চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় The greatest filmmaker Satyajit Ray 1921-1992 খ্রিস্টাব্দ

The greatest filmmaker Satyajit Ray: World-renowned filmmaker Satyajit Ray is not with us today. 7 days long. Fighting to the death, he left this world on April 23 (1992) at 5-32 pm. He was a unique personality as a world-renowned filmmaker. He is also a well-known writer and playwright of Unique Creator.

চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় (Filmmaker Satyajit Ray):

বিশ্ববন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় আজ আমাদের মধ্যে নেই। দীর্ঘ ৮৭ দিন। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৩ এপ্রিল(১৯৯২) বিকাল ৫-৩২ মিনিটে তিনি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্রস্রষ্টা হিসেবে তিনি ছিলেন অনন্য ব্যক্তিত্ব। আবার সুসাহিত্যিক ও চিএনাট্যকার হিসেবেও তিনি অনন্য স্রষ্টা।

চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের জন্ম , বংশপরিচয় ও শিক্ষা (Filmmaker Satyajit Ray’s birth, genealogy and education):

১৯২১খ্রিস্টাব্দের ২ মে সত্যজিৎ রায়ের জন্ম । পিতা সুকুমার রায়; মাতা সুপ্রভা দেবী। তার পিতামহ স্বনামধন্য উপেন্দ্রকিশাের রায়চৌধুরী। পিতার ৩২ বছর বয়সে মৃত্যু হলে মাত্র ২ ১/২বছরের শিশু সত্যজিৎ রায়কে মানুষ করার জন্য সুপ্রভা দেবীকে অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়। সত্যজিতের শৈশব কাটে উত্তর কলকাতার ১০০ নম্বর গড়পাড় রােডের বাড়িতে।পাঁচ বছর বয়সে তারা বকুল বাগানের বাড়িতে চলে আসেন। ৮ বছর বয়সে সত্যজিৎ বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে ভরতি হন। ব্ৰহ্মসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, ভারতীয় মার্গসংগীত এবং পাশ্চাত্য সংগীতে তিনি ছিলেন গভীর মনােযােগী।১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত তিনি কলেজে কাটান। এ সময়ে তিনি ইংরেজি ভাষাও অনবদ্যভাবে রপ্ত করেন।১৯৩৯-এ তিনি বিএ পাস করেন। তাঁর জীবনে নন্দলাল বসু এবং বিনােদবিহারী মুখােপাধ্যায় দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করে।১৯৪২ খিস্টাব্দের ডিসেম্বরে শিক্ষাক্রমের ঠিক অর্ধপথে তিনি শান্তিনিকেতন ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন।

চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের কর্মজীবন (Filmmaker Satyajit Ray’s career

বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানের শিল্পীকর্মী হিসেবে সত্যজিৎ রায়ের কর্মজীবন ১৯৪৩ এ মাসিক আশি টাকা বেতনে ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন কোম্পানি ডি.জি.কিমারে যােগ দেন। কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি নিজগুণে এই প্রতিষ্ঠানের আর্ট ডিরেক্টরের পদে উন্নীত হন। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’তে সাফল্যের পর তিনি ১৯৫৬-তে বিজ্ঞাপনের চাকরিতে ইস্তফা দেন।

চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র পরিচালনা (Filmmaker Satyajit Ray directed the film):

চলচ্চিত্র শিল্পের এই প্রতিভাধর পুরুষ একের পর এক চলচ্চিত্র তৈরি করে চললেন। তার প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’ তাকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যায়। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তিনি এর জন্য অনেক পুরস্কার পেলেন। এরপর তিনি ‘অপরাজিত’(১৯৫৬); ‘পরশপাথর’ ‘জলসাঘর’(১৯৫৮); ‘অপুর সংসার'(১৯৫৯); ‘দেবী’(১৯৬০); ‘চিড়িয়াখানা’(১৯৬৭); ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’(১৯৬৯); ‘অশনি সংকেত’(১৯৭৩); সত্যজিৎ রায় বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র এবং দূরদর্শন চিত্র রচনা করেন। এর মধ্যে ‘রবীন্দ্রনাথ'(১৯৬১); ‘সিকিম'(১৯৭১); ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য।

চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের অন্যান্য কর্ম (Other works of filmmaker Satyajit Ray):

চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় (Filmmaker Satyajit Ray) চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি সংগীত পরিচালনার দায়িত্বভার হাতে তুলে নিয়েছিলেন। ‘তিনকন্যা’ ছবি থেকেই তিনি এই দায়িত্ব নেন। তা ছাড়া এত কিছুর বাইরেও বলতে হয় বলা চলে পােস্টার শিল্পের তিনি অদ্বিতীয় শিল্পী। তার কিছু কিছু পােস্টার এক একটি নিখুঁত শিল্পবস্তু।

চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্যকর্ম (Literary work of filmmaker Satyajit Ray):

এর পাশাপাশি সত্যজিৎ রায় সাহিত্যসৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তার পূর্বসূরিদের প্রিয় ‘সন্দেশ’ পত্রিকা পুনঃপ্রকাশ করলেন। নিজেও সেখানে লিখতে শুরু করলেন। এভাবে সৃষ্টি হল ফেলুদা, তপসে, জটায়ু, প্রফেসর শঙ্কুর মতাে চরিত্রগুলি। এ প্রসঙ্গে তার নিম্নলিখিত সৃষ্টিগুলি জনপ্রিয় বাদশাহী আংটি’, ‘একডজন গল্প’, ‘গ্যাংটকে গণ্ডগােল’, ‘সােনার কেল্লা'(১৯৭১); ‘বাক্সরহস্য'(১৯৯৩); সাবাশ প্রফেসর শঙ্কু (১৯৭৪) “জয়বাবা ফেলুনাথ” (১৯৭৬) ইত্যাদি। তিনি শুধুমাত্র সাহিত্যকর্ম নিয়ে থাকলেও বাংলা সাহিত্যে তার শিল্পকর্মের অক্ষয়কীর্তির প্রমাণ পাওয়া যেত।

চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের সম্মানলাভ(Gained the respect of filmmaker Satyajit Ray):

সারাজীবনে সত্যজিৎ রায় ভিন্নমুখী শিল্পকর্মের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। ক্যামেরায় ছবি তােলার জন্য ১৯৩৬-এ ‘বয়েজ ওন পেপার’ পত্রিকায় প্রথম পুরস্কার প্রাপ্তি থেকে তার জয়গাত্রা ও পুরস্কার প্রাপ্তির শােভাযাত্রা শুরু দেশে এবং বিদেশে। ভারত সরকার কর্তৃক তিনি ১৯৫৮- তে, ‘পদ্মশ্রী’, ১৯৬৫-তে ‘পদ্মভূষণ’ পুরস্কার পান।১৯৬৭-তে তিনি পান ‘অ্যাকাডেমি পুরস্কার’; এই বছরই পান ‘ম্যাগসেসাই’ পুরস্কার। বিশ্বভারতী কর্তৃক ‘দেশিকোত্তম’ পান ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে।১৯৮২-তে তিনি পান ‘ভিকান্তি’ ‘হেলেস অ্যাঞ্জেল ট্রফি। ফরাসি সরকার কর্তৃক ‘লিজিয়ন অব অনার’ পান ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে। শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্র সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম নােবেল পুরস্কার স্বরূপ নিউইয়র্কের অ্যাকাডেমি অব মােশন পিকচার্স ‘কর্তৃক’ লাইফ টাইম ‘অ্যাচিভমেন্ট’ এর জন্য বিশেষ ‘অস্কার পুরস্কার পান ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে এবং এবছরই তিনি ভারত সরকারের শেষ ও শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’ পান। এ ছাড়া দেশে ও বিদেশের চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার।

উপসংহারঃ

চলচিত্রকার সত্যজিৎ রায় (Filmmaker Satyajit Ray) আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। মহৎ সত্যকে জয় করে তিনি চলে গেছেন আমাদের অস্তিত্বের সীমার বাইরে। তার এই মহাপ্রয়াণ হােক মহা-অধিষ্ঠান; তা ছড়িয়ে পড়ুক বঙ্গভূমি থেকে বিশ্বভূমিতে। তার অসামান্য সাফল্যের মূলে আছে শিল্পীর জন্মগত প্রতিভা, পারিবারিক ঐতিহ্য ও আজীবন সাধনার সংমিশ্রণ। এসবের সার্থক সম্মিলনেই তিনি একাধারে সাহিত্যরচনা, শিল্পসাধনা, চিত্রপরিচালনা প্রভৃতি বহুমুখী কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করেছেন। অগণিত দুর্লভ শিরােপা । শিল্প – সাহিত্যজগতে তার আদর্শ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তার অমর আত্মার প্রতি আমাদের বিনম্র প্রণাম।

আরও পডুনঃ ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী

Leave a comment