ব্যাকরণ সাহিত্যে পতঞ্জলির ভূমিকা | Role of Patengali in Grammar Literature

ব্যাকরণ সাহিত্যে পতঞ্জলির ভূমিকা | Role of Patengali in Grammar Literature

■ পতঞ্জলি পাণিনির ব্যাকরণ সম্পূর্ণতা লাভ করে পতঞ্জলি হাতে। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম ‘মহাভাষ্য’। স্বরচিত গ্রন্থে নিজের অভিমত ব্যক্ত করার সময় পতঞ্জলি নিজেকে ‘গৌণদীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। কাজেই তিনি গোনর্দ দেশের অধিবাসী ছিলেন। অযোধ্যাসন্নিহিত গোণ্ডা নামক স্থানই গোনদ।

পাণিনি পশ্চিমদেশীয়, কাত্যায়ন দাক্ষিণাত্য এবং পতঞ্জলি পূর্বভারতীয় — এই তিন বৈয়াকরণের হাতে ব্যাকরণ সম্পূর্ণতা লাভ করে। তাই বলা হয় — ‘ত্রিমুনি ব্যাকরণম্’। অনেকে পতঞ্জলির কাল নির্ণয়ের চেষ্টা করেছেন। অধ্যাপক গোল্ডস্টুকারের মতে খ্রীষ্টপূর্ব ১৪০ থেকে ১২০ অব্দের মধ্যেই পতঞ্জলির আবির্ভাব।

ম্যাকডোন্যাল তাঁকে চিহ্নিত করেছেন খ্রীঃ পূঃ দ্বিতীয় শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের লোকরূপে। অধ্যাপক কীথের মতে খ্রীঃ পূঃ ১৫০ অব্দে পতঞ্জলি উপস্থিত ছিলেন। খ্রীঃ পূঃ ১৮৫ তেকে ১৪৯ অব্দ পর্যন্ত পুষ্যমিত্র পাটালিপুত্রের সিংহাসনে আসীন ছিলেন।

এই দিক থেকে বিচার করলে পুষ্যমিত্রের রাজত্বকালই পতঞ্জলির স্থিতিকালরূপে চিহ্নিত হয়। যোগদর্শন -প্রণেতা পতঞ্জলি এবং মহাভাষ্যকার পতঞ্জলি একই ব্যক্তি কিনা তা বিতর্কিত বিষয়। পতঞ্জলি প্রণীত ‘মহাভাষ্য’ গ্রন্থটি আকারে যেমন বিশাল, মহত্ত্বেও তেমনি অতুলনীয়। আয়তনে তা প্রায় বাল্মীকি রামায়ণের সমতুল্য।

এটি পাণিনির সূত্র ও কাত্যায়নের বার্তিকের উপর রচিত ভাষ্যগ্রন্থ। গ্রন্থটি কেন মহাভাষ্য নামে অভিহিত হয়েছে — এ প্রসঙ্গে ‘বাক্যপদীয়’ গ্রন্থের টীকায়’ বলা হয়েছে যে, এই গ্রন্থটি অর্থের গাম্ভীর্যে অতলস্পর্শ অথচ পদবিন্যাসের সৌষ্ঠবে প্রাঞ্জল। সমস্ত ন্যায়ের মূলতত্ত্ব এই গ্রন্থে নিবন্ধ থাকায় উৎকর্ষ খ্যাপনের জন্য একে মহাভাষ্য আখ্যায় অভিহিত করা হয়েছে।

পতঞ্জলি এই গ্রন্থে মূলতঃ কাত্যায়নের রচিত বার্তিকসমূহকেই ব্যাখ্যা করেছেন এবং প্রসঙ্গক্রমে কিছু কিছু পাণিনীয় সূত্রও এখানে ব্যাখ্যাত হয়েছে। অষ্টাধ্যায়ীর ৩২ টি পাদকে পতঞ্জলি বিভিন্ন আহ্নিকে বিভক্ত করেছেন। ‘মহাভাষ্য’ ৮৪ টি আহ্নিকে বিভক্ত। যে সকল ক্ষেত্রে কাত্যায়ন্ পাণিনি সূত্রের অপ্রাসঙ্গিকতা দেখাতে চেয়েছেন, সেইসব ক্ষেত্রে পতঞ্জলি কাত্যায়নকে নিবৃত্ত করে পাণিনিকে সমর্থন করেছেন। যেমন — প্রত্যাহার আহ্নিকে ‘অইউন্‌’ এই সূত্রের বার্তিকে কাত্যায়ন বলেছেন — ‘অকারস্য বিবৃতোপদেশ আকারগ্রহণার্থঃ’। এই বার্তিকের বিবরণ করতে গিয়ে পতঞ্জলি কাত্যায়নের প্রাজ্ঞন্মন্যতার উল্লেখ করে পাণিনিকে সমর্থন করেছেন—

‘অহোপুরুষিকামাত্রংতু ভবানাহ সংবৃতস্যোপদিশ্যমানস্য বিবৃতো পদেশশ্চোদ্যতে। বয়ং তুব্রুমঃ বিবৃতস্যোপদিশ্যমানস্য প্রযোজনমম্বাখ্যায়তে’। বিবিধ শাস্ত্রে নিযাত বাগ্‌যোগবিত্ পতঞ্জলির রচনার বৈশিষ্ট্য ও ভাষার মাধুর্য্য গ্রন্থটিকে সংস্কৃত ব্যাকরণ শাস্ত্রের ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে।