উদ্ভিদ ও মানবজীবনে মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাব | Effect of Seasonal Climate on Plant and Human Life

উদ্ভিদ ও মানবজীবনে মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাব | Effect of Seasonal Climate on Plant and Human Life

■ প্রশ্ন:- উদ্ভিদ ও মানবজীবনে মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাব বর্ণনা করো। (Effect of Seasonal Climate on Plant and Human Life).

■ উত্তর:- স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও মানবজীবনের ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব অপরিসীম। স্বাভাবিক উদ্ভিসের ওপর প্রভাবঃ মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্বত্র সমান নয়। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের তারতম্য হেতু স্বাভাবিক উদ্ভিদের বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়।

যেমন – ২০০ সেমির অধিক বার্ষিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায়, (উদাহরণ মেহগনি, গর্জন, আবলুস প্রভৃতি) ১০০ সেমি- ২০০ সেমি পর্যন্তবার্ষিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে পর্ণমোচী উদ্ভিদের প্রাধান্য দেখা যায়। (উদাহরণঃ পলাশ, শাল, মহুয়া) ৫০ সেমি ১০০ সেমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে গুগ্মজাতীয় উদ্ভিদের প্রাধান্য দেখা যায় (বিভিন্ন প্রকার তৃণ ও ঝোপঝাড়)। ৫০ সেমির কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে জেরোফাইট জাতীয় উদ্ভিদের (ক্যাকটাস, ফণীমনসা) এবং উপকুলীয় অঞ্চলে কিছু কিছু স্থানে ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ (সুন্দরী, গরান, হেঁতাল, গেঁওয়া) প্রভৃতি জন্মায়।

■ মানবজীবনের ওপর প্রভাব:- পৃথিবীর অন্যতম জনঘনত্বপূর্ণ অঞ্চল হল মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চল। সমগ্র বিশ্বের শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ এই জলবায়ু অদলে বসবাস করে। মৌসুমি বায়ু মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ সুদৃঢ় করে।

■ কৃষিকাজ:- মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের শতকরা ৭০ ভাগ অধিবাসী কৃষিজীবি। এই অঞ্চলের পরিমিত উত্তাপ ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের পাট, তুলা ও তামাকের চাষ প্রভাবে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যফসল – ধান, গম, মিলেট; বাগিচা কৃষি- চা, রবার ও অর্থকরী ফসল হয়।

■ পশুপালন:- মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার সীমিত। এই জলবায়ু অঞ্চলে কৃষিজমি কর্ষণ, ফসল মাড়াই প্রভৃতি কাজে পশুশক্তি ব্যবহার করা হয়। যেমন – ভারত, বাংলাদেশে গোরু, ভিয়েতনামে মহিষ ও মায়ানমারে হাতি প্রতিপালন করা হয়।

■ বনজসম্পদের আহরণ:- মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের বনভূমি অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ধরনের কাঠ, মধু, সংগ্রহ করা হয়।

■ খনিজসম্পদ আহরণ:- মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চল খনিজসম্পদে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ। যেমন – ভারতের ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চল, মায়ানমারের শাল মালভূমি অঞ্চল প্রভৃতি। ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চল থেকে খনিজ ও স্বাভাবিক গ্যাস ছাড়া প্রায় সকল প্রকার খনিজসম্পদ পাওয়া যায়।

■ শিল্পজাত দ্রব্যসামগ্রী:- মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চল কৃষিভিত্তিক ও ধাতব সম্পদে সমৃদ্ধ। কৃষিভিত্তিক শিল্পের মধ্যে পাট শিল্প, বস্ত্র শিল্প, চা শিল্প ও ধাতব শিল্পের মধ্যে লৌহ ইস্পাত শিল্প ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প প্রধান।