চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণ, বৈশিষ্ট্য, ফলাফল | Causes Features Consequences of Permanent Settlement
■ কর্নওয়ালিস কেন জমিদারদের সঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে আসতে রাজি হয়েছিলেন তা দেখা যাক। কর্নওয়ালিস নিজেই একবার বলেছিলেন জমিদার বা কৃষকের স্বার্থের কথা ভেবে কিন্তু তিনি এই ব্যবস্থায় আসেননি। এক্ষেত্রে কোম্পানির স্বার্থের কথাই তিনি আগাগোড়া ভেবেছিলেন। ইতিপূর্বে রাজস্ব থেকে কোম্পানির আয়ের কোনো স্থিরতা ছিল না। ওই আয় কখনও বেড়েছে, কখনও কমেছে।
তাই এই ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজস্ব থেকে কোম্পানির আয়কে তিনি নির্দিষ্ট করতে চেয়েছিলেন। তিনি একথাও চিন্তা করেছিলেন যে, ভূমির উপর ব্যক্তিগত মালিকানার অধিকার দান করে তিনি বিদেশি শাসনের প্রতি জমিদারদের আনুগত্য ক্রয় করতে পারবেন। তা ছাড়া, বাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে কৃষির উন্নতিও জড়িত। আর মালিকানার অধিকার পেলে তবেই ভূমির উপর পুঁজি বিনিয়োগ নিশ্চিত হবে।
■ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য:- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দুটি বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে।
প্রথমত, এর ফলে জমিদার ও রাজস্ব সংগ্রাহকরা বংশানুক্রমিকভাবে জমির মালিক হিসাবে স্বীকৃত হয়। অন্যদিকে কৃষকরা কেবল খাজনাদানকারী একদল মানুষে পরিণত হয়। জমি-জমা, বন-জঙ্গল, চারণভূমি ইত্যাদির উপর সমস্ত রকম অধিকার তারা হারায়।
দ্বিতীয়ত, এই ব্যবস্থায় জমিদারদের সরকারকে দেয় ভূমি-রাজস্ব চিরকালের জন্য বেঁধে দেওয়া হলেও কৃষকরা জমিদারকে কী পরিমাণ খাজনা দেবে, তা কিন্তু বেঁধে দেওয়া হল না।
■ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল:- এই বন্দোবস্তের ফলে একদিকে জমিদাররা ভূমির উন্নতি ও রাজস্ব বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিলে জমির মূল্য যেমন বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে তেমনি শিল্প-বাণিজ্যের দিকে না গিয়ে বহু লোক জমিতে মূলধন বিনিয়োগ করতে শুরু করলে কুটিরশিল্প সহ অন্যতর শিল্প-বাণিজ্য উপেক্ষিত হয়। তবে ভূমি-রাজস্ব ব্যাপারে আয় নিশ্চিত হওয়ায় সরকারের পক্ষে বার্ষিক আয়ব্যয়ের একটা ‘বাজেট’ তৈরি করা সহজ হয়। সেইসঙ্গে সরকার শাসনকার্যের অন্যান্য ক্ষেত্রে অধিকতর মনোযোগ দিতে সক্ষম হয়।
এছাড়া মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির উদ্ভব এই বন্দোবস্তের আর একটি ফল। কিন্তু এই বন্দোবস্তে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় জমিদারদের অত্যাচারে তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। তাদের ওপর ক্রমবর্ধমান রাজস্বের হার বৃদ্ধি ছিল এই ব্যবস্থার নিষ্ঠুর পরিণতি। আবার সূর্যাস্ত-আইন অনুসারে নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের আগে রাজস্ব জমা দিতে না পারায় বহু প্রাচীন জমিদারবংশ শেষ হয়ে যায়।
সর্বোপরি, এই ব্যবস্থার ফলে ভূমির মূল্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেলেও ভূমি-রাজস্ব বৃদ্ধির কোনো সুযোগ না থাকায় সরকারের আর্থিক সংগতি সীমিত হয়ে পড়ে।