অসহযোগ আন্দোলনের কারণ | Causes of Non-Cooperation Movement
■ প্রশ্ন: অসহযোগ আন্দোলনের কারণগুলি লেখো। এই আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছিল কেন? (Causes of Non Cooperation Movement)
■ উত্তর:- অসহযোগ আন্দোলনের কারণ:-
■ মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের ব্যর্থতা:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতের জনগণ ইংরেজ সরকারকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেছিল। ভারতবাসী আশা করেছিল যে, যুদ্ধে সাহায্যদানের বিনিঅধিকারময়ে ইংরেজ সরকার তাদের স্বায়ত্তশাসনের দেবে।
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতসচিব মন্টেগুর ঘোষণায় এই রকমই আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে জাতীয়তাবাদীদের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় সক্রিয় আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবি পূরণে তারা সচেষ্ট হতে থাকে।
■ অর্থনৈতিক অসন্তোষ:- এদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে পড়ে। ফলে সাধারণ মানুষের সংসার নির্বাহ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। কৃষকদের ভূমিরাজস্বের ওপর উপ-কর বসানো হয়। ভারতীয় কলকারখানাগুলির ওপর চড়া হারে কর বসানো হয়। এর ফলে কলকারখানা বন্ধ হতে থাকে। এভাবে অর্থনৈতিক শোষণে কৃষক, মালিক ও শ্রমিকশ্রেণির মনে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তীব্র হতে থাকে।
■ জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ:- ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে রাওলাট আইনের প্রতিবাদে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগের নিরস্ত্র মানুষের সমাবেশে ইংরেজ সরকার যে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড করেছিল তাতে সারা দেশে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল।
■ খিলাফৎ সমস্যার সমাধান:- এই সময়ে খিলাফৎ সমস্যা নিয়ে ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে গান্ধিজি খিলাফৎ আন্দোলনকে সমর্থন করে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের এক সুবর্ণ সুযোগের সৃষ্টি করেন।
■ আন্দোলনের প্রস্তুতি: এভাবে জাতীয় কংগ্রেস রাওলাট আইন প্রত্যাহার, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারের দুঃখপ্রকাশ ও দোষীদের শাস্তি দাবি, খিলাফৎ সমস্যার সমাধান এবং স্বরাজ অর্জনের দাবি আদায়ের জন্য এক গণ-আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়। কংগ্রেসের ৩৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবার প্রত্যক্ষ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচী নেওয়া হয়। এভাবে অসহযোগ আন্দোলনের পথ সুগম হয়।
■ প্রত্যাহারের কারণ:- উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা থানায় একদল উন্মত্ত জনতা আগুন ধরিয়ে দিলে ২২ জন পুলিশ জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। এই ঘটনায় গান্ধিজি ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হন। জনগণ সহিংস ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে দেখে তিনি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।