মোগল সাম্রাজ্যের প্রসারে ঔরঙ্গজেবের ভূমিকা | Aurangzeb’s Role in Expansion of Mughal Empire




Hello Students,


Wellcome to edu.bengaliportal.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা,  edu.bengaliportal.com আজ আমরা নিয়ে এসেছি Aurangzeb’s Role in Expansion of Mughal Empire. প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষার যেমন  CTET | WBTET | WBCS । MPTET | ATET| UPTET | Rajasthan PTET | TNTET | Karnataka TET | RTET | HTET| PSTET। BANK EXAM। ইত্যাদি পরীক্ষার বিভিন্ন প্রস্তুতি পত্র আপনাদের বিনামূল্যে দিয়ে এসেছি। তাই Ajjkal.com আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে মোগল সাম্রাজ্যের প্রসারে ঔরঙ্গজেবের ভূমিকা | Aurangzeb’s Role in Expansion of Mughal Empire

Ajjkal



মোগল সাম্রাজ্যের প্রসারে ঔরঙ্গজেবের ভূমিকা | Aurangzeb’s Role in Expansion of Mughal Empire

ঔরঙ্গজেব

সিংহাসনে বসেই ঔরঙ্গজেব রাজ্যবিস্তারে মন দেন। তাঁর নির্দেশে বাংলার শাসনকর্তা মীরজুমলা উত্তর-পূর্ব সীমান্তের আসাম রাজ্য আক্রমণ করে কিছু অংশ মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। মীরজুমলার মৃত্যুর পর বাংলার শাসনকর্তা শায়েস্তা খাঁ চট্টগ্রাম আক্রমণ করেন। সেখানকার মগেরা প্রচণ্ড যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়। এইভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের সমস্ত গোলযোগের অবসান ঘটে এবং তা মোগল সাম্রাজ্যের অধীনে আসে।



দক্ষিণভারত : ঔরঙ্গজেব উত্তর ভারতের সমস্যাগুলির সাময়িক সমাধান করে দক্ষিণ ভারতে রাজ্যবিস্তারে উদ্যোগী হন। সে সময় দক্ষিণ ভারতে সাম্রাজ্যবিস্তার করা ছাড়াও তাঁর লক্ষ্য ছিল বিজাপুর ও গোলকুণ্ডা দখল এবং হিন্দু মারাঠা রাজ্যের ধ্বংসসাধন। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তিনি বিজাপুর (১৬৮৬ খ্রিঃ) ও গোলকুণ্ডা (১৬৮৭ খ্রিঃ) দখল করে নেন।

ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির ব্যর্থতার কারণ : ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির ব্যর্থতার একাধিক কারণ ছিল, যেমন :




প্রথমত, রাজধানী দিল্লি থেকে বহুদূরে অবস্থিত দাক্ষিণাত্যের বিজাপুর, গোলকুণ্ডা ও মারাঠা রাজ্যের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে গেলে সে সুপরিকল্পিত ও উন্নত রাজনীতির প্রয়োজন ছিল, তা ঔরঙ্গজেবের ছিল না। বারবার মোগল সেনাপতিদের বদল করা, তাঁদেরকে পুরোপুরি বিশ্বাস না করা, শিবাজী সম্পর্কে জয়সিংহের মত অভিজ্ঞ সেনাপতির পরামর্শ ও সতর্কবাণীকে উপেক্ষা করা রণক্লান্ত মোগল সেনাদের নিয়ে একগুঁয়েমির বশে দীর্ঘ দিন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া প্রভৃতি ছিল ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির দুর্বলতার উদাহরণ।

দ্বিতীয়ত, শিবাজীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ না করা, তাঁকে বন্দি করা এবং শিবাজীর পুত্র শুম্ভুজীর প্রাণদণ্ড দান ছিল ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির ব্যর্থতার একটি প্রধান কারণ। এর ফলে মারাঠারা মোগলদের দীর্ঘস্থায়ী শত্রুতে পরিণত হয়। উত্তর ভারতে যখন প্রবল রাজনৈতিক গোলযোগ ও বিদ্রোহের সূত্রপাত হচ্ছে তখন ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে শম্ভুজির ছোটো ভাই রাজারামের বিধবা স্ত্রী তারাবাই এর সন্ধিপ্রস্তাব মেনে নিয়ে তিনি রাজধানী দিল্লিতে ফিরে না গিয়ে তিনি মারাত্মক ভুল করেন।




