প্রবন্ধ রচনা- তোমার জীবনের লক্ষ্য | Aim of Your Life Essay in Bengali

তোমার জীবনের লক্ষ্য | Aim of Your Life Essay in Bengali

■ ভূমিকা:- প্রত্যেকটি মানুষেরই বেঁচে থাকার একটি মূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য থাকে। লক্ষ্যহারা হয়ে কোনো মানুষই সমাজে বেঁচে থাকতে পারে না। এমনকি যে মানুষের জীবনে কোনো লক্ষ্য থাকে না তাকে সামাজিক মানুষ বলে গণ্য করা যায় না।

প্রতিটি কৃষক জমিতে চাষ করে— তার লক্ষ্য জমিতে ভালো ফসল ফলিয়ে বেশি পরিমাণে লভ্যাংশ বের করা। একজন শিক্ষক মহাশয়ের মূল লক্ষ্য ছাত্রদের উপযুক্ত পাঠদান করে তাদের মানুষ হবার ব্রতে লক্ষ্যস্থির করে দেওয়া; তেমনি একজন পড়ুয়া বা ছাত্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত যথাযথ ও উপযুক্ত পাঠগ্রহণ করে যথার্থ শিক্ষার মাধ্যমে জীবনের এগিয়ে চলা। তেমনি আমার জীবনের লক্ষ্য আমার স্কুল জীবনের শিক্ষকমশাইদের আদর্শ অনুসরণে করে একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়া এবং আদর্শ মানুষ হয়ে পিতা-মাতার স্বপ্নকে সত্যি করা।

■ আমার মনোজগৎ ও মনোভাবনা:- আমি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের এক অসহায় ছাত্র। খুব ভালোভাবে সুযোগ সুবিধাসহ আমি পড়াশোনা করতে পারি না। এর পিছনে মূল কারণ আছে দারিদ্রের যন্ত্রণা। তবুও আমি স্বপ্ন দেখি জীবনে কিছু একটা করে দেখানোর। কঠিন জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাকে বড়ো হতে হবে এবং মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। পাশাপাশি আছে বাবা-মায়ের অদম্য চেষ্টা; যাঁরা আমাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করে চলছে। শিক্ষকদের নম্র আচরণ এবং আন্তরিক আচার-ব্যবহার আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করে। পিতা-মাতার দারিদ্র্য ঘোচানোর অদম্য ইচ্ছা, তাঁদের চোখের জল, তাদের বাৎসল্যমণ্ডিত অনুশাসন, পাশাপাশি আছে শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা এবং জন্ম হোক, যথা তথা; কর্ম হোক ভালো’ -এর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে আমার লক্ষ্য পূরণের আশা।

■ জীবনের লক্ষ্যপথে যাঁরা প্রাতঃস্মরণীয়:- আমি আমার গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করি। আগে পাঠশালা, পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমার জীবনের লক্ষ্যের ভিত প্রথম স্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু এত ছোটো বয়সে বোঝা সম্ভব হয়নি পড়াশোনার মূল্যবোধ। শিশুবয়সে তখন দুষ্টুবুদ্ধিই আমার একমাত্র সম্বল ছিল। পরে পঞ্চম শ্রেণিত যখন উঠলাম তখন শ্রীযুক্ত শ্রীকান্ত বাবু আমায় প্রথম চক্ষু খুলে দিলেন; পরে দেউলি আর পি কে আর সি বিদ্যামন্দিরে পড়াশোনাকালে শ্রীযুক্ত ভূপেন্দ্রনাথ মণ্ডল আমার যথার্থ শিক্ষাগুরুর স্থান দখল করেনেন। তাঁর কথায় — ‘মনের জমিতে চাষ দাও, তা না হলে মনের ফসল ফলবে না’ — এই কথাটি আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করত।

পঞ্চপল্লি দিগম্বর সিনহা বিদ্যায়তনের বাংলা শিক্ষক শ্রীকান্ত বাবু আমাকে লেখার প্রেরণা জাগিয়ে ছিলেন আর ভূপেন বাবু জোগাতেন পড়ার অনুপ্রেরণা— এই দুই কল্পবৃক্ষকে জীবনে পেয়ে আমার চলার পথ কখন যে সঠিক দিকে বাঁক নিল আমি নিজেও বুঝতে পারলাম না। ভাবলাম, জীবনে মানুষের মতো মানুষ হতে গেলে এরকম একজন আদর্শ গুরুর লক্ষ্যপথ ধরে চলতে হবে। শিখতে হবে জীবনের মূল্য মূল্যবোধ। তার একটা বৃহত্তর দিক রয়েছে। তাই আমার জীবনের লক্ষ্যপথ স্থাপনে এঁরাই আমার চীরস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।

■ পিতা-মাতার স্বপ্ন ও আমার লক্ষ্য:- একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে পিতা-মাতাদের যতই দারিদ্র দুঃখকষ্ট থাক না কেন, তাঁদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করার আকাঙ্ক্ষা প্রতিটি পিতা-মাতার মধ্যেই থাকে। সমাজে তদের সন্তানের সৎকর্ম ও প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চান। তদের সন্তানের হয়ে কামনা করেন, পরম মঙ্গলময়ের কাছে — ‘আমার সন্ততি সুখে থাক’। তাই আমার লক্ষ্য পিতা-মাতার ইচ্ছানুসারে সমাজের একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়া।

সেখান থেকে আমি যেন সামাজিক মানুষের পাশে থেকে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি- “নিজের মনে না যেন মানি আমার লক্ষ্যপূরণের করতে হলে আমার জীবনের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে আমাকে শুধু সৎ, নম্র, বিনয়ী হলে চলবে না, আমাকে হতে হবে কঠোর থেকে কঠোরতর পরিশ্রমী। নিত্যনৈমিত্তিক জীবনধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে আমাকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। জীবনে এগিয়ে চলার জন্য সৎ বন্ধু, সৎ পরামর্শদাতা এবং সৎ মানুষের সংসর্গ লাভ করতে হবে। কঠোর পরিশ্রমের সময় বাড়িয়ে দিতে হবে। আমাকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতেই হবে। নিজেকে একজন দায়িত্বশীল, সময় সচেতন, কর্তব্য সচেতন একলক্ষ্য পূজারিতে পরিণত হতেই হবে।

■ আমার জীবনের লক্ষ্য পূরণে বাধা:- আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সমাজে যে-কোনো সৎ লক্ষ্যকে পূরণে অনেক বাধা বর্তমান। যেমন—
(১) অর্থনৈতিক সমস্যা;
(২) সামাজিক প্রতিষ্ঠিত মানুষের তাচ্ছিল্য ও নিষ্ক্রিয় মানসিকতা,
(৩) ঘৃণধরা সমাজে উপযুক্ত পরিবেশে নিজেকে গড়ে তুলতে না পারার বাধা— এগুলি আমার জীবনের আশু লক্ষ্যপূরণে আসল বাধা।

■ অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়ে:- অভীষ্ট লক্ষ্যে তির নিক্ষেপণ করতে সেখানে আমার ভূমিকা হবে—
(১) ছাত্রছাত্রীদের ভালোবাসার মধ্য দিয়ে তাদের সকল সমস্যার মোকাবিলা করা;
(২) অমনোযোগী ও অবুঝ ছাত্রছাত্রীদের মনে পড়াশোনার আকর্ষণবোধ তৈরি করা;
(৩) একজন স্কুলশিক্ষকের মতো যথার্থ কর্তব্য পালন করা;
(৪) অবসর সময়ে সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার প্রতি যথোপযুক্তভাবে মনোনিবেশ করা;
(৫) ছাত্রছাত্রীদের প্রতি ও সমাজকল্যাণে নিজেকে সমর্পণ করা— এতেই আমার জীবনের চরম সার্থকতা।

■ উপসংহার:- আমি জীবনের লক্ষ্য নিয়ে স্বপ্ন দেখি। জীবনগাঙে যখন খেয়াতরি ভাসিয়ে দিয়েছি তখন অভীষ্টলক্ষ্যে আমায় পাড়ি দিতেই হবে। সেখানে খেয়াতরির মাঝি হবেন আমার জীবনদেবতা — স্বয়ং পরমেশ্বর; থাকবে শিক্ষাগুরুদের প্রেরণা এবং আমার পিতা-মাতার আশীর্বাদ সমূহ।