ্গে, তার আবহাওয়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। বাইরে থেকে তার সবগুলাে বােঝা কিংবা জানাও সম্ভব নয়। কিন্তু এরকম সূক্ষ্ম কোটি কোটি নিয়মই এই পৃথিবীকে প্রাণীদের ও মানুষের বসবাসের উপযােগী রেখেছে। এতক্ষণ পর্যন্ত যা কথা হল তাতে মানুষের ভূমিকা কোথাও ছিল না। এই পৃথিবীতে যত প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে। বিবর্তনের নিয়মে, মানুষ এসেছে তার মধ্যে সবচেয়ে পরে, তার গুরুমস্তিষ্ক আছে।
মানুষের বুদ্ধি খুব উন্নত ও জটিল কাজ করতে সক্ষম। সে বহু প্রাকৃতিক নিয়ম বুঝে তা নিজেরকাজে লাগাতে পারে। আসলে অতি দুর্বল শরীর হওয়া সত্তেও সে যে একটি প্রজাতি হিসেবে বেঁচে আছে, এই পাকতিক নিয়মকে বুঝে তাকে সাবধানে কাজে লাগানাের ক্ষমতাই তার কারণ। এই নিয়মগুলাে এত জটিল ও কোটি কোটি বছর ধরে পরস্পরের সঙ্গে এমনভাবে সংলগ্ন যে একটি ছােট গ্রন্থিও কোথাও ছিড়ে গেলে দীর্ঘকাল ধরে সদরপ্রসারী ক্ষতিকারক ফল হবে তার।
সভ্যতার প্রথম থেকে সেই সাবধানতা নিয়েই মানুষ প্রকৃতির নিয়মকে ব্যবহার করে নিজের জীবনধারণকে সহজ করে নিয়ে বাঁচতে। এইখানে নদীর একটি বিরাট ভূমিকা। নদীর ধারের মাটি স্বাভাবিকভাবে উর্বর। নদীর জল প্রাকৃতিক উৎস থেকে আসে ও বৃষ্টিতে পুষ্ট হয়। নদী সর্বদা বহমান থাকে। এজন্য নদীর জল নির্মল, স্নান ও পানের উপযুক্ত ছিল।
বহতা পানি নির্মলা ’ — এরকম একটি কথা চল্লিশ – পঞ্চাশ বছর আগেও লােকশ্রুতিতে প্রচলিত ছিল। সহজলভ্য খাদ্য পানীয়ের কারণে নদীর তীর ধরেই জনবসতি গড়ে উঠল। নদীই মানুষের সভ্যতার প্রথম ধাত্রী ও পালিকা। বিশেষত কৃষিকাজ শুরু হওয়ার পর থেকে সভ্যতা নদীর ওপর আরও নির্ভরশীল হল। ক্রমশ নদীর ধারে গড়ে উঠল বড় বড় শহর। উত্তর ভারতের দিল্লি, আগ্রা, কানপুর ,বেনারস, এলাহাবাদ ইত্যাদি প্রধান ও প্রাচীন শহর যমুনা কিংবা গঙ্গার ধারে অবস্থিত।
দক্ষিণ ভারতের বিজয়ওয়াড়া, রাজমুন্দ্রি, নাসিক,হায়দ্রাবাদ, মহীশর, কাঞ্চি, বিজয়নগরম ইত্যাদি শহর কৃষ্ণা, কাবেরী বা গােদাবরীর তীরে।কিন্তু মানুষ, যে প্রকৃতির আনুকূল্যে নিজের জীবনযাপন সবচেয়ে সুবিধাজনক করে নিয়েছে, সে – ই নিজের অতিরিক্ত লােভের দরুন প্রকৃতিকে এমন ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যাতে আজ তার নিজের অস্তিত্বই সঙ্কটাপন্ন। জীবনের সেই জটিল বিচিত্র সুন্দর শৃঙ্খলাটিকে কিছু মানুষ ছিড়েখুঁড়ে শতচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। নদীগুলি সেই কুফলের শিকার।
গত পঞ্চাশ বছরে আমাদের এই নদীসভ্যতার দেশে প্রতিটি নদী অসুস্থ। তাদের উৎস শুকিয়ে যাচ্ছে, বড় বড় বাঁধ দিয়ে তাদের প্রবাহ রুদ্ধ হচ্ছে। বীভৎস দূষণে গঙ্গা, যমুনা তুঙ্গভদ্রার মতাে বহু নদী নিজেরাই বিষাক্ত হয়ে উঠছে। জলের সঙ্গে মাটির যে প্রাচীন সম্পর্ক মানবসভ্যতাকে বসবাসের অনুকূল ভূমি ও পরিবেশ দিয়েছিল, সেই সম্পর্ক ধ্বংসপ্রায়। তারই ফলে উত্তর বিহারের সমৃদ্ধির জননী কোশি নদীর বন্যায় কয়েক শত মানুষ মারা যান, লক্ষ লক্ষ মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছেন। সামুদ্রিক তুফান আয়লার দাপটে সুন্দরবনের প্রাচীন জঙ্গল ও অপেক্ষাকৃত নতুন বসতি অঞ্চল তছনছ হয়েছে।
এরকম প্রাকৃতিক বিপর্যয় অদূর ভবিষ্যতে আরও হবে। মানুষের জীবনযাপনের দোষে পৃথিবীর জলবায়ুতে ভয়ঙ্কর ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, এই বিপর্যয়গুলাে তারই ফল। কী করে মানুষ রক্ষা পাবে এ থেকে? পরের সংখ্যায় সুন্দরবনের নদী ওতুফান নিয়ে আমরা সেই আলােচনার বিস্তারে যাব।