তৃতীয়ত, ঐতিহাসিক স্মিথও এলফিনস্টোন -এর মতে, দাক্ষিণাত্যের বিজাপুর ও গোলকোন্ডা রাজ্য দুইটি জয় করা ছিল ঔরঙ্গজেবের একটি মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত, কারণ এই দুটি রাজ্যের কর্মচ্যুত হাজার হাজার ঘোড়সাওয়ার সেনারা মারাঠা সেনাবাহিনীতে যোগদিয়ে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে এই দুটি মুসলিম রাজ্য স্বাধীন থাকলে তারা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই মোগলদের সঙ্গে মিলিতভাবে মারাঠা রাজ্যকে ধ্বংস করতে পারতো। কিন্তু ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার ও ডঃ সতীশ চন্দ্র এই মতবাদের বিরোধিতা করে বলেছেন যে, বিজাপুর ও গোলকোন্ডার মতো দাক্ষিণাত্যের ক্ষয়িষ্ণু রাজ্য দুটির পক্ষে নবজাগ্রত মারাঠা শক্তিকে ধ্বংস করা কখনও সম্ভবপর ছিল না।

চতুর্থত, দাক্ষিণাত্যের মারাঠা, বিজাপুর ও গোলকোন্ডা রাজ্যজয়ের পর মোগল সাম্রাজ্য অতিবিশাল আকার ধারণ করে, যা তখনকার দিনের ধীর যানবাহনের যুগে একজন শাসক বা একটিমাত্র কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রকৃতপক্ষে ছিল প্রায় অসম্ভব কাজ। তাই ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য জয়ের পর থেকেই সবার অলক্ষ্যে মোগল সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা হয়।

পঞ্চমত, দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধ বিগ্রহের জন্য মোগল সাম্রাজ্যের কৃষি, গ্রামীণ শিল্প ও ব্যাবসাবাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কমে যায়। ফলে জায়গিরদার রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হন, এতে মোগল রাজকোষের অর্থে টান ধরে।

ষষ্ঠত, সুদীর্ঘ দাক্ষিণাত্যে অবিরামভাবে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত থেকে ঔরঙ্গজেবের আমলে মোগল রাজকোষ নিঃশেষ হয়ে যায় এবং কেন্দ্রীয় সরকার দেউলিয়া হয়ে পড়ে।

সপ্তমত, রাজধানী থেকে মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সুদীর্ঘকাল অনুপস্থিতির ফলে উত্তর ভারতে বিদ্রোহ ও রাজনৈতিক গোলোযোগ দেখা দেয়, কেন্দ্রীয় প্রশাসন শিথিল ও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় মোগল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী ও আমলার স্বাধীন হয়ে পড়ে এবং প্রাদেশিক শাসন কর্তারা রাজস্ব পাঠানো বন্ধ করে দেন।

সবশেষে বলা যায় যে, ঔরঙ্গজেবের ভ্রান্ত ও অবিবেচক দাক্ষিণাত্য নীতির পরিণতি ছিল ভয়াবহ। এর ফলে মোগল সাম্রাজ্যের মর্যাদা ও সামরিক শক্তি অনেকখানি খর্ব হয়। ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার ঔরঙ্গজেবের ভ্রান্ত ও ব্যর্থ দাক্ষিণাত্য নীতিকে নেপোলিয়নের অবিবেচক উপদেশীয় যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন — তাঁর মতে, একই ভাবে স্পেনের ক্ষত (Spanish ulcer) যেমন নেপোলিয়নের শক্তি বিধ্বস্ত করেছিল, তেমন দাক্ষিণাত্যের ক্ষত ঔরঙ্গজেবের বিপদ ডেকে এনেছিল (“The Decan ulcer ruined Aurangzeb”) দাক্ষিণাত্যেই ঔরঙ্গজেব শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। স্মিথ বলেছেন যে, দাক্ষিণাত্যেই সম্রাট ও মোগল সাম্রাজ্যকে কবর দেওয়া হয়’ (“The Decan was the grave of his Aurangzeb body as well as his empire”)।




Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন।