মহাবিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল | Causes and Results of the Great Revolt

মহাবিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল | Causes and Results of the Great Revolt

■ প্রশ্ন:- মহাবিদ্রোহের ফলাফল সংক্ষেপে লেখো। অথবা, মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় কী কী পরিবর্তন হয়েছিল তা সংক্ষেপে বর্ণনা করো। মহাবিদ্রোহের পিছনে ধর্মীয় কারণ কী ছিল? (Causes and Results of the Great Revolt)

■ উত্তর:- ❏ মহাবিদ্রোহের ফলাফল:- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ ভারতের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ও যুগান্তকারী ঘটনা। যদিও এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল তবুও ভারতের ইতিহাসে এই বিদ্রোহ এক নব অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, The great outbreak of 1857 brought about fundamental changes in the character of Indian administration and the future development of the country.

■ শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন:- কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে। কোম্পানির শাসনের অবসানের উদ্দেশ্যে এবং ভারতের শাসনভার ইংল্যান্ডের রানির হাতে হস্তান্তর করার জন্য ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২ রা আগস্ট একটি আইন পাশ করে। Act for the Better Government of India বা The Government of India act নামে পরিচিত এই আইনের মাধ্যমেই ভারতে কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে ঘোষণা করা হয় রানির হয়ে ভারত শাসন করবেন ভারতসচিব। তাঁকে সাহায্য করবেন ১৫ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি পরামর্শক সভা। আর ভারতে বসে রানির হয়ে শাসন করবেন ভাইসরয়।

■ মহারানির ঘোষণাপত্র:- মহারানি ভারত শাসনের দায়িত্ব নিয়ে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে। এই ঘোষণাপত্রে তিনি ভারতীয়দের বিভিন্ন বিষয়ে কিছু আশ্বাস দেন। স্বত্ববিলোপ নীতি প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়। ভারতীয়দের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।

■ সামরিক পুনর্গঠন:- সামরিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু সংস্কারসাধন করা হয়। সেনাবাহিনীকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অঙ্গীভূত করে নেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর সংস্কার করা হয়েছিল এমনভাবে যাতে ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ দেখা না দেয়। ইউরোপীয় সৈন্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। ভারতীয়দের উচ্চপদে নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়। জাতি ও গোষ্ঠীর ভিত্তিতে ভারতীয় সিপাহিদের পৃথক করে রাখা হয়।

■ প্রশাসনিক পুনর্গঠন:- ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় কাউন্সিল আইন পাশ করে কিছু প্রশাসনিক পুনর্গঠন করা হয়। এই আইনে বড়োলাটের কার্যনির্বাহক পরিষদের সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করে ছয় থেকে বারোর মধ্যে রাখার কথা বলা হয়। এর মধ্যে অর্ধেক সদস্য হবে বেসরকারি সদস্য। আইন পরিষদের ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হয়।

■ মহাবিদ্রোহের ধর্মীয় কারণ:- ইংরেজরা এদেশে শাসন করার সঙ্গে সঙ্গে খ্রিস্টধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটাতে শুরু করে। খ্রিস্টান মিশনারিরা ধর্মপ্রচারের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় সমাজের নিন্দা করত। তারা হিন্দু ও মুসলমান উভয় ধর্মের বিরুদ্ধে কটূক্তি ও অশালীন মন্তব্য করতেও দ্বিধাবোধ করত না। এর ফলে ভারতবাসীর মনে সন্দেহ হয় যে তাদের ধর্মান্তরকরণ করাই ইংরেজদের প্রকৃত উদ্দেশ্য। এভাবে ধর্মীয় কারণে ইংরেজদের প্রতি ভারতবাসীর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।