Ramayana Mahakavya | রামায়ণ মহাকাব্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

Ramayana Mahakavya is a national epic. Its author is Maharshi Balmiki. He composed the Ramayana Mahakavya in seven volumes. The estimated number of verses is twenty four thousand. The seven incidents are:

(1) Balkand, (2) Ayadhyakand, (3) Aranyakand, (4) Kishkindhyakand, (5) Sundarkand, (6) Jundhakand, (6) Uttarkand. Balmiki is called Adikabi or Kabiguru. Because no one has written such a sensitive poem before him. Moreover, the father of the verse is Balmiki.Ramayana Mahakavya is a story about this. One day Balmiki was going to bathe in the river Tamsa. A crouching couple was intoxicated in a tree on the bank of the river. A hunter shot Krun. Crown began to weep in a bloody state. Maharshi was stunned to see Kronji’s pain.

‘রামায়ণ’ এর রচনা কাল (The period of composition of Ramayana Mahakavya )

images 9
বাল্মীকি

বাল্মীকি বিরচিত ‘রামায়ণ ’ আদি মহাকাব্যটি প্রথম কবে রচিত হয়েছিল তা নির্ণয় করা বড়ই কঠিন । এ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায় । এখনও গবেষণা চলছে । আমরা কিছু কিছু মত এখানে আলােচনা করব।
একথা নিশ্চয়ই বলা যায় যে রামায়ণ প্রথম প্রচারিত হয়েছিল মুখে মুখে । কথক ঠাকুরের মুখ থেকে গ্রামবাসীরা রামের বীরত্বব্যঞ্জক কাহিনী শুনতেন । বৈদিক যুগেও বীরত্ব গাথার প্রচলন ছিল ।

বৈদিক সাহিত্যের প্রভাব রামায়ণে লক্ষ করা যায় । এটি ছিল রামায়ণের প্রথম স্তর । তারপর দেশীয় আঞ্চলিক প্রভাব রামায়ণের মূা কলেবরকে স্ফীত করেছে । লিখিত রূপ লাভ করার পরও সংযােজন পরিমার্জন চলতে থাকে । এর থেকে প্রক্ষিপ্ত অংশের উদ্ভব হয়েছে । সুতরাং বলা যেতে পারে যে , উপনিষদ্ যুগের পরই রামায়ণের রচনাকাল শুরু হয়ে যায় । এই সময়টি হল আনুমানিক খ্রীঃ পূঃ ষষ্ঠ শতাব্দী ।

‘রামায়ণ ‘ রচনায় ঐতিহাসিক মতামত (Historical views on the composition of the Ramayana Mahakavya)

পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিত Winternitz- এর মতে রামায়ণ যুদ্ধোত্তর যুগে রচিত হয়েছিল । কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন — কতকগুলি জাতকের গল্পের সঙ্গে রামায়ণের গল্পের সাদৃশ্য আছে । যেমন — দশরথজাতক । কিন্তু এই মত স্বীকার করা যায় না । কারণ সেই সমস্ত গ্রন্থে রাবণ বা হনুমানের কথা বলা নেই । রামায়ণের যে স্থানে বুদ্ধের উল্লেখ আছে সেগুলি সব প্রক্ষিপ্ত আরেকজন পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিত Jacobi বলেন যে , রামায়ণ বুদ্ধের জন্মের আগেই রচিত হয়েছে ।

কারণ হিসাবে বলেছেন যে , বুদ্ধদেব যখন তার ধর্ম প্রচার করেন তখন সৃষ্টি হয়ে গেছে পালি ভাষা । তখন পালি ভাষাই ছিল সর্বসাধারণের ভাষা । তাই বুদ্ধদেব গ্রামের অজ্ঞ লােকেদের ধর্মশিক্ষা দানের জন্য এই ভাষাতেই উপদেশ দিতেন । আমরা জানি সংস্কৃত ভাষার অনেক পরে পালি ভাষার উদ্ভব হয়েছে । সেজন্য নিঃসংশয়ে বলা যায় যে , বুদ্ধের জন্মের আগেই রামায়ণ রচিত হয়েছিল ।

