আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু জীবনী | Acharya Jagdishchandra Bose Biography in Bengali
[সংকেত সূত্র :: ভূমিকা | ছাত্রজীবন | কর্মজীবন | গবেষণা ও আবিষ্কার অন্যান্য কৃতিত্ব | উপসংহার]
■ ভূমিকা:- বিজ্ঞান ভারতীয় অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু। সমুদ্রের ওপারে মহামনীষী জগদীশ চন্দ্র যখন ভারত-ভারতীর জয় ঘোষণা করছেন, যখন বিশ্ববাসীকে জানাচ্ছেন উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে, আছে জড়েরও চেতনা, তখন জগদীশের প্রিয় বন্ধু রবীন্দ্রনাথ গাইলেন এই গান—
‘’তোমার খ্যাতির শঙ্খ আজি বাজে দিক দিগন্তরে সমুদ্রের একুলে ওকুলে, আপন দীপ্তিতে আজি বন্ধু তুমি দীপ্যমান।”
সত্যই এক মহনীয় পুরুষের জয় গানে আর এক মহনীয় ব্যক্তিত্ব গাইলেন। এই মহনীয় পুরুষ জগদীশচন্দ্র বসুকে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম। এই মহান বৈজ্ঞানিকের জন্ম হয় ১৮৫৮ সালের ৩০ শে নভেম্বর। জন্মস্থান বিক্রমপুর জেলার রাড়িখাল গ্রাম। পিতার নাম ভগবানচন্দ্র বসু। ভগবানচন্দ্র ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্টেট। তাঁর কর্মস্থল ছিল ফরিদপুর। বাংলা মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল। জগদীশচন্দ্রের বাল্য শিক্ষা। ন’বছর বালক জগদীশচন্দ্র কলকাতায় এসে ভর্তি হয়েছিলেন হেয়ার স্কুলে পড়ে তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে ভর্তি হন।
■ ছাত্রজীবন:- এখান থেকেই ১৮৭৪ সালে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ভর্তি হলেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে প্রখ্যাত শিক্ষক ফাদার লাফের পদপ্রান্তে বসে বিজ্ঞান শিক্ষার দীক্ষা নিলেন জগদীশচন্দ্র। কুড়ি বছর বয়সে তিনি স্নাতক হলেন। আর পাঁচ জনের মতো জগদীশচন্দ্রেরও তখন ইচ্ছা বিলাতে গিয়ে আই . সি.এস.হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডাক্তারি পড়তে গেলেন লন্ডনে। ডাক্তারি পড়তে গিয়ে মড়া কাটতে হয়, তা সহ্য হল না জগদীশচন্দ্রের। অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি। বাবাকে জানালেন, তিনি কেমব্রিজে বিজ্ঞান পড়বেন। সেই মতোই ব্যবস্থা হল। পদার্থ, রসায়ন ও উদ্ভিদ বিদ্যা অধ্যয়নের জন্যে তিনি সেখানে ভর্তি হলেন। তিনটি বিষয়ে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে পেলেন Tripos উপাধি। লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও পেলেন বি . এস.সি.ডিগ্রি। স্কুল কলেজের শিক্ষাজীবনের অবসান হল জগদীশচন্দ্রের।
■ কর্মজীবন:- প্রেসিডেন্সি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হলেন। অনন্য সাধারণ অধ্যাপক হয়ে উঠলেন তিনি। তিনি শুধু অধ্যাপনাই করতেন না, ক্লাসের শেষে বেকার লেবরেটরিতে চলতো তাঁর বিজ্ঞান সাধনা। উদ্ভাবনী শক্তিতে ভারতীয়রাও যে পাশ্চাত্য দেশ অপেক্ষা দীন নয়, একথা প্রমাণ করার জন্য তিনি উঠে পড়ে লাগলেন।
■ গবেষণা ও আবিষ্কার:- পদার্থ বিজ্ঞানেই শুরু হল প্রাথমিক গবেষণা। বিদ্যুৎ বিষয়ে মৌলিক বক্তব্যের জন্য তিনি প্রথম অভিনন্দিত হলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা। তাঁরা তাঁকে ডি.এস.সি. উপাধি দিলেন। ১৮৯৫ তে তিনি বেতার আবিষ্কার করলেন। কলকাতায় গুণিজনের সামনে তার পরীক্ষাও হয়ে গেল। কিন্তু জগদীশচন্দ্রের দুর্ভাগ্য ভারতবাসীর -এ আবিষ্কারের তিনি স্বীকৃতি পেলেন না। টাকার অভাবে ইউরোপে গিয়ে তিনি জানাতে পারলেন না এই অত্যাশ্চর্য আবিষ্কারের কথা। ফলে ইতালির বিজ্ঞানী মার্কনিই বেতার আবিষ্কর্তা রূপে স্বীকৃত হলেন।
■ আবিষ্কার ও তার স্বীকৃতি:- কিন্তু এত বড়ো ব্যর্থতাতেও দমে গেলেন না এই মহাসাধক। পদার্থ বিজ্ঞান থেকে তিনি চলে এলেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানে। তাঁর বহু দিনের ধারণা জড়েও আছে চেতনা, বৃক্ষেও আছে প্রাণ। এবার যন্ত্রপাতি নিয়ে পরীক্ষা শুরু হল। উদ্ভিদের প্রাণের স্পন্দন পেলেন তিনি মনের ভাষা ফুটে উঠল তাঁর ‘ক্রেসকোগ্রাফ’ যন্ত্রে। বিশ্ববাসী চমকে উঠলো বিজ্ঞানের এই বিস্ময়কর আবিষ্কারে। বিজ্ঞানের বিজয় মাল্যে ভূষিত হল ভারত-ভারতী। ১৯০২ সালে আগস্ট মাসে যশের মুকুট নিয়ে স্বদেশে ফিরে এলেন জগদীশচন্দ্র। রবীন্দ্রনাথ প্রিয় বন্ধুকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে লিখলেন ‘বিজ্ঞান লক্ষ্মীর প্রিয় পশ্চিম মন্দিরের দূর সিন্ধুতীরে হে বন্ধু গিয়েছ তুমি, জলমাল্য খানি সেথা হতে আনি, দীনহীনা জননীর লজ্জানতশিরে পরায়েছ ধীরে।
■ অন্যান্য কৃতিত্ব:- ১৯২০ সালে জগদীশচন্দ্র লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হলেন অর্থাৎ F.R.S. ভারতীয়দের মধ্যে একমাত্র রামানুজম এই উপাধি পেয়েছেন। তাঁর জন্মদিন ৩০ শে নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ — ভারতীয়দের বিজ্ঞান সাধনার তীর্থক্ষেত্র।
■ উপসংহার:- কর্মক্লান্ত বৈজ্ঞানিক শেষ জীবনে গেলেন বিশ্রামের জন্য গিরিডিতে। কিন্তু এখান থেকেই মহাপ্রস্থানের পথে ওই মহামানবের যাত্রা। ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর সকালে স্নানাগার থেকে আর ফিরে আসছেন না জগদীশচন্দ্র। চিত্তিতা অবলা বসু গিয়ে দেখলেন অচৈতন্য দেহ মাটিতে লুটিয়ে। সকাল ৮ টা ১৫ মিনিটে ইহধাম থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন জগদীশচন্দ্র।