নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী | Biography Netaji Subhash Chandra Bose

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী | Biography Netaji Subhash Chandra Bose




ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি হলেন এক উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র যিনি এই সংগ্রামে নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি নেতাজি নামে সমধিক পরিচিত। ২০২১ সালে ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার জন্মবার্ষিকীকে জাতীয় পরাক্রম দিবস বলে ঘোষণা করেন। সুভাষচন্দ্র পরপর দুইবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত, কংগ্রেসের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা এবং বিরুদ্ধ-মত প্রকাশ করার জন্য তাকে পদত্যাগ করতে হয়। সুভাষচন্দ্র মনে করতেন, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর অহিংসা এবং সত্যাগ্রহের নীতি ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। এই কারণে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র ফরওয়ার্ড ব্লক নামক একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের সত্বর ও পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানাতে থাকেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে এগারো বার কারারুদ্ধ করে। 

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সংক্ষিপ্ত জীবনী:

জন্ম ➤ ২৩ জানুয়ারি ১৮৯৭
কটক, ওড়িশা বিভাগ, বেঙ্গল প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা কটক, ওড়িশা রাজ্য, ভারত)

মৃত্যু ➤ অমীমাংসিত (তবে, ১৫ অগাস্ট ১৯৪৫, ভারত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত)

নাগরিকত্ব ➤ ভারতীয়

রাজনৈতিক দল ➤ ফরওয়ার্ড ব্লক

অন্যান্য রাজনৈতিক দল ➤ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস

দাম্পত্য সঙ্গী বা সহচর ➤ এমিলি শেঙ্কল

সন্তান ➤ অনিতা বসু

মাতা ➤ প্রভাবতী দত্ত

পিতা ➤ জানকীনাথ বসু

শিক্ষাজীবন:-

● ব্যাপটিস্ট মিশন’স প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয় স্কুল, কটক, ১৯০২–০৯

● র‍্যাভেনশো কলেজিয়েট স্কুল, কটক, ১৯০৯–১২

● প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা, ১৯১২–১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯১৬

● স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতা, ২০ জুলাই ১৯১৭–১৯১৯

● ফিটজউইলিয়াম হল, নন-কলেজিয়েট স্টুডেন্টস বোর্ড, কেমব্রিজ, ১৯১৯-২২।

অরও পড়ুনঃ- মহাত্মা গান্ধীর জীবনী




কর্মজীবন:-

১৯২১ সালের ১৬ জুলাই, ২৪ বছর বয়সী সুভাষচন্দ্র বসু, ইংল্যান্ড থেকে ফিরে ভারতের বোম্বেতে পাড়ি দেন এবং অবিলম্বে গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাতের আয়োজন করেন। সেসময়, ৫১ বছর বয়স্ক গান্ধী, অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, যা পূর্ববর্তী বছরে ভারতের সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং পরবর্তী কয়েক দশকের মধ্যে ভারতকে স্বাধীনতার পথে নিয়ে গিয়েছিল। গান্ধী বোম্বেতে অবস্থান করছিলেন এবং সেদিন বিকেলেই বসুর সাথে দেখা করতে সম্মত হন। অনেক বছর পরে এক লেখায় এই সাক্ষাতের বিবরণে তিনি লেখেন, তিনি গান্ধীকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছিলেন। তাঁর মতে গান্ধীর লক্ষ্য অস্পষ্ট ও তা অর্জনের জন্য তার পরিকল্পনা সুচিন্তিত ছিল না। গান্ধী এবং বসু প্রথম সাক্ষাতেই আন্দোলনের উপায় সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করেন। গান্ধী অহিংস আন্দোলন সম্পর্কে ছিলেন আপোষহীন।

ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী:-

ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী (Indian National Army) মূলত গড়ে উঠেছিল জাতীয়তাবাদী নেতা রাসবিহারী বসুর হাতে, ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে রাসবিহারী বসু এই সেনাবাহিনীর দায়িত্ব সুভাষচন্দ্র বসুকে হস্তান্তর করেণ । একটি আলাদা নারী বাহিনী সহ এতে প্রায় ৮৫,০০০ সৈন্য ছিল। এই বাহিনীর কর্তৃত্ব ছিল প্রাদেশিক সরকারের হাতে, যার নাম দেওয়া হয় “মুক্ত ভারতের প্রাদেশিক সরকার”। এই সরকারের নিজস্ব মুদ্রা, আদালত ও আইন ছিল। অক্ষ শক্তির ৯টি দেশ এই সরকারকে স্বীকৃতি দান করে। আইএনএ-র সৈন্যরা জাপানিদের আরাকান ও মেইক্টিলার যুদ্ধে সাহায্য করে।

সুভাষচন্দ্র বসুর বিখ্যাত উক্তি:-

সুভাষচন্দ্র বসুর বিখ্যাত উক্তি হল, “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”। তাঁর আরও একটি বিখ্যাত উক্তি হল “দিল্লি চলো” যা তিনি আইএনএ সেনাবাহিনীকে অনুপ্রাণিত করার জন্য বলতেন। জয় হিন্দ তার ব্যবহৃত আরও একটি স্লোগান, যা পরবর্তিতে ভারত সরকার এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল। তাঁর উদ্ভাবিত আরও একটি স্লোগান ছিল “ইত্তেহাদ, এতেমাদ, কুরবানী”। এছাড়া আজাদ হিন্দ ফৌজে “ইনকিলাব জিন্দাবাদ” স্লোগানটি ব্যবহার করেছিলেন, এটি মওলানা হযরত মোহানি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।