বঙ্গভঙ্গের কারণ বা উদ্দেশ্য | Cause or Purpose of Partition | Importance of Swadeshi Movement
■ প্রশ্ন:- বঙ্গভঙ্গের কারণ বা উদ্দেশ্য কী ছিল ? স্বদেশি আন্দোলনের গুরুত্ব লেখো। (Cause or Purpose of Partition | Importance of Swadeshi Movement).
■ উত্তর:- ❏ বঙ্গভঙ্গের কারণ বা উদ্দেশ্য:-
■ ভূমিকা:- বড়োেলাট লর্ড কার্জনের সর্বাপেক্ষা প্রতিক্রিয়াশীল ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাদে দ্বিখন্ডিত করা। বাংলার ছোটোলাট অ্যান্ড্রু ফ্রেজারের সুপারিশ ও রিজলে পত্রের ভিত্তিতে লর্ড কার্জন বিভাজন নীতির মাধ্যমে বাংলাকে দ্বিখন্ডিত করেছিলেন।
■ লর্ড কার্জনের যুক্তি:- বঙ্গভঙ্গের সমর্থনে লর্ড কার্জনের যুক্তি ছিল যে,
● (১) অবিভক্ত বাংলা অত্যন্ত বড়ো, ফলে একজন গভর্নরের হাতে এই বিশাল প্রদেশের শাসনভার ন্যস্ত রাখা অসুবিধাজনক।
● (২) পূর্ব ও পশ্চিমবাংলার মধ্যে দূরত্ব থাকায় কলকাতা থেকে পূর্ববাংলার স্থানীয় সমস্যা বোঝা যায় না, ফলে পূর্ববঙ্গ উপেক্ষিত থাকে। বঙ্গভঙ্গের পিছনে এটি ছিল প্রশাসনিক কারণ।
■ প্রকৃত কারণ:- কিন্তু কার্জনের এই যুক্তিগুলির অসারতা প্রমাণ হয় যখন দেখা যায় যে, পশ্চিমবাংলার সঙ্গে বিহার ও ওড়িশাকে একত্র করে। আলাদা প্রদেশ গঠন করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে কার্জনের বঙ্গভঙ্গের পিছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক, তা হল
● (১) বাংলার সংগ্রামী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করা এবং বাঙালি হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিদ্বেষ ও বিভেদ ঘটিয়ে ইংরেজ শাসনের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করা। এভাবে তিনি বাংলায় সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করতে চেয়েছিলেন লর্ড কার্জন।
● (২) এছাড়া অসমের চা-বাগিচার ইংরেজ মালিকদের স্বার্থরক্ষা করাও ছিল কার্জনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
■ স্বদেশি আন্দোলনের গুরুত্ব:-
❏ বঙ্গভঙ্গ রদ:- বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনের তীব্রতায় ব্রিটিশ সরকার ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
❏ রাজধানী স্থানান্তর:- একই সঙ্গে ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করা হয়।
■ স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকচিহ্ন:- এই আন্দোলন পরিপূর্ণভাবে সাফল্য না পেলেও ভারতের জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাসে স্বদেশি আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। মহামতি গোখলে এই আন্দোলনকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি দিকচিহ্ন বলে অভিহিত করেছেন। মহাত্মা গান্ধি মন্তব্য করেছেন, বঙ্গভঙ্গের পরেই ভারতে প্রকৃত নবজাগরণ ঘটে।
■ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন:- এই আন্দোলনে ছাত্র, যুবক, নারী, শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত প্রভৃতি সর্বস্তরের মানুষরা অংশগ্রহণ করে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেছিল, যা পরবর্তীকালের ঐক্যবদ্ধ স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।
■ বৈপ্লবিক আন্দোলনের সূচনা:- ভারতে বৈপ্লবিক আন্দোলনের সূচনাও হয়েছিল এই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে। বাংলায় গড়ে ওঠে ‘অনুশীলন সমিতি’, ‘যুগান্তর’ নামে দুটি গুপ্তসমিতি। উইল ডুরান্ট এ প্রসঙ্গে বলেছেন, It was in 1905 that the Indian revolution began.
■ চরমপন্থার প্রসার:- আবার বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করেই জাতীয় কংগ্রেসে চরমপন্থী মতবাদের প্রসার ঘটে এবং ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
■ সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রসার:- বাংলার সাহিত্য ও লোকসংগীত, শিল্পকলা ও বিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রেও স্বদেশি আন্দোলনের অপরিসীম প্রভাব ছিল। সুমিত সরকারের মতে, Our national movement can boast of a cultural accompaniment as rich as swadeshi.