নিরক্ষীয় চিরসবুজ অরণ্যের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Equatorial Evergreen Forests
■ প্রশ্ন:: নিরক্ষীয় চিরসবুজ অরণ্যের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো। (Characteristics of Equatorial Evergreen Forests)
❏ উত্তর:- নিরক্ষীয় চিরসবুজ অরণ্যের বৈশিষ্ট্য:- নিরক্ষীয় চিরসবুজ অরণ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
● (১) এই অরণ্যাঞ্চলে সারাবছর প্রবল উষাতা এবং প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটে বলে এখানে খুব বেশি পরিমাণে গাছপালা জন্মায় এবং সেগুলি অত্যন্ত দ্রুত বড়ো হয়।
● (২) সারাবছর প্রচুর বৃষ্টিপাতের জন্য এই অরণ্যের গাছের পাতাগুলি খুবই বড়ো ও চওড়া হয় এবং এগুলি সারাবছর সবুজ থাকে। এ ছাড়া গাছের গোড়ায় লতাগুল্ম, আগাছা প্রভৃতি প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এই কারণে এই বনভূমি খুবই দুর্গম বা দুর্ভেদ্য।
● (৩) এই অঞ্চলের ঘন অরণ্যে সূর্যের আলো গ্রহণ করার জন্য গাছগুলি খুব তাড়াতাড়ি লম্বা হয় এবং এগুলি ওপরে উঠে। পরস্পরের সঙ্গে মিশে এক নিশ্ছিদ্র আচ্ছাদন বা চাঁদোয়ার সৃষ্টি করে। ফলে সূর্যের আলো গাছের গোড়ায় প্রবেশ করতে পারে না। এই কারণে এই অরণ্যের মধ্যে এক অন্ধকারময় পরিবেশ লক্ষ করা যায়। এই জন্য নিরক্ষীয় বনভূমিকে চিরগোধূলি অঞ্চল বলে।
● (৪) নিরক্ষীয় অরণ্যে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পাশাপাশি জন্মায়।
● (৫) ঘন ও দুর্গম বনভূমি এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছের একত্র সমাবেশের জন্য কাঠ সংগ্রহ করা খুবই কষ্টসাধ্য।
● (৬) এই অরণ্যের গাছের শাখাপ্রশাখায় অর্কিড জাতীয় পরগাছা জন্মায়।
● (৭) এই অরণ্য অঞ্চলের মাটি খুবই আর্দ্র থাকে বলে গাছের শিকড় বেশি দূর ছড়ায় না।
■ প্রশ্ন:: ক্রান্তীয় পাতাঝরা বনভূমির বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো। (Characteristics of Tropical Deciduous Forests)
❏ উত্তর:- ক্রান্তীয় পাতাঝরা বনভূমির বৈশিষ্ট্য:- ক্রান্তীয় পাতাঝরা বনভূমির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
● (১) এই প্রকার বনভূমি মূলত মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে গড়ে ওঠে বলে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত হয় (গড়ে ১০০-২০০ সেমি) এবং শীতকাল শুষ্ক থাকে। এই কারণে শুষ্ক ঋতুতে গাছগুলি কেবল মাটি থেকেই সামান্য জল সংগ্রহ করতে পারে এবং তা যাতে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় পাতা দিয়ে বেরিয়ে না যায় সেজন্য শুষ্ক ঋতুতে গাছগুলি বেশিরভাগ পাতা ফেলে দিয়ে আত্মরক্ষা করে। এইভাবে বছরের একটি বিশেষ সময়ে গাছের অধিকাংশ পাতা ঝরে যায় বলে এই অরণ্যকে পাতাঝরা বা পর্ণমোচী অরণ্য বলে।
● (২) বনভূমির বেশি বৃষ্টিযুক্ত অঞ্চলে আর্দ্র পাতাঝরা এবং কম বৃষ্টিযুক্ত অঞ্চলে শুষ্ক পাতাঝরা গাছ জন্মায়।
● (৩) এই বনভূমি চিরসবুজ বনভূমির মতো খুব বেশি ঘন হয় না।
● (৪) এই বনভূমির গাছগুলি বিভিন্ন আকৃতির এবং বিভিন্ন উচ্চতাবিশিষ্ট হয়। অর্থাৎ কোনো কোনো গাছ লম্বা এবং কোনো কোনো গাছ মাঝারি উচ্চতার হয়।
● (৫) এই বনভূমির শাল, সেগুন প্রভৃতি গাছের পাতা খুব বড়ো হয় এবং আম, জাম, শিশু, কুল প্রভৃতি গাছের পাতা মাঝারি বা ছোটো হয়।
● (৬) আর্দ্র পাতাঝরা বনভূমির তলদেশে ঘন ঝোপঝাড় দেখা যায়। এই বনভূমি অঞ্চলে ঘন বাঁশঝাড় জন্মায়।
● (৭) ক্রান্তীয় পাতাঝরা বনভূমির গাছের গুঁড়ি অত্যন্ত মোটা হয় এবং গাছের ছাল খুবই পুরু ও অমসৃণ হয়।
● (৮) এই বনভূমির অধিকাংশ গাছের কাণ্ডের নীচু অংশ থেকেই ডালপালা জন্মায়।