জীবনী- স্বামী বিবেকানন্দ | Swami Vivekananda Biography in Bengali

জীবনী- স্বামী বিবেকানন্দ | Swami Vivekananda Biography in Bengali

[প্রবন্ধ সংকেত :: ভূমিকা | জন্ম ও বাল্যকাল | শিক্ষা কর্মজীবন | বিবেকানন্দের বাণী | উপসংহার]

ভূমিকা:- যিনি দেশ ও জাতির গর্ব, মানবপ্রেম যাঁর কাছে দেশসেবা— তিনি দেশগৌরব পরিব্রাজক স্বামী বিবেকানন্দ। মুক্তি-সাধনার অগ্রদূত, তরুণসমাজের পথপ্রদর্শক বিবেকানন্দ বিশ্ববাসীর অন্তরে প্রেমের বাণী প্রচার করে রাজ-রাজেশ্বরের মহিমায় মহিমান্বিত।

■ জন্ম ও বাল্যকাল:- ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১১ জানুয়ারি কলকাতার সিমলা পল্লীতে বিখ্যাত দত্ত পরিবারে বিবেকানন্দ জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন একজন বিখ্যাত ব্যারিস্টার। ভুবনেশ্বরী দেবী ছিলেন বিবেকানন্দের মাতা। বাক্যকালে তাঁর নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ। বাল্যকালে নরেন্দ্রনাথ অত্যন্ত দুরন্ত প্রকৃতির ছিলেন। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। মায়ের মুখে মহাভারতের কাহিনি শুনে শুনেই তিনি কণ্ঠস্থ করে ফেলেছিলেন।

■ শিক্ষা জীবন:- মাত্র ছয় বৎসর বয়সে তাঁকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন থেকে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে এন্ট্রাস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর তিনি জেনারেল এসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন থেকে বি.এ.পাশ করেন। ব্যায়াম, খেলাধুলা, সঙ্গীত তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ছিল। পাশ্চাত্য দর্শন পাঠ করে তিনি প্রথমে নাস্তিক হয়ে উঠেছিলেন।

■ কর্মজীবন:- পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃয় পরমহংসদেবের সংস্পর্শে এসে উপলব্ধি করেন জীবসেবাই হল ঈশ্বর সেবা। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেহত্যাগ করলে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। সন্নাস গ্রহণের পর তাঁর নাম হয় স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি নতুন ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি শিকাগো শহরে বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে যোগদান করেন।

তাঁর বক্তৃতা প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরে তিনি ইউরোপে ও আমেরিকায় বেদান্ত ধর্ম প্রচার করেন। অনেকেই তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর অন্যতম শিষ্যা ভগিনী নিবেদিতা একটি পরিচিত নাম। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর তিনি নির্মাণ করেন বেলুড়মঠ। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই মাত্র ৩৯ বৎসর বয়সে সমাধিস্থ অবস্থায় তাঁর পার্থিব দেহের অবসান ঘটে।

■ বিবেকানন্দের বাণী:- তাঁর মতে নির্ভীক না হলে ধর্মপরায়ণ হওয়া যায় না। ঈশ্বরে বিশ্বাস সম্বন্ধে তিনি বলেছেন, “নিজের উপর বিশ্বাস না এলে ঈশ্বরে বিশ্বাস আসে না।” ধর্ম সম্বন্ধে তিনি বলেছেন, ‘অপরকে ভালোবাসাই ধর্ম। ভিনি আরও বলেছেন, “সত্যের জন্য সব কিছুকেই ত্যাগ করা চলে, কিন্তু কোনো কিছুরই জন্য সত্যকে বর্জন করা চলে না।”

■ উপসংহার:- বিবেকানন্দ প্রত্যক্ষভাবে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবু তিনি ভারতের যুবশক্তিকে নানা ভাবে অনুপ্রাণিত করে গেছেন। এই মহান পুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর জন্মদিনে ভারতে আন্তর্জাতিক যুববর্ষের উদ্বোধন হয়। হৃদয় তিনি শুদ্ধভাবে আত্মোপলব্ধি করেছিলেন বলেই বলতে পেরেছিলেন, “হে ভারত ভুলিও না — নীচ জাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই।”