ভারতীয় ইতিহাসে ভৌগোলিক উপাদান গুলির প্রভাব | Geographical Factors on Indian History

Hello Students,


Wellcome to edu.bengaliportal.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা,  edu.bengaliportal.com আজ নিয়ে এসেছি Geographical Factors on Indian History. প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষার যেমন  CTET | WBTET | WBCS । MPTET | ATET| UPTET | Rajasthan PTET | TNTET | Karnataka TET | RTET | HTET| PSTET। BANK EXAM। ইত্যাদি পরীক্ষার বিভিন্ন প্রস্তুতি পত্র আপনাদের বিনামূল্যে দিয়ে এসেছি। তাই Ajjkal.com আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে ভারতীয় ইতিহাসে ভৌগোলিক উপাদান গুলির প্রভাব | Geographical Factors on Indian History

Ajjkal

ভারতীয় ইতিহাসে ভৌগোলিক উপাদান গুলির প্রভাব | Geographical Factors on Indian History

■ ভৌগোলিক উপাদান :

৮° অক্ষরেখা ও ৩৬° অক্ষরেখার মধ্যে অবস্থিত ভারতবর্ষের ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য চোখে পড়ার মতো। এই বৈচিত্র্যের কথা মাথায় রেখেই অনেক ঐতিহাসিক ভারতবর্ষকে ‘উপমহাদেশ’ বলে অভিহিত করেছেন। উত্তরে আকাশছোঁয়া হিমালয় পর্বতমালা থেকে দক্ষিণে তিন দিকে সমুদ্র বেষ্টিত ভারতবর্ষের মাঝখানে রয়েছে সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র নদী বিধৌত শস্যশ্যামলা সমভূমি, রাজপুতনার বালুকাময় প্রান্তর, দক্ষিণ ভারতের মালভূমি, গহন অরণ্য এবং অসংখ্য নদনদী, যা এই ঐতিহ্যপূর্ণ দেশকে এক অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে।

■ (১) হিমালয় পর্বতের প্রভাব : পূর্ব থেকে পশ্চিমে অর্ধচন্দ্রকারে প্রায় ২,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালা ভারতের উত্তর সীমান্তে দুর্ভেদ্য প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে থেকে শুধু যে বহিঃশত্রুর হাত থেকে ভারতবর্ষকে অনেকাংশে রক্ষা করেছে তাই নয়, হিমালয় পর্বতের অবস্থান ভারতীয় উপমহাদেশকে মধ্য এশিয়ার হাড়কাঁপানো শীতের হাত থেকেও রক্ষা করেছে। একদিকে হিমালয় পর্বতের সুউচ্চ প্রাচীর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে ভারতবর্ষে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করেছে, আর অন্যদিকে হিমালয় থেকে নির্গত নদীগুলির কল্যাণে ভারত হয়ে উঠেছে সুজলা-সুফলা শস্যশ্যামলা। হিমালয় যে দুর্জয় ব্যবধানের প্রাচীর গড়ে তুলেছে, তার ফলে ভারত বহির্জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজস্ব সভ্যতা ও সংস্কৃতি গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছে। তাই মিশরকে যদি ‘নীলনদের দান’ বলা হয়, তাহলে একইভাবে ভারতবর্ষকেও ‘হিমালয়ের দান ‘ বলা যেতে পারে।

■ [২] বিন্ধ্যপর্বতের প্রভাব : হিমালয় ছাড়া অন্য যে পর্বতটি ভারতের ইতিহাসকে যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে, তা হচ্ছে বিন্ধ্যপর্বত। বিন্ধ্যপর্বতের জন্যই দাক্ষিণাত্যে দ্রাবিড় সংস্কৃতি তার নিজস্ব আঙ্গিকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এমনকি এর জন্যই দক্ষিণ ভারতকে উত্তর ভারতের মতো বার বার বিদেশি আক্রমণে বিধ্বস্ত হতে হয়নি। এর ফলে দক্ষিণ ভারতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বহুলাংশে বজায় থেকেছে এবং এই অঞ্চলে ব্যাবসাবাণিজ্য তার নিজস্ব গতিতে বাধাহীনভাবে প্রসার লাভ করার সুযোগ পেয়েছে।

■ [৩] গিরিপথের প্রভাব : হিমালয় পর্বতের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত খাইবার পাস, জোজিলা পাস, নাথুলা পাস প্রভৃতি গিরিপথগুলো দিয়েই আর্য, গ্রীক, শক, হূন, তুর্কি, মুঘল প্রভৃতি জাতি যুগে যুগে ভারতে প্রবেশ করে ভারতীয় সভ্যতায় নিজেদের বিলীন করে এই সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছে। অন্য দিকে — ভারতবর্ষের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ধর্ম হিমালয়, কারাকোরাম ও হিন্দুকুশ পর্বতের বাধা অতিক্রম করে মধ্যএশিয়া, চিন ও তিব্বতে ছড়িয়ে পড়েছে।

■ [৪] নদনদীর প্রভাব : যুগে যুগে ভারত ইতিহাসের ধারা পরিচালনায় ভারতের অগণিত নদনদীর বিশেষ প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না। প্রধানত সিন্ধু ও গঙ্গাকে কেন্দ্র করে প্রাচীন ভারতে যে নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার সূচনা ও বিকাশ ঘটে তার ধারা আধুনিক যুগের সূচনাকাল পর্যন্ত বজায় থাকে। শুধু তাই নয়, উর্বর নদী উপত্যকা অঞ্চল অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সুসমৃদ্ধশালী হওয়ায় সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতের জনসমষ্টি সাহিত্য, সংস্কৃতি ও দর্শনে মনোনিবেশ করার সুযোগ পাওয়ার পাশাপাশি এক অতি উন্নত সভ্যতা গড়ে তোলার রসদ পেয়েছে।

■ [৫] সমভূমির প্রভাব : ভারতবর্ষের অতি উর্বর সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রক্ষ্মপুত্র বিধৌত সমভূমি অঞ্চলকে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার জন্মভূমি বলা যায়। সামান্য পরিশ্রমেই এই অতি উর্বর সমভূমিতে প্রচুর ফসল ফলে। খাদ্যের চিন্তামুক্ত এই নিশ্চিন্ত জীবনই এখানকার অধিবাসীদের কলা ও শিল্পে পারদর্শী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দার্শনিক চিন্তা, ধর্মাচরণ, সাহিত্য রচনা ও মননশীল চিন্তাধারার সুযোগ করে দেয়, যা যুগে যুগে মৌর্য, গুপ্ত, কুষাণ, পল্লব, সাতবাহন, সুলতানি ও মুঘল সভ্যতার মধ্যে দিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।

■ [৬] সমুদ্রের প্রভাব : সমুদ্রের অবস্থানও যুগে যুগে ভারতের ইতিহাসকে প্রভাবিত করেছে। ভারতবর্ষের তিনদিকে সমুদ্রবেষ্টিত থাকায় একদিকে যেমন জলপথে বহিঃশত্রুর আক্রমণের সম্ভাবনা কমেছে, অন্যদিকে সুপ্রাচীনকাল থেকেই ভারতবাসীদের পক্ষে সমুদ্রপথে বাণিজ্য ও উপনিবেশ স্থাপন করা সহজতর হয়ে উঠেছে। এর ফলস্বরূপ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, যেমন সুমাত্রা, বর্ণিও, জাভা, সিংহল প্রভৃতি ভারতীয় উপনিবেশ স্থাপিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এইসব অঞ্চলে ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছে। পরবর্তীকালে ইউরোপীয় জাতিগুলি সমুদ্রপথেই ভারতে প্রবেশ করে উপনিবেশ গড়ে তোলে। এরই অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ ভারতের শাসনভারও যায় তাদের হাতে, অর্থাৎ ভারতের রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে। পরিশেষে বলা যায় যে, বিশাল ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলের বৈচিত্র্যপূর্ণ ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ভারতীয়দের চরিত্র, জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবিকা ও বৃত্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যের সৃষ্টি করেছে।

Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন।