আধুনিক জীবনে কম্পিউটার | Computers in Modern Life Essay in Bengali
[প্রবন্ধ-সংকেত- ভূমিকা | গঠন প্রণালী কম্পিউটরের শ্রেণী বিভাগ | ব্যবহার ক্ষেত্র | ভারতে প্রচলন | উপসংহার]
■ ভূমিকা:- বিজ্ঞান তার আবিষ্কারের মহারথ অবিশ্রান্ত গতিতে এগিয়ে এনে সাম্প্রতিক কালে বিস্ময়কর যে বস্তুটি উপহার দিয়েছে তা হল— ‘কম্পিউটর’। যার বাংলা প্রতিশব্দ ‘যন্ত্রগণক’। ইংরাজী অভিধানে এই শব্দটি ছিল না। ১৯৬৪ সালে এই শব্দটি ল্যাটিন ‘Computair’ শব্দটির নব রূপান্তররূপে অভিধানে স্বীকৃতি পেয়েছে।
ইংরেজ গণিতবিদ্ Charles Cabbage এই শতাব্দীর বিস্ময়কর শ্রেষ্ঠতম উপহারটি বিশ্বের মাঝে উন্মুক্ত করেছেন তাঁর অসামান্য আবিষ্কারের মাধ্যমে। যে কোন সরল বা জটিল অঙ্ক, যে কোন তথ্য, যে কোন সমস্যার সহজ সমাধানে এই বৈজ্ঞানিক অবদানটির জুড়ি নেই। কম্পিউটর বর্তমানে বিশ্বকে আধুনিকতা, নির্ভুল ক্ষিপ্রতার দিকে অনেকটা অগ্রসর করে দিয়েছে।
■ গঠন প্রণালী:- কম্পিউটরের গঠন প্রণালী অত্যন্ত জটিল। মানবদেহে যেমন প্রধান অঙ্গ মস্তিষ্ক। তেমনি কম্পিউটারের প্রধান শক্তি হল তার মগজ— ‘Central Processing Unit’। কম্পিউটরের দুটি অংশ আছে, ‘input’ এবং ‘output’। input অংশটির কাজ হল তথ্য সংগ্রহ করা আর output -এর কাজ হল গৃহীত তথ্যগুলিকে বাইরে প্রকাশ করা। কম্পিউটরের নিজস্ব ভাষা সংকেত আছে, যাকে বলা হয়— ‘Programing Language’।
তাছাড়া কম্পিউটরকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করতে তার সঙ্গে যুক্ত করা হয়, ‘Type write key Board’, ‘Line Printer’, Cardriver’, ‘Card Punch’ ও Magnet Tape !
এছাড়াও অন্যান্য অপ্রধান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ নিয়ে কম্পিউটর গঠন করা হয়।
■ কম্পিউটরের শ্রেণী বিভাগ:- বিজ্ঞানের গবেষণাগার থেকে শুরু করে কারখানা এমন কি ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের কাছেও নানা শ্রেণীর বৃহৎ ও ক্ষুদ্র কম্পিউটর দেখা যায়। ক্যালকুলেটরও এক শ্রেণীর কম্পিউটর। নানা ধরনের কম্পিউটরের মধ্যে মূলতঃ ‘Univar’, ‘I. B. M. –640’, ‘System – 360’, I. C.N – 2900 এবং ‘Super Computer Cyber বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
■ ব্যবহার ক্ষেত্র:- কম্পিউটরের ব্যাপক ব্যবহার সর্বপ্রথম দেখা গিয়েছিল, পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রে, ক্ষেপণাস্ত্রাগারে ও কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণাগারে। পরবর্তীকালে লৌকিক ব্যবহার ক্ষেত্র যেমন— ব্যাঙ্ক, রেলের আসন সংরক্ষণ, চিকিৎসা, আয়ব্যয় হিসাব নির্ধারণ, জনগণনা, শিক্ষাদান প্রভৃতিতে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় কম্পিউটরের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ ও গণনা করা হয়েছে।
তাছাড়া আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ণয় করতে এখন যন্ত্রগণকই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এমনকি এর সাহায্যে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, চোর ডাকাত ধরা, শিল্প, বাণিজ্য, সাহিত্য সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য জানা যায়।
■ ভারতে প্রচলন:- বিশ্বের প্রতিটি দেশে যখন কম্পিউটরের বিস্ময়কর ব্যবহার ব্যাপক হারে চালু হয়েছিল। তার অনেক পরে ১৯৭৫ সালে ভারতে কম্পিউটরের ব্যবহার প্রচলন করা হলেও বেকারী বৃদ্ধির যুক্তি প্রদর্শন করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এর প্রয়োগে বাধা দিয়েছিল। ১৯৮৪ সালে ভারত সরকার কম্পিউটর নীতি স্থির করে দেশে ব্যাপকভাবে কম্পিউটর ব্যবহারের পথ প্রশস্ত করে দেয়। বর্তমানে ভারতে বিভিন্ন সরকারী ও বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকহারে কম্পিউটর ব্যবহারের পথ প্রশস্থ করে দেয়। বর্তমানে ভারতবর্ষের বিভিন্ন সরকারী ও বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকহারে কম্পিউটর ব্যবহার চলছে। এর ফলে কিছু সংস্থায় কর্মী নিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেলেও তার প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হয়নি। কম্পিউটরের Automotion -এর মাধ্যমে হয়তো কর্মী নিয়োগ কিছু পরিমাণে কম হয়। কিন্তু এর মাধ্যমেই ভারত আধুনিক বিশ্বের অগ্রগতিশীল অন্যান্য উন্নত দেশগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েনি।
■ উপসংহার:- কম্পিউটর ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবীতে সমগ্র ভারতে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি এর প্রতিবাদে বিরোধীরা মিটিং মিছিল, স্লোগানে চতুর্দিকে ভরিয়ে তুলেছে। তাদের মূল বক্তব্য — এতে বেকার সমস্যা বাড়বে। কম্পিউটর হয়তো সত্যিই বেকরা বৃদ্ধি করবে? কিন্তু কম্পিউটর ছাড়া আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক প্রগতির যুগে ভারতবাসী নিশ্চিতভাবে পিছিয়ে পড়বে একথা অস্বীকার করা যাবে না। তাইতো আজ বৃত্তিমূলক শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটর পাঠাসূচীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বহু ছাত্র-ছাত্রী এই বিদ্যা অর্জন করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের মত দরিদ্র দেশে লক্ষ লক্ষ বেকারের জীবনে তথা ব্যবসা ক্ষেত্রে কম্পিউটর আশীর্বাদ রূপে যে ভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে, তা যেন সর্বদা মানবিক কল্যাণেই ব্যবহৃত হয়। অন্যথায় কম্পিউটর সর্বক্ষেত্রে অনর্থ বহন করবে।