সমুদ্রগুপ্তের কৃতিত্বের বর্ণনা | Description of Samudragupta’s Achievements




Hello Students,


Wellcome to edu.bengaliportal.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা,  edu.bengaliportal.com আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি Description of Samudragupta’s Achievements. প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষার যেমন  CTET | WBTET | WBCS । MPTET | ATET| UPTET | Rajasthan PTET | TNTET | Karnataka TET | RTET | HTET| PSTET। BANK EXAM। ইত্যাদি পরীক্ষার বিভিন্ন প্রস্তুতি পত্র আপনাদের বিনামূল্যে দিয়ে এসেছি। তাই Ajjkal.com আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Description of Samudragupta’s Achievements

Ajjkal



সমুদ্রগুপ্ত (৩৪০-৩৮০ খ্রিস্টাব্দ) : প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে যে কয়েকজন খ্যাতিমান শাসকের সন্ধান পাওয়া যায়, সমুদ্রগুপ্ত ছিলেন নিঃসন্দেহে তাঁদের মধ্যে অন্যতম। অসাধারণ সামরিক প্রতিভা, বাস্তব বুদ্ধি এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী যথাযোগ্য পথ অনুসরণ ক্ষমতাই তাঁকে সাম্রাজ্য বিস্তার তথা খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল।



তাঁর সাফল্যের স্বীকৃতি মেলে ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদারের এই মন্তব্যে— ‘ভারতের ইতিহাসে সমুদ্রগুপ্ত এক অবিস্মরণীয় সম্রাট, ভারতের ইতিহাসে এক নবযুগের স্রষ্টা, সর্বভারতীয় সাম্রাজ্যগঠনের আদর্শ দ্বারা তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন’। এলাহাবাদ প্রশস্তি, মুদ্রা, লিপি ও চৈনিক বিবরণ থেকে তাঁর সার্বিক কার্যকলাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।




সমুদ্রগুপ্তের কৃতিত্ব : সিংহাসনে আরোহণের পর সমুদ্রগুপ্ত পূর্বপুরুষদের অনুকরণে রাজ্য বিস্তারে সচেষ্ট হন। এক্ষেত্রে শক্তিমান মাত্রই যুদ্ধ করবে ও শত্রু নিপাত করবে’, কৌটিল্যের ‘শত্রু নিধনের এই আদর্শের নীতিতে’ প্রভাবিত হয়ে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য তিনি উত্তর ভারতের দিকে অগ্রসর হন।

■ (১) উত্তর ভারত জয় : প্রথমেই সমুদ্রগুপ্ত আর্যাবর্ত বা উত্তর ভারতের ৯ জন রাজাকে পরাজিত করে নিজের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন, এঁরা হলেন : রুদ্রদেব, মাতিল, নাগদত্ত, চন্দ্রবর্মন, গণপতিনাগ, অচ্যুত, নাগসেন, নন্দী ও বলবর্মণ। এইসব রাজাদের পরাজিত করবার পর সমুদ্রগুপ্ত উত্তর ভারতের দিল্লি ও পাঞ্জাবের অন্তর্গত কোটা রাজ্য ও মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলাকীর্ণ আটবিক রাজ্যটি গ্রাস করেন। উত্তর ভারতের সবকটি স্বাধীন “সর্বরাজোচ্ছেত্তা” উপাধি গ্রহণ করেন। সমুদ্রগুপ্তের মুদ্রা রাজ্যকে গুপ্ত সাম্রাজ্যভুক্ত করে সমুদ্রগুপ্ত

■ (২) দক্ষিণ ভারত জয় : উত্তর ভারতে একাধিপত্য স্থাপন করার পর সমুদ্রগুপ্ত দক্ষিণ ভারত বিজয়ের জন্য মনোনিবেশ করেন। এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে জানা যায় তিনি দক্ষিণ ভারতের যে ১২ জন রাজাকে পরাজিত করেছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিলেন কোশলের মহেন্দ্র l, মহাকান্ডারের ব্যাঘ্ররাজ, কৌরলের মন্ত্ররাজ, কোত্তরের স্বামীদত্ত, কাঞ্ঝির বিষ্ণুগোপ, প্রমুখ। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, দক্ষিণ ভারতের অভিযানে সামরিক সাফল্য লাভ করলেও ভৌগোলিক দূরত্বের জন্য দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিকে সমুদ্রগুপ্ত নিজের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেননি। করদান ও আনুগত্যের বিনিময়ে ওই সব রাজ্যের রাজাদের রাজ্য তিনি ফেরত দিয়ে দেন, এই নীতিকে “গ্রহণ পরিমোক্ষ” বলা হয়েছে।

