প্রবন্ধ রচনা- সর্বশিক্ষা অভিযান | Sarva Shiksha Abhiyan Essay Writing

সর্বশিক্ষা অভিযান | Sarva Shiksha Abhiyan Essay Writing

[প্রবন্ধ – সংকেত:: সাক্ষরতার ভূমিকা | নিরক্ষরতা জীবনের অভিশাপ | সর্বশিক্ষা অভিযান | বয়স্ক শিক্ষা উপসংহার]

■ সাক্ষরতার ভূমিকা:- মানুষের জীবনে প্রয়োজন আলো। সে আলো জ্ঞানের আলো। নিরক্ষর মানুষ চোখ থেকেও অন্ধ। জ্ঞানরাজ্যের রস উপভোগ থেকে তারা বঞ্চিত। বিশ্বজগতের কত রহস্যময় জিনিস তাদের অজ্ঞাত। গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকের ন্যূনতম শিক্ষা অক্ষরজ্ঞান অপরিহার্য, তা না হলে গণতন্ত্র অর্থহীন।

■ নিরক্ষরতা জীবনের অভিশাপ:- বর্তমান সমাজে নিরক্ষরের জীবন একান্তই অভিশপ্ত। শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিষ্টাচারবিহীন পাশব জীবন কাটাতে হয় তাদের। দারিদ্রসীমার সর্বনিম্ন স্তরে তাদের অবস্থান। রাজনীতির চেতনা, গণতান্ত্রিকতাবোধ, স্বাধিকার জ্ঞান সবকিছু থেকেই তারা বঞ্চিত। এইসব নিরক্ষর মানুষদের বিড়ম্বিত জীবন বড়ো দুঃখের। নাম স্বাক্ষরের অক্ষমতার দরুণ বুড়ো আঙুলের ছাপ দিয়ে নিজের পরিচিতি প্রকাশের লজ্জা কোন বিশেষ নাগরিকের নয় তা দেশের

■ সর্বশিক্ষা অভিযান:- নিরক্ষরতা অবসানের জন্য দুভাবে অভিযান চালানো যেতে পারে।

● (১) সংবিধানের নির্দেশ মতো বালকবালিকাদের ১৪ বছর পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা দেবার ব্যবস্থাকে যথাযথ কার্যকরী করা।

● (২) বয়স্ক নিরক্ষরদের অক্ষরজ্ঞান দেবার উদ্দেশ্যে বাস্তবোচিত পরিকল্পনা করে তাকে যথার্থ রূপ দেওয়া। বিদ্যালয় গত শিক্ষার ব্যাপারে প্রায় সকল রাষ্ট্রই প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করেছে। কিন্তু তাতেও শিক্ষার সাফল্য পরিপূর্ণ অর্জিত হচ্ছে না বা জনশিক্ষার প্রসার সমভাবে সব রাজ্যে ঘটছে না। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতে আধুনিকীকরণ অর্থাৎ শিল্পায়ন ও প্রযুক্তিবিজ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অজর্নের প্রধান কারণ হল সে দেশের জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার। আমাদের দেশে বর্তমানে রাজ্যসরকারের দায়িত্বাধীনে বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৯৭৮ সালের ২ রা অক্টোবর সারা দেশে বয়স্ক শিক্ষাসূচী প্রবর্তিত হয়েছে। সকল রাজ্যে ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে এই উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে বয়স্ক শিক্ষাবোর্ড। ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা বর্ষ ৯০’ -এর ডাকে সাড়া দিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সাক্ষরতার অভিযান চলছে পূর্ণোদ্যমে।

■ বয়স্ক শিক্ষা:- ১৯৭৮ সালের ২ রা অক্টোবর বয়স্ক শিক্ষাসূচী প্রবর্তিত হয়েছে। নিরক্ষরতা দূরীকরণ কার্যক্রমের একটি বিশেষ দিক হচ্ছে বয়স্ক শিক্ষাদান। গ্রামাঞ্চল ও শ্রমিক পরিবারের বয়স্ক নারী ও পুরুষদের জন্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা একটি জাতীয় কর্তব্য। প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে নিজেদের জীবিকা বা বৃত্তি সম্বন্ধে সচেতনতা, সমাজের নিয়মনীতি, স্বাস্থ্যরক্ষারবিধি, অবকাশের সদ্ব্যব্যবহার, পারিবারিক গোষ্ঠীগত জীবনযাত্রার মান উন্নত ইত্যাদির শিক্ষাদান বয়স্কদের শিক্ষাদান কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। তার জন্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ও গোষ্ঠীকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। কেন্দ্রীয় শিক্ষাবিভাগ বয়স্ক নতুন সাক্ষরদের উপযোগী গ্রন্থ রচনার জন্যে লেখকদের নানাভাবে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নৈশবিদ্যালয় স্থাপন করে সামাজিক দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন। গান্ধীজীর পরিকল্পিত বুনিয়াদী শিক্ষাদর্শকেও রূপায়িত করার চেষ্টা হয়েছে।

■ উপসংহার:- ভারতবর্ষ রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করেছে, কিন্তু সেখানেই তাকে থেমে পড়লে চলবে না। দেশের প্রত্যেক নিরক্ষর মানুষকে শিক্ষার আলোকে আলোকিত করতে হবে।