ভূমিকম্পের শ্রেণিবিভাগ | Classification of Earthquake in Bengali
■ প্রশ্ন:- ভূমিকম্পের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো। (Classification of Earthquake).
■ উত্তর:- উৎপত্তির কারণ ও আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ভূমিকম্পকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –
● (ক) উৎপত্তির কারণ অনুযায়ী (On the basis of causative factors),
● (খ) ভূমিকম্পের কেন্দ্রের গভীরতা অনুযায়ী (On the basis of seismic centre) এবং
● (গ) মানুষের হতাহতের সংখ্যা অনুযায়ী (On the basis of human casualities)।
■ (ক) উৎপত্তির কারণ অনুযায়ী:- উৎপত্তির কারণ অনুযায়ী ভূমিকম্প প্রধানত দুই ধরনের হয়–
(১) প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট ভূমিকম্প ও
(২) মন্যুষ্যসৃষ্ট ভূমিকম্প।
❏ (১) প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট ভূমিকম্প (Natural earthquakes):-
● (i) ভূগাঠনিক ভূমিকম্প (Tectonic earthquakes):- ভূগর্ভে শিলাস্তরে চ্যুতির ফলে যে ধরনের ভূমিকম্প হয়, সেই ভূমিকম্পকে ভূগাঠনিক ভূমিকম্প বলা হয়। যেমন – ১৯০৬ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়-সংঘটিত ভূমিকম্প।
● (ii) অগ্ন্যুগমজনিত ভূমিকম্প (Volcanic earthquakes):- আগ্নেয়গিরি থেকে উৎক্ষিপ্ত গলিত ম্যাগমা, ছাই, ভস্ম ইত্যাদির বিস্ফোরণের ফলে অগ্ন্যুদগমজনিত ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। যেমন আগ্নেয়গিরি থেকে লাভ। নিঃসরণের সময় সৃষ্ট ভূমিকম্প।
● (iii) সমস্কৃৈতিক ভূমিকম্প (Isostatic earthquakes):- ভূপৃষ্ঠের পাহাড়, পর্বত, মালভূমি, সমভূমি প্রভৃতি ম্যান্টলের ওপর সমস্থৈতিক অবস্থায় বিদ্যমান। এই সমস্থৈতিক অবস্থার সামঞ্জস্য বিনষ্ট হলে যে ধরনের ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়, সেই ভূমিকম্পকে সমস্থৈতিক ভূমিকম্প বলে।
● (iv) প্লুটোনিক ভূমিকম্প (Plutonic earthquakes):- পাতালিক বা প্লুটোনিক ভূমিকম্প ভূগর্ভে ২৪০ কিমি ৬৭০ কিমি গভীরতায় সৃষ্ট হয়।
■ (খ) ভূমিকম্পের কেন্দ্রের গভীরতা অনুযায়ী ভূমিকম্পের কেন্দ্রের গভীরতার ওপর ভিত্তি করে ভূতত্ত্ববিদ গুটেনবার্গ ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন –
● (১) অগভীর ভূমিকম্প (Shallow foci / moderate earthquakes):- সমুদ্রতল থেকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র ৫০ কিমি গভীরতায় অবস্থান হেতু যে ভূকম্পন অনুভূত হয়, সেই ভূকম্পনকে অগভীর ভূমিকম্প বলে।
● (২) মধ্যম গভীরতার ভূমিকম্প (Intermediate foci earthquakes):- ভূমিকম্পের কেন্দ্র ৫১ কিমি – ২৫০ কিমি গভীরতায় অবস্থান করলে, সেই ধরনের ভূমিকম্পকে মধ্যম গভীরতার ভূমিকম্প বলে।
● (৩) গভীর ভূমিকম্প (Deep foci earthquakes):- ভূমিকম্পের কেন্দ্রের গভীরতা ২৫১ কিমি – ৭০০ কিমি গভীরতায় অবস্থান করলে, সেই ভূকম্পনকে গভীর ভূমিকম্প বলে।
■ (গ) মানুষের হতাহতের সংখ্যা অনুযায়ী:-
● (১) অতিপ্রকাণ্ড বিধ্বংসী ভূমিকম্প (Most hazardous earthquakes):- ভূমিকম্পের ফলে কোনো অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা ১,০০,০০০ এর বেশি হলে , সেই ধরনের ভূমিকম্পকে অতিপ্রকাণ্ড বিধ্বংসী ভূমিকম্প বলে। যেমন – ১৯৭৬ সালে চিনের তানসান অঞ্চলে (Tangshan) ভূমিকম্পের ফলে ২,৫০,০০০ জনের জীবনহানি হয়।
● (২) প্রকাণ্ড বিধ্বংসী ভূমিকম্প (Highly hazardous earthquakes):- ভূমিকম্পের ফলে কোনো অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ -এর মধ্যে হলে, সেই ধরনের ভূমিকম্পকে প্রকাণ্ড বিধ্বংসী ভূমিকম্প বলে। যেমন – ১৯৩৫ সালে বেলুচিস্তানের কোয়েটা অঞ্চলে সংঘটিত ভূমিকম্পে ৬০,০০০ জনের মৃত্যু হয়।
● (৩) মধ্যম প্রকৃতির বিধ্বংসী ভূমিকম্প (Moderately hazardous earthquakes):- ভূমিকম্পের ফলে কোনো অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা ৫০,০০০ জনের কম হলে সেই ধরনের ভূমিকম্পকে মধ্যম প্রকৃতির বিধ্বংসী ভূমিকম্প বলে। ১৯৯০ সালের উত্তর ইরানে ৫০,০০০ জন মানুষ ভূমিকম্পের জন্য প্রাণ হারায়।