(৩) অন্যান্য রাজ্যজয় : পরবর্তীকালে সমুদ্রগুপ্তের দিগ্বিজয়ে আতঙ্কিত হয়ে পূর্ব ও পশ্চিম ভারতের সীমান্ত অঞ্চলের রাজারা প্রায় বিনা যুদ্ধেই সমুদ্রগুপ্তের বশ্যতা স্বীকার করে নেন। এছাড়া পাঞ্জাব ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের অর্জুনায়ণ, মদ্রক প্রভৃতি উপজাতীয় রাজ্যও তাঁর বশ্যতা মেনে নেয়। তাঁর সার্বিক রাজ্যজয় সম্বন্ধে মতপ্রকাশ কালে ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার যথার্থই বলেছেন, ‘কাশ্মীর, পশ্চিম পাঞ্জাব, পশ্চিম রাজপুতনা, সিন্ধু , গুজরাট ছাড়া সমগ্র উত্তর ভারত সমুদ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল’। এইভাবে তিনি সমস্ত রাজনৈতিক অনৈক্যের অবসান ঘটিয়ে সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।

(৪) ভারতের নেপোলিয়ন : সাম্রাজ্যবিস্তার শেষ করে তিনি অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন এবং ‘পরাক্রমাঙ্ক’, ‘অপতিরথ’প্রভৃতি উপাধি ধারণ করেন। সামরিক অভিযানের ব্যাপকতা ও রাষ্ট্রীয় আধিপত্যের বিস্তৃতি লক্ষ করে ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ তাঁকে “ভারতের নেপোলিয়ন” বলে অভিহিত করেছেন। বস্তুত সমুদ্রগুপ্তের সামরিক প্রতিভার সঙ্গে নেপোলিয়নের সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও তিনি কিন্তু পররাজ্যগ্রাসকারী ছিলেন না।

(৫) ধর্মীয় সহিষ্ণুতা : ব্যক্তিগত জীবনে শৈব হলেও সমুদ্রগুপ্ত বৌদ্ধধর্মসহ অন্য সব ধর্মের প্রতি উদার ছিলেন। তাঁর রাজসভায় একাধিক বৌদ্ধ পণ্ডিতের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। সমুদ্রগুপ্তের সময়েই ব্রাত্মণ্যধর্মের পুনরুত্থান ঘটে। তাঁর ব্যক্তিত্বে আকৃষ্ট হয়ে সিংহলের বৌদ্ধরাজা তাঁর রাজসভায় দূত পাঠান।

(৬) বহুমুখী প্রতিভা : সমুদ্রগুপ্ত রাজ্য বিজেতা ও সুদক্ষ শাসক হিসেবেই নয়, তিনি ছিলেন একজন বিদ্যোৎসাহী, সুকবি, সংগীতজ্ঞ ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। শাস্ত্রতত্ত্বে তাঁর বিশেষ অধিকার ছিল। এলাহাবাদ প্রশস্তিতে তাঁকে ‘কবিরাজ’বলে অভিহিত করা হয়েছে। তিনি ছিলেন একজন সংগীত শিল্পী। বীণাবাদনরত মুদ্রায় তাঁর সংগীতচর্চার নিদর্শন পাওয়া যায়।

(৭) প্রতিভার পৃষ্ঠপোষকতা : আকবরের মতো সমুদ্রগুপ্তও বিদ্যোৎসাহী এবং প্রতিভার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর আমলে সংস্কৃত সাহিত্য চরম উৎকর্ষতা লাভ করে। এছাড়া তাঁর রাজত্বকালে গণিত, রসায়ন, জ্যোতিষ এবং চিকিৎসাশাস্ত্রেরও প্রসার ঘটে। এযুগের কবিদের মধ্যে হরিষেণ ও বসুবন্ধু ছিলেন উল্লেখযোগ্য এবং আর্যভট্ট ও জগভট্ট ছিলেন বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম।

(৮) সুশাসক : সমুদ্রগুপ্ত নিজের সাম্রাজ্যে অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী হলেও স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না। তাঁর জনকল্যাণমুখী শাসনব্যবস্থার জন্য প্রজারা তাঁকে দেবতার মতো শ্রদ্ধা করতো।




ভারতের ইতিহাসে সমুদ্রগুপ্তের মূল্যায়ন : প্রাচীন ভারতের যে সমস্ত রাজা নিজেদের অনন্য সাধারণ প্রতিভা ও কীর্তির জন্য ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন, সমুদ্রগুপ্ত ছিলেন তাঁদের অন্যতম। শাসক হিসেবেও সমুদ্রগুপ্ত জনকল্যাণমুখী শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। প্রসঙ্গত ডক্টর হেমচন্দ্র রায়চৌধুরীর মতে, ‘অশোক ধর্ম প্রচার করে যেমন অমরত্ব লাভ করেছেন, তেমনি সুদক্ষ শাসন প্রবর্তন করার জন্য সমুদ্রগুপ্ত অমরত্ব দাবি করতে পারেন’। বস্তুত তাঁর জনকল্যাণমুখী উন্নত শাসনব্যবস্থাই ভারতের সুবর্ণযুগের ভিত্তি স্থাপন করে। এই জন্যই গোখেল সমুদ্রগুপ্তকে ‘প্রাচীন ভারতের সুবর্ণযুগের অগ্রদূত’ বলে অভিহিত করেছেন।




Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন।