সংস্কৃত নাট্যকাররূপে কালিদাসের নাট্যপ্রতিভা | Kalidasas Talent of a Dramatist

সংস্কৃত নাট্যকাররূপে কালিদাসের নাট্যপ্রতিভা | Kalidasas Talent of a Dramatist

■ কালিদাসের নাটকত্রয় কালিদাস মূলতঃ কবি হলেও নাট্যসাহিত্যে সমান দক্ষতায় তাঁর পদসঞ্চার সকলকে বিস্মিত করে। মালবিকাগ্নিমিত্র, বিক্রমোর্কশীয় এবং অভিজ্ঞান শকুন্তল — তিনটি নাটকেই কবিপ্রতিভার ব্যাপ্তি ও গভীরতা পরিলক্ষিত হয়। কালিদাসের প্রেমভাবনার ক্রমপরিণতির স্তর এবং নাট্যপ্রতিভার ক্রমবিকাশ দেখে মনে হয় যে, মহাকবি কালিদাসের নাট্যপ্রতিভার বীজ মালবিকাগ্নিমিত্রে উপ্ত হয়েছে, বিক্রমোবশীয়ে অঙ্কুরিত হয়েছে এবং অভিজ্ঞানশকুগুলে পল্লবিত হয়ে পরিণত হয়েছে পুষ্পপত্র – সমৃদ্ধ বিশাল মহীরূহে। মালবিকাগ্নিমিত্র কালিদাসের প্রথম বয়সের রচনা।

প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের মতে এটাই কালিদাসের প্রথম নাট্যকৃতি। প্রথম রচনার বিনম্র বিনয় ১ সেই ইঙ্গিতই বহন করে। বিদিশাধিপতি অগ্নিমিত্রের সঙ্গে বিদর্ভরাজকন্যা মালবিকার প্রণয় ও পরিণয় এই পঞ্চাঙ্ক নাটকের মূল বিষয়বস্তু। বিদর্ভের রাজকন্যা মালবিকা দস্যুহস্তে পড়ে ঘটনাচক্রে অগ্নিমিত্রের অন্তঃপুরে রাজমহিষী ধারিণীর কাছে আশ্রয় পেয়েছেন। ধারিণী তাঁর নৃত্য ও ললিতকলা শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেন। তিনি তাকে রাজা অগ্নিমিত্রের চোখের আড়ালে রাখতে চাইলেও রাজা মহিষীর পাশে চিত্রিতা সুন্দরী মালবিকাকে দেখে মুগ্ধ হন।

বিদূষক গৌতমের সহায়তায় মালবিকার নৃত্যকলা দেখে রাজা তার প্রতি আসক্ত হন। অগ্নিমিত্র মালবিকার গোপন প্রণয়ের দৃশ্য চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করে দ্বিতীয়া রাণী ইরাবতী রাজাকে তিরস্কার করেন এবং বিদূষক ও মালবিকাকে বন্দী করেন। বিদর্ভ থেকে আগত দূত প্রভৃত উপঢৌকন এবং শিল্পকলায় নিপুণা পরিচারিকা সহ রাজার সাক্ষাৎপ্রার্থী। তারা মালবিকাকে তাদের রাজকুমারী বলে চিনতে পারে। মালবিকার প্রকৃত পরিচয় প্রকাশিত হওয়ার পর সংবাদ আসে যে অগ্নিমিত্রের পুত্র বসুমিত্র যবনদের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হয়ে যজ্ঞাশ্ব নিয়ে ফিরে এসেছেন।

এই আনন্দের মুহূর্তে দেবী ধারিণী মালবিকাকে বধূরূপে অগ্নিমিত্রের হাতে সমর্পণ করেন। নায়ক-নায়িকার মধুর মিলনে নাটকটি সমাপ্ত হয়েছে। নাটকটি ঐতিহাসিক পটভূমিকাকে ভিত্তি করে রচিত। শুঙ্গবংশের তিন রাজা— পুষ্পমিত্র, অগ্নিমিত্র ও বসুমিত্র এবং অগ্নিমিত্রের অমাত্য বাহতক, রাজশ্যালক বীরসেন, বিদর্ভরাজ যজ্ঞসেন ও তাঁর জ্ঞাতিভ্রাতা মাধবসেন — এই কয়টি ঐতিহাসিক চরিত্র ছাড়া সম্পূর্ণ কাহিনী কবিকল্পিত।

‘মালবিকাগ্নিমিত্র’ দ্রুতলয়ে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহের এক জীবন্ত চিত্র, যা রঙে, রসে ও বৈচিত্র্যে উদ্ভাসিত। নাটকটিতে রাজপ্রাসাদের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে, প্রতিফলিত হয়েছে রাজান্তঃপুরের আভ্যন্তরীণ রঙ্গরসের নিখুঁত ছবি। লাবণ্যময়ী নায়িকা মালবিকার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বর্ণনা, প্রেমিক প্রেমিকার হাব-ভাব-বিলাস, আবেগচঞ্চল প্রণয়চিত্র কতই না বাস্তব ও হৃদয়গ্রাহী! চরিত্রচিত্রণেও কবির দক্ষতা প্রশংসনীয়। অগ্নিমিত্র বা মালবিকা নায়ক বা নায়িকা হিসাবে খুব উচ্চস্তরের না হলেও নাট্যকাহিনীর উপযোগী করেই নাট্যকার তাঁদের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন। বিদষকের কৌতুকপ্রিয়তা ও ভোজনরসিকতা, ধারিণীর রাজমহিষীসুলভ আত্মমর্যাদা, সহিষ্ণুতা ও আত্মত্যাগের পরাকাষ্ঠা; ইরাবতীর প্রতিনায়িকাসুলভ প্রগল্ভতা ও ঈর্যাকাতরতা প্রভৃতি নাট্যকারের প্রতিভাস্পর্শে ভাস্বর হয়ে উঠেছে।