উৎসবমুখর বাংলার Festive of Bengali and man

Festive of Bengali :The cloud of disaster has repeatedly hovered over the fortunes of the Bengalis. Storms have never endangered its existence. Ever had a famine epidemic with horrible killings. Ever since the state catastrophe has swept him from place to place like a torn vine. Yet his joy did not subside. He has decorated the festive dali in various colors.

উৎসবমুখর বাংলা (Festive of Bengali):

বাঙালির ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের মেঘ বারবার ঘনিয়েছে । ঝড় – ঝঞ্জা – প্লাবন তার অস্তিত্বকে কখনও বিপন্ন করেছে। কখনও দুর্ভিক্ষ মহামারি মেতেছে বীভৎস মারণযজ্ঞে। কখনও রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় তাকে ছিন্নমূল লতার মতাে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে স্থান থেকে স্থানান্তরে। তবু তার আনন্দস্রোতে ভাটা পড়েনি। সে নানারঙে সাজিয়েছে উৎসবের ডালি। উৎসবমুখর দিনের আনন্দঘন মুহূর্তগুলিকে ছড়িয়েছিটিয়ে দিয়েছে জীবনের সুবিস্তৃত আঙিনায়। কারণ, বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি।

উৎসব এর শ্রেণীবিভাগ:

বাঙালি – স্বভাবের অপবাদ আছে ‘ বাঙালি ঘরকুনাে ‘। তাই বলে সে আত্মকেন্দ্রিক নয়। আত্মকেন্দ্রিকতার অর্থ আপনাতে আপনি বদ্ধ। কিন্তু আপনাতে আপনি বাঁধা থাকলে তাে উৎসবানুষ্ঠান হয় না। আমার আনন্দে সকলের আনন্দ হউক, আমার শুভে সকলের শুভ হউক, আমি যাহা পাই তাহা পাঁচজনের সহিত মিলিত হইয়া। উপভােগ করি — এই কল্যাণী ইচ্ছাই উৎসবের প্রাণ উৎসবপ্রাণ। বাঙালি এই কল্যাণী ইচ্ছা পােষণ করে বলেই আর পাঁচজনের সঙ্গে মিলেমিশে উৎসবে মেতে ওঠে। পরস্পরের মধ্যে প্রীতির সম্পর্ক তৈরি হয়। আপনার আনন্দ যেমন বিলিয়ে দেয় আর দশজনকে, তেমনি আর দশজনের আনন্দে ভরে নেয় আপনার হৃদয় – ঘটটি।

বাংলার উৎসবগুলি প্রধানত চার শ্রেণিতে বিভক্ত : ঋতু উৎসব, ধর্মীয় উৎসব, সামাজিক উৎসব ও জাতীয় উৎসব। তবে সুনির্দিষ্ট বিভাজনও ঠিক নয়। যেমন — আপাতদৃষ্টিতে ঋতুবিষয়ক উৎসব বলে যা গণ্য, বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, তার মূলে নিহিত আছে ধর্মীয় প্রেরণা। আর সামাজিকতার প্রভাব তাে। থাকেই, কারণ সমাজের দশজনকে নিয়েই তাে উৎসব।

বাংলার উৎসবমুখর ঋতু (The festive season of Bengal) :

ছয় ঋতুকে ঘিরে বাঙালির অসংখ্য ঋতু উৎসবের আয়ােজন। নাচ, গান ও নাট্যাভিনয়ের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয় বসন্তোৎসব ও শারদোৎসব, এমনকি বর্ষা বন্দনা। বাংলার কৃষি – উৎসবগুলি ঋতু উৎসবেরই এক – একটি অঙ্গ। বর্ষা – সূচনায় অম্বুবাচি, অঘ্রানে নবান্ন, পৌষে পিঠাপার্বণ ও তুষ – তুষালি, বসন্তে হােলি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

ধর্মীয় উৎসব

শক্তিবিধায়ক দেবদেবী হল দুর্গা, কালী, চণ্ডী, ধর্ম, মনসা, অন্নদা, জগদ্ধাত্রী প্রভৃতি। লক্ষ্মী সরস্বতীও ওই পর্যায়ভুক্ত। দুর্গোৎসব বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। শ্যামামায়ের বােধনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় দীপান্বিতা উৎসব। ঐশ্বর্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা হয় শারদ পূর্ণিমায়। মাঘী শ্রীপঞ্চমীতে শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে বাণীবন্দনার আয়ােজন হয়। তা ছাড়া জগদ্ধাত্রী, অন্নপূর্ণা ও বাসন্তীপুজোও অনুষ্ঠিত হয় বছরের বিভিন্ন সময়ে। শিবচতুর্দশী ও শিবের গাজন উৎসব অনুষ্ঠিত হয় বসন্ত ঋতুতে। দোল, ঝুলন, রাস, রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী, অক্ষয়তৃতীয়ায় দেবতা বিষ্ণু পূজিত হন। কার্তিক – সংক্রান্তিতে কার্তিকের ও ভাদ্র – সংক্রান্তিতে বিশ্বকর্মার পুজো হয়।

সামাজিক উৎসব (Social Festive of Bengali) :

সামাজিক উৎসবেও বাঙালি একইভাবে আনন্দে মাতে। পুকুর – পুষ্করিণী প্রতিষ্ঠা , বৃক্ষরােপণ, চূড়াকরণ, উপনয়ন, অন্নপ্রাশন, বিবাহ – শ্রাদ্ধশান্তি ইত্যাদি সামাজিক অনুষ্ঠান। এতে বেদ , পুরাণ , তন্ত্রের প্রভাব আছে। এধরনের উৎসবঅনুষ্ঠানের মূল সমাজের এত গভীরে নিবদ্ধ যে, সমাজের পাঁচজনকে না নিলে এসব উৎসব পূর্ণাঙ্গরূপ লাভ করে না। ভাইফোঁটা, জামাইষষ্ঠীর মতাে স্বজনেসবগুলিও এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য।

বাংলার জাতীয় উৎসব (National Festive of Bengali):

সর্বভারতীয় জাতীয় উৎসবগুলিতেও বাঙালির আনন্দের ঘাটতি থাকে না। বাংলার শহর,নগর ও পল্লিতে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে পতাকা উত্তোলিত হয় ১৫ আগস্ট। মহাত্মা গান্ধির জন্মদিন ও ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসও সাড়ম্বরে উদ্যাপিত হয়। রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি ও বিবেকানন্দের জন্মদিন পালিত হয় উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।

অহিন্দু বাঙালির উৎসব

বাংলাদেশে হিন্দু ছাড়া মুসলমান, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ প্রভৃতি নানা ধর্মাবলম্বী মানুষের বাস। প্রতি ধর্মসম্প্রদায়ের আছে নিজস্ব ধর্মীয় উৎসব। মুসলমানদের ইদ, মহরম প্রভৃতি ; খ্রিস্টানদের গুড ফ্রাইডে, বড়ােদিন প্রভৃতি। গুরু নানকের জন্মদিন উপলক্ষ্যে শিখসম্প্রদায় ও বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষ্যে বৌদ্ধরা উৎসবাদি উদযাপন করে।

বাংলা সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার উৎসব

উৎসবানুষ্ঠান নির্বাধ মেলামেশার পথ প্রশস্ত করে। উৎসবপ্রাঙ্গণে জাতিগত, অর্থগত, সম্প্রদায়গত ভেদাভেদের প্রাচীর অপসারিত হয়। পারস্পরিক প্রীতি ও সৌহার্দ্য বিনিময়ের মাধ্যমে রচিত হয় অপূর্ব সখ্যসূত্র। উৎসব যেখানে, সেখানেই আনন্দ — আর সেই আনন্দযজ্ঞে সবার সাদর আহ্বান। মানুষে মানুষে মহামিলনেই উৎসবের যথার্থ সার্থকতা। উৎসবের প্রয়ােজন আছে, বারাে মাসে তেরাে পার্বণও অনুষ্ঠিত হবে। চিরাভ্যস্ত গতানুতিক একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি পেতে চায় মানুষ ; চায় বৈচিত্র্যের আস্বাদন। চায় আপন গণ্ডিবদ্ধ জীবনকে বৃহত্তর ক্ষেত্রে মুক্তি দিয়ে অসংখ্য প্রাণের স্পর্শে সরস ও মাধুর্যমণ্ডিত করতে। তাই জীবনপ্রবাহের সঙ্গে উৎসবের ধারাও সমান্তরালভাবে অনন্তকাল বয়ে চলবে।

Leave a comment