প্রাণীর সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যসমূহ | Definition and Characteristics of Animals
■ যে সব জীবন্তজীব খাদ্য হিসাবে জৈব পদার্থ গ্রহণ করে এবং যাদের বিশেষ ইন্দ্রিয়স্থান, স্নায়ুতন্ত্র বিদ্যমান এবং যারা উত্তেজনায় সাড়া দেয় তাদের প্রাণী বলে। ‘প্রাণী’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘Animals’ থেকে এসেছে। যার অর্থ ‘শ্বাস-প্রশ্বাস’।
■ প্রাণীর বৈশিষ্ট্যসমূহ:-
● (i) প্রাণীর স্বেচ্ছায় স্থান পরিবর্তন সক্ষম (ব্যতিক্রম- স্পঞ্জ, প্রবাল)
● (ii) প্রাণীর আকার ও আয়তন নির্দিষ্ট।
● (iii) প্রাণীরা কঠিন ও তরল উভয়প্রকার খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।
● (iv) প্রাণীদের পুষ্টি পদ্ধতি পরভোজী প্রকৃতির। (ব্যতিক্রম- ইউগ্লিনা)
● (v) প্রাণীরা সালোকসংশ্লেষে অক্ষম। (ব্যতিক্রম- ইউগ্লিনা, ক্রাইস্যামিবা)
● (vi) প্রাণীদের বৃদ্ধি সুষম, মৃত্যুর বহু পূর্বেই এদের বৃদ্ধি শেষ হয়ে যায়।
● ( vii ) প্রাণীদের সুনির্দিষ্ট রেচনতন্ত্র থাকে।
● (viii) প্রাণীদের স্নায়ুতন্ত্র আছে (ব্যতিক্রম- এককোষী প্রাণী)
● (ix) প্রাণীদেহে সুনির্দিষ্ট শ্বাসযন্ত্র বিদ্যমান।
● (x) প্রাণীদের ভ্রূণ কোন অবস্থাতেই সুপ্ত থাকে না।
■ প্রাণীর শ্বাসযন্ত্র:- বাসস্থানের প্রকৃতি এবং অভিযোজন ও অভিব্যক্তির ওপর নির্ভর করে এক এক জাতীয় প্রাণীদের এক এক রকম শ্বাসযন্ত্র দেখা যায়। এখানে বিশেষ কয়েকটি প্রাণীর শ্বাসযন্ত্রের নাম উল্লেখ করা হল:-
● (i) অ্যামিবা, স্পঞ্জ, হাইড্রা ইত্যাদি প্রাণীদের নির্দিষ্ট কোন শ্বাসযন্ত্র থাকে না। এরা সমগ্র দেহতল দিয়ে শ্বাসকার্য চালায়।
● (ii) কেঁচো, জোঁক প্রভৃতি প্রাণীদের সুনির্দিষ্ট শ্বাসযন্ত্র থাকে না। এরা দেহের ত্বক বা চামড়া দিয়ে শ্বাসকার্য চালায়।
● (iii) সন্ধিপদ পর্বের পতঙ্গ শ্রেণিভুক্ত প্রাণীরা যেমন- আরশোলা, প্রজাপতি, ফড়িং ইত্যাদি প্রাণীদের প্রধান শ্বাসযন্ত্র হল 10 জোড়া শ্বাসছিদ্র বা স্ফিরাকল এবং শ্বাসনালী বা ট্রাকিয়া।
● (iv) বেশিরভাগ জলজ প্রাণী যেমন- মাছ, চিংড়ি, জলজ পতঙ্গ, শামুক ইত্যাদি প্রাণীর প্রধান শ্বাসযন্ত্র ফুলকা। ফুলকা ছাড়া কই, শিঙ্গি, মাগুর ইত্যাদি জিওল মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র থাকে।
● (v) মাকড়সার শ্বাসযন্ত্র ফুসফুস বই বা লাঙ বুক।
● (vi) ব্যাঙাচির শ্বাসযন্ত্র প্রধানত বহিঃফুলকা।
● (vii) উভচর প্রাণী ব্যাঙের প্রধান শ্বাসযন্ত্র ফুসফুস হলেও এরা ভিজে চামড়া বা ত্বকের সাহায্যে এবং মুখবিবর গলবিলীয় মিউকাস পর্দার সাহায্যেও শ্বাসকার্য চালায়।
● (viii) সরীসৃপ, পক্ষী এবং স্তন্যপায়ী শ্রেণির প্রাণীদের শ্বাসযন্ত্র ফুসফুস বা লাঙ। মানুষের প্রধান শ্বাসযন্ত্র ফুসফুস।
■ প্রাণিদেহে সংবহন এককোষী প্রাণীদের ক্ষেত্রে সংবহন প্রক্রিয়াটি ব্যাপনের মাধ্যমে এবং প্রোটোপ্লাজমের স্ট্রিমিং চলন -এর মাধ্যমে সংঘটিত হয়। বহুকোষী প্রাণী স্পঞ্জ, হাইড্রা, ইত্যাদি প্রাণীর দেহেও কোন সংবহনতন্ত্র থাকে না। স্পঞ্জের দেহে নালীতন্ত্র বা ক্যানাল সিস্টেম অবস্থিত। তারা মাছ নামক সামুদ্রিক প্রাণীর দেহে জল সংবহন তন্ত্র থাকে। বেশিরভাগ উন্নত প্রাণীর সংবহন প্রক্রিয়াটি দেহে অবস্থিত সংবহনতন্ত্রের মাধ্যমে ঘটে।