প্রবন্ধ রচনা- ভারতের গ্রাম ও শহর | Villages and Cities of India Essay Writing in Bengali

ভারতের গ্রাম ও শহর | Villages and Cities of India Essay Writing in Bengali

[প্রবন্ধ সংকেত :: ভূমিকা | ভারতের গ্রাম-শহরের আবির্ভাব | গ্রাম ও শহরের ব্যবধান | ব্যবধান দূর করার প্রয়াস | উপসংহার]

ভূমিকা:- মানুষ একদিন ছিল যাযাবর। সেই যাযাবর মানুষই একদিন ঘর তৈরি করল। প্রকৃতির বুকে ছোটো ছোটো গ্রাম গড়ে উঠল। কৃষিকাজ প্রধান হয়ে উঠল গ্রামের মানুষের কাছে। বলা যায়, তার অর্থনীতি পুরোটাই কৃষি-নির্ভর।

■ ভারতের গ্রাম:- একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, ভারতের গ্রামগুলির গঠন সবজায়গায় প্রায় একই ধরনের। পাখির কলরব, বিস্তৃত শস্যক্ষেত, চারিদিকে গাছ গাছালি এই নিয়ে ভারতের গ্রাম। মাটির দেয়াল, খড়ের চাল, গৃহপালিত পশু, সামনে ছোট্ট একটু উঠোন দেখলেই বোঝা যাবে ভারতের গ্রাম। একদা এই গ্রামগুলিতে অভাব ছিল না, কষ্ট ছিল না। আনন্দময় ছিল মানুষগুলির জীবন। কিন্তু ক্রমে কোথায় সেই সব সুন্দর পরিবেশ হারিয়ে গেল। সন্ধ্যা বেলায় রাখাল বালক গোরুর পাল নিয়ে ফিরে না, হাম্বা হাম্বা রবে গোধুলি বেলা মধুময় হয়ে উঠে না। মন্দিরে শোনা যায় না শঙ্খ-ঘণ্টা কাঁসরের শব্দ।

■ ভারতের শহর:-শহরের আবির্ভাব ক্রমে সময়ের পরিবর্তনে সভ্যতারও পরিবর্তন ঘটল। গ্রাম-সভ্যতার জায়গায় এল নগর সভ্যতা। ইংরেজ আগমনের সাথে সাথে গ্রাম সভ্যতার ধ্বংস সাধন হল। নগর-সভ্যতার চাকচিকা ও তার আকর্ষণ মানুষকে পেয়ে বসল। স্বাভাবিকভাবে গ্রামের সৌন্দর্য নষ্ট হল। প্রায় অনেকেই ছুটল নগরের দিকে। গ্রাম হল অবহেলিত। তার শিক্ষা-দীক্ষা অন্ধকারে ঢাকা পড়ল। কুসংস্কারাচ্ছন্ন মন নিয়ে অশিক্ষার অন্ধকার প্রাণহীন দিন যাপনের গ্লানি নিয়ে কোনরকমে বেঁচে রইল তারা।

■ গ্রাম ও শহরের ব্যবধান:- নগর সভ্যতা গ্রামজীবনের সমস্ত আনন্দ ও প্রাণচাঞ্চল্যকে নষ্ট করল। গ্রাম উপেক্ষিত হল। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, সিনেমা, থিয়েটার সব গড়ে উঠল শহরে। গ্রামের অর্থনীতি ভেঙে গেল। দারিদ্র্যের হাহাকারে পরিপূর্ণ হল গ্রাম। কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি হল না। কুটির শিল্প। বিনষ্ট হল। স্বাস্থ্যহীনতা ও অকালমৃত্যু নিত্য সহচর হল গ্রামের মানুষদের। অন্যদিকে আর্থিক স্বচ্ছলতা শহর জীবনকে করল মুখরিত।

■ ব্যবধান দূর করার প্রয়াস:- পরাধীনতার গ্লানি থেকে দেশ মুক্ত হল। স্বাধীন দেশের সরকার গ্রামের উন্নতির কথা চিন্তা করলেন। গ্রামের ভেঙে যাওয়া অর্থনীতিকে আবার জাগিয়ে তোলার চেষ্টা হল। যে গ্রাম অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতায় আবদ্ধ ছিল, সেখানে শিক্ষার প্রসারের চেষ্টা হচ্ছে। গ্রাম ও শহরের ব্যবধান কমিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় কাজ বেশি হয়নি তবু মানুষ আশা করছে, গ্রামের অতীত গৌরব আবার ফিরে আসবে। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে। শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটবে। কুটির শিল্প আবার তার মহিমা ফিরে পাবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আনন্দ গ্রামগুলিকে আবার প্রাণচাঞ্চল্যে ভরিয়ে দেবে।

■ উপসংহার:- গ্রামের উন্নতি বিধান পঞ্চায়েত রাজ কায়েম হচ্ছে। গ্রামের উন্নতি কীভাবে হবে তা গ্রামবাসীরাই নির্ধারণ করে দেবে। ইতিমধ্যে কিছু কাজ হয়েছে এবং আরও অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। মানুষ আর শহরমুখী হবে না। গ্রামের মধ্যেই সব রকম সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে। গ্রাম ও শহরে বিরোধ নয়। পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠবে। শহরের সুবিধাও থাকের আবার গ্রামের বৈশিষ্ট্যও নষ্ট হবে না। আবার গড়ে উঠবে স্বপ্নের ভারত।