কারণ রামায়ণ শুদ্ধ সংস্কৃতে লেখা । সে সময় সংস্কৃতই ছিল সর্বসাধারণের ভাষা । এখানেও রামায়ণের আনুমানিক রচনাকাল দাঁড়ায় খ্রীঃ পূঃ ষষ্ঠ শতাব্দী । আরেকজন পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিত Weber বলেন যে , গ্রীক আক্রমণের পর রামায়ণ রচিত হয়েছে । গ্রীক সম্রাট আলেকজাণ্ডার ভারত আক্রমণ করেন খ্রীঃ পূঃ ৩২৭ অব্দে ।

তারপর থেকে গ্রীস দেশের প্রভাব ভারতবর্ষে পড়তে থাকে । তাই অনেকে মনে করেন যে , গ্রীক কবি হােমারের হেলেন এবং ট্রয়ের যুদ্ধ কাহিনীর অনুকরণে রামায়ণ নামক জাতীয় কাব্যটি নির্মিত হয়েছে । তাছাড়া যবন ’ শব্দটির প্রয়ােগ রামায়ণে দেখা যায়।কিন্তু এই মত সকলের কাছে গ্রহণযােগ্য নয় । কারণ হােমারের গল্প ও রামায়ণের গল্পের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই গরমিল রয়েছে । আর যে যে জায়গায় যবন শব্দটি রয়েছে সেগুলি সব প্রক্ষিপ্ত অংশ । বুদ্ধদেবের সময়ে যে যে নগর বা নগরীর প্রসিদ্ধি বা জনপ্রিয়তা বিপুল পরিমাণে ছিল। সেগুলির নাম রামায়ণে পাওয়া যায় ।

অথাৎ রামায়ণে উল্লিখিত নামগুলি পরবর্তী সময়ে বেশ প্রসিদ্ধি লাভ করেছে , বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারক একজন সংস্কৃত কবি হলেন অশ্বঘােষ । তিনি খ্রীঃ পূঃ প্রথম শতকে আবির্ভূত হয়েছিলেন । তাঁর বিখ্যাত কাব্য বুদ্ধচরিত ’ – এ রামায়ণের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । সুন্দরকাণ্ডে ’ রাবণের অন্তঃপুরের বর্ণনার অনুকরণে তিনি বুদ্ধচরিতের পঞ্চম সর্গস্থ রমণী পরিবেষ্টিত সিদ্ধার্থের বর্ণনা দিয়েছেন ।

বৌদ্ধজাতকগুলিতেও রামায়ণের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । এই সমস্ত বিচার করে আমরা বলতে পারি যে , রামায়ণের আদিস্তর শুরু হয়েছিল খ্রীঃ পূঃ সপ্তম শতাব্দীতে । তারপর কিছুদিন মুখে মুখে প্রচারিত হওয়ার পর লিখিত রূপ লাভ করেখ্রীঃ পূঃ ষষ্ঠ শতাব্দীতে । তারপর বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রভাবে চারণ কবিদের সংযােজন পরিমার্জনের মাধ্যমে রামায়ণ বর্তমান আকার ধারণ করে । রামায়ণ রচনার শেষ স্তর হল খ্রীঃ পূঃ প্রথম শতকু । এই সময়ে রামায়ণের শ্লোক সংখ্যা ছিল২৪০০।

রামায়ণ’ এর সংক্ষিপ্ত কাহিনী(Short story of Ramayana)

রামায়ণ হল একটি জাতীয় মহাকাব্য । এর রচয়িতা হলেন মহর্ষি বাল্মীকি । তিনি সাতটি কাণ্ডে রামায়ণ রচনা করেন । আনুমানিক শ্লোকসংখ্যা চবিশ হাজার । সাতটি কাণ্ড হল— ( ১ ) বালকাণ্ড , ( ২ ) অযােধ্যাকাণ্ড , ( ৩ ) অরণ্যকাণ্ড , ( ৪ ) কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড , ( ৫ ) সুন্দরকাণ্ড , ( ৬ ) যুদ্ধকাণ্ড , ( ৭ ) উত্তরকাণ্ড । বাল্মীকিকে আদিকবি বা কবিগুরু বলা হয়ে থাকে । কারণ তার পূর্বে এ ধরণের কোন সংবেদনশীল কাব্য কেউ রচনা করেননি ।

তাছাড়া শ্লোকের ’ জনক হলেন বাল্মীকি । এ নিয়ে একটি কাহিনী আছে । একদিন বাল্মীকি তমসা নদীতে স্নান করার জন্য যাচ্ছিলেন । নদীর তীরস্থিত বৃক্ষে এক ক্রৌঞ্চদম্পতী কামক্রীড়ায় মত্ত ছিল । এক ব্যাধ ক্রৌঞকে তীরবিদ্ধ করল।ক্রৌঞ রক্তাক্ত অবস্থায় করুণস্বরে ক্রন্দন করতে লাগল । ক্রৌঞ্জীর সেই বেদনা দেখে মহর্ষি স্তব্ধ হয়ে গেলেন । নিদারুণ শােক তাকে অভিভূত করেছিল । এই শােক থেকেই জন্ম হল শ্লোকের ।

তাই বাল্মীকিকে আদিকবি বলা হয়ে থাকে । শ্লোকটির অর্থ হল ‘ হে বাধ ! তুমি যুগ যুগ ধরে কোনদিনই প্রতিষ্ঠা পাবে না । কারণ কামাসক্ত ক্রৌঞ্চমিথুনের মধ্যে ক্লৌগুটিকে তুমি বধ করলে । রামের বংশবর্ণনা ও জীবনচরিত হল রামায়ণের মুখ্য উপজীব্য । রামস্য অয়ন ইতি রামায়ণম্ । রামায়ণের বিষয়বস্তু হল সংক্ষেপে এরূপ রাজা দশরথের তিন রাণী ছিল — কৌশল্যা , কৈকেয়ী ও সুমিত্রা । তাদের কোন সন্তান ছিল । রাজা পুরােহিত ব্রাহ্মণদের কথামত পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করলেন । যজ্ঞের ফল অনুসারে কিছুদিনের মধ্যেই রাণী কৌশল্যা পুত্ররূপে লাভ করলেন রামকে , রাণী কৈকেয়ী লাভ করলেন ভরতকে , আর রাণী সুমিত্রা লাভ করলেন দুই পুত্র লক্ষণ ও শত্রুকে । চার রাজপুত্র এক সাথে বড় হতে লাগল ।

একবার রাজা দশরথ যুদ্ধে দারুণভাবে আহত হয়েছিলেন । তার ক্ষত – বিক্ষত দেহ যত্নসহকারে সেবা – শুশ্রুষা দ্বারা সারিয়ে তুলেছিলেন দ্বিতীয়া রাণী কৈকেয়ী । রাজা প্রতিদানে তাকে ইচ্ছামতাে দুটি বর চাইতে বলেছিলেন । কিন্তু রাণী সে সময় কোন বর চান নি । বলেছিলেন পরে চেয়ে নেবেন । রাজা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন । চারপুত্রের মধ্যে রামচন্দ্র ছিলেন জ্যেষ্ঠ এবং গুণবিচারে শ্রেষ্ঠ । যথাসময়ে রাজা চারপুত্রের বিবাহ দিলেন । রামচন্দ্রের বিবাহ হল রাজা জনকের কন্যা সীতার সাথে , অন্য তিন ভাইয়ের বিবাহ হল জনকভ্রাতা কুশধ্বজের কন্যাদের সাথে । লক্ষ্মণের পত্নী হলেন উর্মিলা , ভরতের পত্নী হলেন মাণ্ডবী , আর শত্রুঘ্নের পত্নী হলেন শুতকীর্তি । রাজা রামচন্দ্রকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করতে চাইলেন ।

আয়ােজন যখন শুরু হল তখনই রানী কৈকেয়ী মথুরার কুপরামর্শে পূর্ব প্রতিশ্রুতিমত রাজার কাছে দুটি বর চেয়ে বসলেন । একবরে চাইলেন রামের চোদ্দ বছর বনবাস; অপর বরে চাইলেন নিজপুত্র ভরতের রাজ্যাভিষেক । রামচন্দ্র ছিলেন পিতৃভক্ত , সত্যবাদী ও ধর্মপরায়ণ । তিনি পিতৃসত্য পালনের জন্য বনবাসে গেলেন । সংগে গেলেন পত্নী সীতা ও ভ্রাতা লক্ষ্মণ । গঙ্গাতীরে উপনীত হয়ে রামচন্দ্র সারথি সুমন্ত্রকে বিদায় দিলেন । সাক্ষাৎ হল ব্যাধরাজ গুহকের সাথে ।

তারপর ঋষি ভরদ্বাজের আশ্রমে কয়েকদিন আতিথ্য গ্রহণ করে চলে গেলেন চিত্রকূট পর্বতে । সেখানেই নির্মাণ করলেন পর্ণকুটীর । রাম , লক্ষ্মণ ও সীতার বনবাস জীবন শুরু হয়ে গেল । অন্যদিকে অযােধ্যায় বিষাদের ছায়া। মহারাজ দশরথ পুত্রশােকে কাতর হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন । মাতুলালয় থেকে ফিরে সমস্ত ঘটনা শুনে ভরত মাতা কৈকেয়ীকে তিরস্কার করলেন । রামের সিংহাসনে ভরত বসলেন না । রামকে বনবাস থেকে ফিরিয়ে আনতে গেলেন । কিন্তু রামচন্দ্র প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে চাইলেন না । নিরুপায় হয়ে ভরত রামের পাদুকাযুগল চাইলেন । সেই পাদুকাযুগলকে সিংহাসনে বসিয়ে ভরত রাজকার্য চালাতে লাগলেন । বনবাসে থাকতে থাকতে বহু মুনি – ঋষির সাথে রামের আলাপ হল ।

যজ্ঞবিঘ্নকারী রাক্ষসদের বিনাশ করে তিনি মুনি – ঋষিদের ভয় দূর করলেন । একবার লংকার রাজা রাবণের বােন শূর্পণখা রামের রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিবাহ করতে চান । রাম অসম্মত হয়ে লক্ষ্মণের কাছে পাঠান । লক্ষ্মণ শূর্পনখার নাক কেটে দেন । এর প্রতিশােধ নেবার জন্য রক্ষাসরাজ রাবণ ব্রাত্মণের বেশ ধারণ করে পর্ণকুটীরের কাছেই অপেক্ষা করতে থাকেন । আর মারীচ সােনার হরিণ হয়ে সীতার কাছে ঘুরতে থাকে ।

সীতার অনুরােধে রামচন্দ্র স্বর্ণমুগটিকে ধরার জন্য বহুদূরে চলে যান । সে সময় মাণীচ ছল করে উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করতে থাকে ‘ ভাই লক্ষণ ! আমাকে বিপদ থেকে বাঁচাও ‘ । সীতার কাতর অনুরােধে পক্ষদ্রণ চলে যান রাজার সন্ধানে । যাবার আগে গা দিয়ে বলে গেলেন সীতাকে তার বাইরে না যাবার জন্য । ঠিক সে সময় ব্রাত্মণভিক্ষুবেশী রাবণ গণ্ডীদা বাইরে ভিক্ষা চাইলেন ।

গণ্ডীর বাইনে আসতেই সীতাকে বলপূর্বক অপহরণ করলেন রাবণ । পথে পক্ষীরাজ জটায়ু বাধা দিলে তাকে আহত করে সীতাকে নিয়ে গেলেন লংকায় । বাম ও লক্ষ্মণ ফিরে এসে সীতাকে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে বনের মধ্যে ধরাশায়ী মৃত্যুপথযাত্রী জটায়ুর কাছ থেকে জানতে পারলেন যে সীতা রাবণ কর্তৃক অপহৃতা হয়েছেন । সীতাকে উদ্ধার করার জন্য উদ্যত হলে পম্পাতীরে হনুমানের সাথে সাক্ষাৎ হয় রামের ।

তারপর হনুমানের পরামর্শে রামচন্দ্র বন্ধুত্ব করলেন সুগ্রীবের সাথে । বালিকে বধ করে সুগ্রীবকে রাজা করলেন । বিনিময়ে বানররাজ সুগ্রীব বানরসৈন্যদের নিয়ে এগিয়ে এলেন রামকে সাহায্য করার জন । হনুমান ও সুগ্রীবকে নিয়ে রাম – লক্ষ্মণ চললেন লংকা আক্রমণে । বিভীষণের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হল । প্রবল যুদ্ধের পর রাবণকে বধ করে সীতাকে উদ্ধার করলেন শ্ৰীৰামচন্দ্র ।

রাক্ষসগৃহবাসিনী সীতার অগ্নিপরীক্ষা হল । সেই পরীক্ষায় সীতা উত্তীর্ণ হলেন । রাম , লক্ষ্মণ , সীতা হর্ষোৎফুল্ল চিত্তে ফিরে এলেন অযােধ্যায় । ভরত সংগে সংগে রাজ্যভার অর্পণ করলেন জ্যেষ্ঠভ্রাতা রামচন্দ্রকে । সারা রাজা ভরে উঠল আনন্দে । তারপর অনুচরের মাধ্যমে রামচন্দ্র জানতে পারলেন , কিছু কিছু প্রজা রাক্ষসগৃহবাসিনী সীতাকে গ্রহণ করায় তার নিন্দা রটিয়ে বেড়াচ্ছে । প্রজানুরঞ্জক রাজা স্বীয় অপবাদ মােচনের জন্য নির্দোষ পত্নীকে নির্বাচন দিলেন বাল্মীকির আশ্রমে । সেখানে জন্ম হল লব ও কুশের । মহর্ষির তত্ত্বাবধানে সীতার দুই যমজ সস্তান সর্ববিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠল । রামায়ণ গান শিখতে লাগল ।

এদিকে রামচন্দ্র অশ্বমেধ যজ্ঞ করতে চেয়ে একটি অশ্বকে ছেড়ে দেন । অশ্বটি বহু দেশ ঘােরার পর লব কুশের দ্বারা বন্ধ হয় । রামের সৈন্যদের সাথে লব – কুশের যুদ্ধ হয় । পরিশেষে জানা গেল এই দুই বালক রামেরই সন্তান । বাল্মীকির সাথে লব – কুশ রামের অশ্বমেধ যজ্ঞে উপস্থিত হয়ে রামায়ণ গান করল । জনম দুঃখিনী সীতা আর দুঃখভার বইতে না পেরে আশ্রয় চাইলেন মাতা ধরিত্রীর কাছে । ধরিত্রী দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আশ্রয় দিলেন সীতাকে । রামায়ণের করুণ কাহিনীর পরিসমাপ্তি ঘটল এখানেই ।

রামায়ণ দীর্ঘকাল ধরে আদিকাব্য নামে খ্যাত । প্রাচীনকালে মুখে মুখে এই কাহিনী প্রচারিত হত । তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংযােজন বা বিয়ােজন ঘটেছে । আঞ্চলিক প্রভাবের ফলে রামায়ণের তিনটি রূপ বর্তমানে সহজলভ্য- (১ ) পশ্চিম ভারতীয় বা উত্তর – পশ্চিম ভারতীয় কাশ্মীরীরূপ ( ২ ) বঙ্গদেশীয় ৰূপ ও ( ৩ ) দক্ষিণ ভারতীয় ৰূপ ।

রামায়ণ এর প্রভাব ও বৈশিষ্ট্য(Effects and features of Ramayana Mahakavya)

মূল বাল্মীকি রামায়ণে রাম দেবতা নন — তিনি দেবোপম পুরুষোত্তম, মানুষী শক্তি ও বজ্রকঠোর বীর্যসত্ত্বার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু কৃত্তিবাসী রামায়ণে রামচন্দ্র সকলের আরাধ্য অবতার, তুলসীচন্দনে লিপ্ত দেববিগ্রহ। তিনি কোমল করের ইঙ্গিতে সৃষ্টি-স্থিতি-সংহার করতে পারেন; বংশীধারী কৃষ্ণের মতই তাঁর চক্ষু প্রেমাশ্রুপূর্ণ।

এই কাব্যের পুথিগুলিতে রাম ও রাবণের ভীষণ যুদ্ধস্থলকে গৈরিক-রেণু-রঞ্জিত হরিনাম সংকীর্তনভূমি বলে ভ্রম হয় এবং যুদ্ধের দামামা-রোল মাঝে-মাঝে বৈষ্ণব খোল-করতালের মৃদুতা গ্রহণ করে। এইভাবে সংস্কৃত রামায়ণ পরিবর্তিত হয়ে শাণিত তলোয়ারের চেয়ে বাঙালি ঘরের নয়নাশ্রুর প্রভাবশীল অস্ত্রের উপযোগী হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

বস্তুত, কৃত্তিবাসী রামায়ণে বাংলার শাক্ত ও বৈষ্ণব পরম্পরার দ্বন্দ্ব অনন্যভাবে ফুটে উঠেছে; উভয় লিপিকরদলের পরিমার্জনা কাব্যটিকে বিভিন্ন রসে পুষ্ট করেছে। বৈষ্ণব লিপিকরগণ তরণীসেন, বীরবাহু প্রভৃতি রাক্ষসবীরদের দ্বারা বৈষ্ণবীয় ভক্তিতে রামচন্দ্রের স্তবগান করিয়েছেন; অপরদিকে শাক্ত লিপিকরগণ যুদ্ধজয়ের নিমিত্ত (কমলাক্ষ রামের ‘কমল-আঁখি’র উৎসর্গ দ্বারা দেবী দুর্গা কর্তৃক লুক্কায়িত নীলপদ্মের স্থল পূর্ণ করে) শ্রীরামকে দিয়ে ‘অকাল-বোধন’ চণ্ডীপূজা করিয়েছেন। এভাবে মূল-অনুবাদটি বর্তমান আকারে পরিণত হয়েছে।

প্রতিপক্ষের প্রতি যুদ্ধক্ষেত্রে ভূপতিত হয়ে রাক্ষস বীরবাহুর বিনীত “অকিঞ্চনে দয়া কর রাম রঘুবর” এবং রাক্ষসশ্রেষ্ঠ দশানন রাবণের “অপরাধ মার্জ্জনা করহ দয়াময়” উক্তিতে বাংলার কৌপিনসার শিখাযুক্ত বৈষ্ণবভক্তের রূপ প্রতীয়মান হয়। 

বিভীষণপুত্র তরণীসেন রামনামের অঙ্গশোভা করে বৈরাগীর সাজে যুদ্ধে গমন করেন এবং বিপক্ষ যোদ্ধা রামচন্দ্রের শরীরে ভগবানের বিশ্বরূপ অবলোকন করেন। সমাগত যুদ্ধার্থীর ভক্তিতে রাম-লক্ষ্মণও শ্রীচৈতন্য-নিত্যানন্দের মতো বৈষ্ণবোচিত বিনয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে অশ্রুপাত করতে থাকেন। মনে করা হয়, রামায়ণের এইসব পরিবর্তন তখনকার বঙ্গীয় সমাজজীবনের প্রকৃতি (বৈষ্ণব-নীতি) অনুসারেই সংঘটিত হয়েছিল।

তবে মূল বাল্মীকি রামায়ণের প্রতিধ্বনিও কাব্যটির বিভিন্ন পুথিতে অল্পবিস্তর শ্রুত হয়, যেমন:

সর্ব্ব সুলক্ষণ যার হয় অধিষ্ঠান।
হিংসার ঈষৎ নাই, চন্দ্র সূর্যের সমান।
ইন্দ্র যম বায়ু বরুণ যেই বলবান।
ত্রিভুবনে নাই কেহ তাহার সমান।

রাম ও লক্ষ্মণের সৌহার্দ্য, কৌশল্যার শোকসন্তাপ, ক্ষাত্রতেজ ও ব্রহ্মচর্যের চেয়ে সীতার গৃহবধূর মত লজ্জাবনত মাধুরী — রামায়ণের কৃত্তিবাসী অনুবাদেই অধিকতর সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ মহাভারতের কাহিনি