লর্ড ডালহৌসী ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার | Lord Dalhousie and Expansion of British Empire

লর্ড ডালহৌসী ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার | Lord Dalhousie and Expansion of British Empire

■ লর্ড ডালহৌসী ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার (Lord Dalhousie and Expansion of British Empire) :

■ ডালহৌসীর কয়েকটি পন্থা:- লর্ড ডালহৌসী (১৮৪৮-৫৬ খ্রিঃ) ঘোর সাম্রাজ্যবাদী হিসেবে ভারতের ইতিহাসে সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর আমলে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের চরম সম্প্রসারণ ঘটে। সাম্রাজ্যবিস্তারের জন্য ডালহৌসী কয়েকটি পন্থা বেছে নেন, যথা:

● (ক) যুদ্ধের মাধ্যমে রাজ্যবিস্তার করা;

● (খ) স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ করে দেশীয় রাজ্য দখল করা এবং

● (গ) কুশাসনের অজুহাতে দেশীয় রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা।

■ (ক) যুদ্ধের মাধ্যমে রাজ্যবিস্তার:- দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ এবং দ্বিতীয় ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধ ছিল ডালহৌসীর আমলে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা। দ্বিতীয় শিখ যুদ্ধে শিখদের চরম পরাজয় ঘটলে লর্ড ডালহৌসী পাঞ্জাব ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধের মাধ্যমে (১৮৫২ খ্রিঃ) ডালহৌসী ব্রহ্লদেশের প্রোম ও পেগু দখল করে নেন। এইভাবে ব্রহ্লদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সালউইন নদী পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।

■ (খ) লর্ড ডালহৌসী স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ:- যুদ্ধের মাধ্যমে রাজ্যবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে লর্ড ডালহৌসী স্বত্ববিলোপ-নীতির প্রয়োগ করেন। এই নীতির মূল কথা ছিল যে, ইংরেজদের আশ্রিত কোনো রাজ্যের উত্তরাধিকারী না থাকলে সে রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হবে এবং কোনো দত্তকপুত্রের উত্তরাধিকার স্বীকার করা হবে না। স্বত্ববিলোপ নীতি একমাত্র ব্রিটিশদের সৃষ্ট রাজ্যগুলির ক্ষেত্রেই প্রযুক্ত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে তা করা হয়নি এবং এই নীতি হিন্দুদের চিরাচরিত সামাজিক রীতি-নীতি ও ধর্মীয় সংস্কারের সম্পূর্ণ বিরোধী ছিল।

স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে সাতারার রাজ্যটিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করে নেওয়া হয়। এরপর ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ঝাঁসির রাজার অপুত্রক অবস্থায় মৃত্যু হলে ঝাঁসি রাজ্যটিকেও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয়। এই একই কারণে ভগৎপুর, করৌলী, সম্বলপুর, জৈৎপুর, বাগৎ, উদয়পুর প্রভৃতি রাজ্যগুলিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয়। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে নাগপুরের ভোঁসলে রাজ্যের ভাগ্যেও তাই ঘটে।

■ (গ) কু-শাসনের অজুহাতে রাজ্যজয়:- ডালহৌসীর সাম্রাজ্যবিস্তারের অন্য এক পন্থা ছিল কুশাসনের অজুহাতে দেশীয় রাজ্য গ্রাস। এই নীতির প্রয়োগ করে তিনি অযোধ্যা রাজ্যকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করে নেন। মনে রাখা দরকার যে, লর্ড ওয়েলেসলির ‘অধীনতামূলক-মিত্রতা নীতির ফলে অযোধ্যার নবাব ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছিলেন, অথচ রাজ্য শাসনের দায়িত্ব নবাবের হাতেই রাখা হয়েছিল।

সুতরাং ক্ষমতাহীন দায়িত্ব থাকার ফলে অযোধ্যার নবাবরা রাজ্যের সুশাসনের প্রতি উদাসীন থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। সুতরাং অযোধ্যার নবাবকে অযোগ্যতার অভিযোগে অকারণে অভিযুক্ত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁর রাজ্য গ্রাস করা হয়। স্বত্ব-বিলোপ নীতি প্রয়োগ এবং অযোধ্যার সংযুক্তিকরণ দেশীয় রাজাদের মনে দারুণ অসন্তোষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে, ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে যা প্রকাশ্য রূপ নেয়।