সমুদ্রজলের লবণতার তারতম্যের কারণগুলি | Causes of Variation in Seawater Salinity
■ প্রশ্ন:- সমুদ্রজলের লবণতার তারতম্যের কারণগুলি ব্যাখ্যা করো। অথবা, সমুদ্রজলের লবণতার তারতম্যের প্রধান চারটি কারণ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো। (Causes of Variation in Seawater Salinity).
■ উত্তর:- পৃথিবীব্যাপী সর্বত্র সমুদ্রজলের লবণতার পরিমাণ একই রকম হয় না। স্থানভেদে সমুদ্রজলে লবণতার তারতম্য লক্ষ করা যায়। সমুদ্রজলে লবণতার তারতম্যের কারণগুলি নিম্নরূপ-
❏ (1) বাষ্পীভবন (Evaporation):- সমুদ্রজলের বাষ্পীভবনের ওপর লবণতার পরিমাণ নির্ভর করে। বাষ্পীভবনের হার বেশি হলে জলের পরিমাণ কমে যায়, কিন্তু সমুদ্রজলের ঘনত্ব কমে যাওয়ায় লবণতার পরিমাণ বাড়ে। প্রখর সূর্যরশ্মি, বৃষ্টিবিরল দিনের সংখ্যা ও বায়ুপ্রবাহের তীব্রতা প্রভৃতি বিষয়গুলি সমুদ্রজলে বাষ্পীভবনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রান্তীয় অঞ্চলে উষ্মতার আধিক্য হেতু বাষ্পীভবনের হার বেশি, অন্যদিকে মেরু অঞ্চলে বাষ্পীভবনের স্বল্পতার দরুন সমুদ্রের জল কম লবণাক্ত হয়।
❏ (২) অধঃক্ষেপন (Precipitation):- অধঃক্ষেপন অর্থাৎ বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত কোনো কোনো অঞ্চলে সমুদ্রজলের লবণতার পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে। অধঃক্ষেপনের পরিমাণ বাড়লে সমুদ্রে স্বাদুজলের পরিমাণ বেড়ে যায়। অন্যদিকে, লবণতার ঘনত্ব ক্রমশ কমতে থাকায় সমুদ্রের জল কম লবণাক্ত হয়। যেমন নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রখর সূর্যরশ্মির প্রভাব থাকা সত্ত্বেও বৃষ্টিপাতের আধিক্য হেতু সমুদ্রের জল উষা ও অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টিপাতযুক্ত ক্রান্তীয় অঞ্চলের তুলনায় লবণতার পরিমাণ কম। মেরু ও মেরুবৃত্ত অঞ্চলে তুষারপাত সংঘটনের কারণে সমুদ্রের জলে বরফগলা জলের পরিমাণ বেড়ে গেলে লবণের পরিমাণ কম হয়।
❏ (৩) নদীবাহিত জলের পরিমাণ (Amount of River Water):- সমুদ্রের যেসকল অংশে বড়ো বড়ো নদী এসে মেশে সেখানের সমুদ্রজলে লবণতার পরিমাণ কম হয়। যেমন— গঙ্গা, আমাজন, ইয়াংসিকিয়াং নদীর মোহনার নিকটবর্তী অঞ্চলের সমুদ্রজলে লবণতা কম। অন্যদিকে, লোহিত সাগরে কোনো নদী-মোহনা না থাকায় সমুদ্রজল লবণাক্ত হয়।
❏ (৪) সমুদ্রজলের সঞ্চালন (Movement of Sea water):- উন্মুক্ত সমুদ্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকায় সমুদ্রের জল অনায়াসে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচল করতে পারে। এই কারণে অধিক লবণাক্ত জল অপেক্ষাকৃত কম লবণাক্ত জলের সঙ্গে সংমিশ্রণের ফলে লবণতার পরিমাণে সমতা বজায় থাকে। অন্যদিকে, স্থলবেষ্টিত বা আংশিক আবদ্ধ সমুদ্রে জলের অবাধ সঞ্চালন না থাকায় লবণতার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যেমন উন্মুক্ত ভারত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের তুলনায় আংশিকভাবে আবদ্ধ ভূমধ্যসাগরের জল বেশি।
❏ (৫) লবণাক্ত জোয়ারভাটার প্রভাব (Influence of Tides):- জোয়ারের জলে পুষ্ট নদীগুলিতে জোয়ারের সময় লবণতার পরিমাণ বাড়ে; অন্যদিকে, ভাটার টানে নদীর স্বাদু বা মিষ্টি জল সমুদ্রে মিশে গেলে সমুদ্রজল কম লবণাক্ত হয়।
❏ (৬) অভিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি (Excessive Rain or Paucity of rainfall):- নদী-বিধৌত অঞ্চলে অতিবৃষ্টির ফলে সমুদ্রে নদীবাহিত জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, সমুদ্রের জল কম লবণাক্ত হয়; অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে অনাবৃষ্টির ফলে নদীবাহিত জলের পরিমাণ কমে গেলে সমুদ্রজলে লবণতার পরিমাণ বেড়ে যায়।
❏ (৭) বায়ুচাপ ও বায়ুপ্রবাহ (Air Pressure & Wind direction):- বায়ুচাপ ও বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রজলে লবণতার তারতম্য ঘটায়। উচ্চচাপবিশিষ্ট অঞ্চল থেকে বায়ু সবসময় নিম্নচাপবিশিষ্ট অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।