মোগল শাসনতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Mughal Rule




Hello Students,


Wellcome to edu.bengaliportal.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা,  edu.bengaliportal.com আজ আমরা নিয়ে এসেছি Characteristics of Mughal Rule. প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষার যেমন  CTET | WBTET | WBCS । MPTET | ATET| UPTET | Rajasthan PTET | TNTET | Karnataka TET | RTET | HTET| PSTET। BANK EXAM। ইত্যাদি পরীক্ষার বিভিন্ন প্রস্তুতি পত্র আপনাদের বিনামূল্যে দিয়ে এসেছি। তাই Ajjkal.com আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে মোগল শাসনতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Mughal Rule

Ajjkal



মোগল শাসনতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Mughal Rule

প্রায় দুশো বছরেরও বেশি সময় ধরে মোগলরা ভারতবর্ষে রাজত্ব করেছিলেন। তাদের দীর্ঘ রাজত্বকালে ভারতবর্ষে এক উন্নত শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠে। মোগল শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সুলতানি শাসনব্যবস্থার মৌলিক পার্থক্য ছিল।



[১] এককেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা : সম্রাট নিজেই ছিলেন মোগল শাসনব্যবস্থা তথা কেন্দ্রীয় প্রশাসনের প্রধান। সাম্রাজ্যের সমস্ত বিষয়ে তাঁর ক্ষমতা ছিল অবাধ ও সীমাহীন। তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের আইন, বিচার ও প্রশাসনব্যবস্থার প্রধান। বিচার বিভাগের প্রধান হিসাবে তিনি আইন রচনা করতেন। মোগল সম্রাটদের ক্ষমতা অবাধ হলেও তাঁরা পুলিশি রাষ্ট্র গঠন করেন নি, সব সময়েই তাঁরা আইন শৃঙ্খলা স্থাপন ও প্রজাদের ধন-প্রাণ রক্ষা করতেন। কেন্দ্রীয় প্রশাসন পরিচালনার জন্য মোগল সাম্রাজ্যে অসংখ্য বিভাগ ছিল এবং কয়েকজন মন্ত্রী এই বিভাগগুলির তত্ত্বাবধান করতেন। এইসব মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে সাম্রাজ্যের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিজে নিতেন। যেহেতু মোগল আমলে সমগ্র শাসনব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকার ও আমলাতন্ত্রের দ্বারা পরিচালিত হত, তাই মোগল শাসনব্যবস্থাকে ‘এককেন্দ্রীভূত রাজতন্ত্র’ বলা যায়।




[২] রাজনৈতিক সংহতি : মুঘল রাজতন্ত্রের অপর বৈশিষ্ট্য হল ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপন। প্রাচীন কালে ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য বিশেষ ছিল না। প্রাচীন যুগে হিন্দু সাম্রাজ্যগুলি ছিল কয়েকটি রাজ্য বা প্রদেশের যোগফল মাত্র। এমনকি বিজিত প্রদেশগুলিতে একই ধরনের শাসন ব্যবস্থাও প্রচলন করা হয় নি। কিন্তু মোগল শাসকরা সারা ভারত জয় করে সর্বত্র একই ধরনের শাসনব্যবস্থা এবং একই ধরনের রীতিনীতি প্রবর্তন করে ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য সাধনে সাহায্য করেন। সারা দেশে সরকারিভাবে একই ভাষা ও একই মুদ্রার প্রচলন করার ফলে আঞ্চলিকতা বা রাজ্যে রাজ্যে বিভেদ অনেকটা কমে যায়। সরকারি কর্মচারী ও সৈন্যদের এক সুবা বা এক রাজ্য থেকে অন্য সুবায় বদলির নিয়ম চালু করায় মোগল শাসনাধীন রাজ্যগুলির রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা অনেকাংশে দূর হয়ে সুদৃঢ়ভাবে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

[৩] প্রাদেশিক সরকারের ওপর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ : মোগল আমলে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার ওপরও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রবল নিয়ন্ত্রণ ছিল। প্রদেশ বা সুবাগুলির শাসনকর্তাকে বলা হত সুবাদার বা ‘নাজিম’ বা ‘সিপাহসলার’। সুবাদারকে নিয়োগ করার একমাত্র অধিকারী ছিলেন সম্রাট। সুবাদারের চাকরির মেয়াদ নির্ভর করত সম্রাটের ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর। গুপ্তচর নিয়োগ করে কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারের কাজকর্মের খোঁজখবর রাখতেন।




[৪] মনসবদারি প্রথা : মোগল আমলের এককেন্দ্রীভূত শাসন ক্ষমতার অন্যতম মাধ্যম ছিল মনসবদারি ও জায়গিরদারি প্রথা। শাসনব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে আকবরের আমল থেকে প্রভাবশালী অভিজাতদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংহতি আনার জন্য মনসবদারি প্রথার প্রবর্তন করা হয়। মনসবদারি কথার অর্থ পদ মর্যাদা। মনসবদাররা সাম্রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও অসামরিক বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতেন। মনসবদারি প্রথার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল এই যে :

(১) প্রতিটি মনসবদারকে নির্দিষ্ট সংখ্যক সেনা রাখতে হত।

(২) মনসবদাররা যোগ্যতার ভিত্তিতে নিযুক্ত হতেন এবং এই প্রথা জমিদারি প্রথার মতো বংশানুক্রমিক ছিল না।

(৩) মনসবদারদের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে বদলি করার রীতি প্রচলিত ছিল।

(৪) মনসবদারদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদচ্যুতি — সমস্তই ছিল সম্রাটের ইচ্ছাধীন।

(৫) মনসবদারদের বেতন ও পদমর্যাদা তাঁদের অধীনস্থ সেনাবাহিনীর সংখ্যার উপর নির্ভর করতো। মনসবদারদের পদমর্যাদার ৩৩ টি স্তর ছিল এবং ক্রমানুসারে এঁরা ১০ থেকে ১০,০০০ পর্যন্ত সৈন্য রাখার অধিকার পেতেন। মসবদারি প্রথা মোগল সাম্রাজ্যের স্থায়িত্বকে দীর্ঘায়িত করেছিল এবং মোগল সম্রাজ্যের শক্তি ও সংহতি এই প্রথার উপর নির্ভরশীল ছিল। এই বক্তব্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে অধ্যাপক সতীশচন্দ্রের এই মন্তব্যে, “দেশে সার্ধশত বর্ষাধিক অভাবনীয় ঐক্য ও সুশাসন স্থাপনের কাজে এটি বিশেষভাবে সহায়ক হয়েছিল সন্দেহ নাই।”

জায়গিরদারি প্রথা : মোগল আমলে যেসব মনসবদারকে নগদ টাকায় বেতনের পরিবর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ জর্মি বা মহল দেওয়া হত, তাঁরা জায়গিরদার নামে পরিচিত ছিলেন। বেতনের পরিবর্তে নির্ধারিত রাজত্ব সংগ্রহের মধ্যেই জায়গিরদারদের অধিকার সীমিত থাকত। জায়গিরদার হিসাবে রাজকীয় আইন-কানুন উপেক্ষা করার কোনো অধিকার জায়গিরদারকে দেওয়া হত না। এমনকি জায়গিরদারদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সংবাদনবীশ (সংওয়ার্নিগির) নামে একটি দপ্তর ছিল। এই দপ্তরের কর্মচারীরা জায়গিরদারের কার্যকলাপের বিবরণ নিয়মিতভাবে সম্রাট তথা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পেশ করতেন। এইভাবে জায়গিরদারদের ওপর সম্রাট তথা কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা হত।

[৬] ভূমি রাজস্ব নিয়ন্ত্রণ : মোগল আমলের ভূমি – রাজস্ব ব্যবস্থা সপ্তদশ শতকের শেষ পর্যন্ত সামান্য পরিবর্তন করে মোটামুটি একই থাকে। সাম্রাজ্যের ভূমি রাজস্ব পরিচালন ব্যবস্থার ওপর সম্রাট তথা কেন্দ্রীয় সরকারের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ ছিল। রাজস্ব সংগ্রহ ও তার সংগ্রহের দায়িত্ব থাকত দেওয়ান-ই-উজিরত বা রাজস্ব মন্ত্রকের ওপর। এই মন্ত্রকের কাজকর্ম যথাক্রমে কেন্দ্র, প্রদেশ সরকার ও পরগণা — এই চারটি স্তরে পরিচালনা করা হত। প্রথম অবস্থায় শেরশাহ প্রবর্তিত রাজস্ব-নীতির অনুকরণে মোগল সাম্রাজ্যের রাজস্ব-নীতি গড়ে তোলা হয়। পরবর্তী সময়ে শাহ মনসুর ও মহারাজ টোডরমল মোগল রাজস্বনীতির গঠনগত পরিবর্তন ঘটান।

● টোডরমল প্রবর্তিত রাজস্ব ব্যবস্থা ‘জাবতি’ প্রথা নামে পরিচিত, এই প্রথার প্রধান তিনটি দিক ছিল :

(১) আবাদি জমিকে নির্ভুল ভাবে জরিপ করা;

(২) প্রতি বিঘার উৎপন্ন শস্যের পরিমাণের গড় নির্ণয় করা; এবং

(৩) প্রতি বিঘার রাজস্বের হার স্থির করা। টোডরমলের রাজস্ব ব্যবস্থায় আগের দশ বছরের কৃষির গড় উৎপাদন ও গড় মূল্যের ভিত্তিতে রাজস্ব স্থির করার ব্যবস্থা করা হয়। নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় ভূমিজাত শস্যের এক-তৃতীয়াংশ রাষ্ট্রীয় খাজনা হিসাবে ধার্য করা হয়। কৃষকরা শস্যের বদলে নগদ টাকায় খাজনা দিতে পারত। আমিন, কানুনগো, পাটোয়ারী প্রমুখ কর্মচারী রাজস্ব বিভাগের নানান কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আকবরের আমলে কেন্দ্রীয় টাকশালের (mint) সংস্কার এবং রৌপ্যমুদ্রার সঙ্গে স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করা হয়। স্মিথ মোগল মুদ্রানীতির প্রশংসা করেছেন।







Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন।